এবার পাহাড়েও খোঁজ মিলল বেনজীরের সম্পত্তির
- বান্দরবান প্রতিনিধি
- ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পত্তি নিয়ে যখন সারা দেশে আলোচনা তুঙ্গে, ঠিক সেই মুহূর্তেই বেরিয়ে এলো পাহাড়ে বেনজীরের অঢেল সম্পত্তির খোঁজ। পার্বত্য জেলা বান্দরবানে রয়েছে বেনজীরের প্রায় ১০০ একর জমি। ওই জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন মৎস্য ও গরুর খামার। রয়েছে ফলের বাগান আর আলিশান বাংলো। পাহাড়ে বেনজীরের এই সম্পত্তির তথ্য বেরিয়ে আসার পর চলছে ব্যাপক আলোচনা। ক্ষমতায় থাকাকালীন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পত্তি। দুদকের অনুসন্ধানে একের পর এক বেরিয়ে আসে তার অবৈধ সম্পত্তির খোঁজ। শেষমেশ আদালত বেনজীরের অবৈধ সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিলে সারা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন সাবেক এই আইজিপি।
শুধু রাজধানীতেই নয় বেনজীর পাহাড়েও গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পত্তি। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সুয়ালক ও লামা উপজেলার ডলুছড়ি মৌজার টংগ্যঝিড়ি এলাকায় রয়েছে প্রায় ১০০ একর জমি। সুয়ালক এলাকায় চা বোর্ড অফিস সংলগ্ন এলাকায় বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর আহমেদের নামে পঞ্চাশ একরেরও বেশি জায়গা রয়েছে। ২৫ একর জায়গা লিজ নেয়ার পর ক্ষমতায় এসে ওই এলাকার আশপাশের পুরো জায়গাই দখলে নিয়ে নেন তিনি। ওই জায়গায় গড়ে তুলেছেন একটি মৎস্য ও গরুর খামার। সেখানে রয়েছে বিশাল ফলের বাগান ও একটি দোতলা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আলিশান বাংলো। বাগানবাড়িতে যাওয়ার জন্য একটি ব্রিকসলিং রাস্তাও করা হয়েছে। র্যাবের ডিজি থাকাকালীন তিনি এই সম্পত্তিগুলো গড়ে তোলেন ওই এলাকায়। ওই এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মং ওয়াইচিং মারমা বেনজীরের জায়গাগুলো দেখাশোনা করছেন। ২০১৬ সালে করা জায়গার কাগজপত্রে বেনজীর ও তার পরিবারের সাথে আমমোক্তার নামায়ও মং-এর নাম দেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দোহাজারীর লেদু সদাগরের নামে থাকা ২৫ একর লিজের জমিও দখল করে নেন বেনজীর। এ ছাড়া চন্দনাইশের ব্যবসায়ী ইলিয়াস চৌধুরীর ২৫ একর লিজের জায়গাও দখল করা হয়। ইলিয়াস চৌধুরী জানিয়েছেন, সেখানে তার নিজের কেনা ৪৫ গণ্ডা জায়গা দখল করে নেন বেনজীর। পরে পাশে থাকা লিজের জায়গাও পুরাটা দখল করে নেয়া হয়। লেদু সদাগরের ছেলে মো: লোকমান জানিয়েছেন, তার বাবার নামে রাবার হর্টিকালচার প্লটের লিজের ২৫ একর জায়গা বেনজীর দখল করে নেয়ার পর সেগুলোর আর খোঁজখবর নেয়া হয়নি। বর্তমানে জায়গা-জমিগুলোর দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মংওয়াইচিং মারমা অবশ্য জানান, তার ক্রয়কৃত জায়গার পাশে বেনজীরের জায়গা থাকায় তৎকালীন পুলিশ সুপারের অনুরোধে ওই জায়গাগুলো তিনি এ যাবৎ দেখাশুনা করে যাচ্ছেন। তবে সেখানে বাগানবাড়ি, মৎস্য ও গরুর খামার তার নিজের বলে মং দাবি করেন।
অন্য দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লামা উপজেলার ডলুছড়ি মৌজায় রয়েছে আরো ৫৫ একর জায়গা। ওই এলাকার স্থানীয়দের জায়গা দখল করে নেয়ায় অভিযোগে উঠেছে বেনজীরের বিরুদ্ধে। এসব জায়গা নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা দিয়েছেন নানা তথ্য। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বেনজীরের বিরুদ্ধে মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বেনজীরের অবৈধ সম্পত্তি নিয়ে সারা দেশে যখন আলোচনা তুঙ্গে ঠিক সে সময়ে পাহাড়ে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান পাওয়ার পর এলাকায় চলছে ব্যাপক আলোচনা। তবে এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা কেউ মুখ খোলেননি। বান্দরবানের দায়িত্বে থাকা কক্সবাজারের দুর্নীতি দমন বিভাগের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ জানিয়েছেন, সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিষয়গুলো মূলত ঢাকা কেন্দ্রীয় অফিস দেখভাল করছে। ঢাকা থেকে নির্দেশনা পাওয়া গেলে বেনজীরের সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত করা হবে বলে তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা