গ্রেফতার সেনাকর্মকর্তা পাঁচ দিনের রিমান্ডে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ জুন ২০২৪, ০১:০৩
রাজধানীর হাজারীবাগে ব্যবসায়ী তানিয়া আক্তার (৩৫) হত্যা মামলায় সেনাকর্মকর্তা লে. কর্নেল কুদ্দুসুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন গতকাল কুদ্দুসুরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক মাহফুজুল ইসলাম জানান, হাজারীবাগের ব্যবসায়ী তানিয়া আক্তার খুনের মামলায় কুদ্দুসুর রহমানকে গ্রেফতার করে গতকাল ঢাকার আদালতে হাজির করে হাজারীবাগ থানা পুলিশ। পরে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারির শুরুতে তানিয়া হাজারীবাগের মিতালী রোডের একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন। ১৯ জানুয়ারি নিজ কক্ষে তিনি খুন হন। এরপর ২১ জানুয়ারি তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয় ফ্ল্যাটের মালিককে। পরে তদন্তে উঠে আসে, এ ঘটনায় মো: কুদ্দুসুর রহমান নামে সেনাবাহিনীর ওই কর্মকর্তা জড়িত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুদ্দুসুর রহমানকে গ্রেফতারে সহযোগিতা চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের পক্ষ থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, তানিয়া হত্যার সাথে মো: কুদ্দুসুর রহমান জড়িত। মামলার তদন্তকালে সাক্ষ্য-প্রমাণ, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, মুঠোফোনের কলতালিকা, আর্থিক লেনদেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া তথ্য প্রমাণ ও তানিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যালোচনা এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
নিহত তানিয়ার ভাই ও মামলার বাদি মো: তন্ময় হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বোন খুন হওয়ার কিছু দিন পর তারা জানতে পারেন, এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তা জড়িত। হয়তো আমার বোনের কাছে ওই কর্মকর্তার এমন কোনো তথ্য ছিল, যা প্রকাশ্যে এলে তিনি বিপাকে পড়বেন। এ কারণেই তিনি আমার বোনকে হত্যা করে ফোনটি নিয়ে যান।
তানিয়ার ভাড়া বাসার আশপাশের বিভিন্ন ক্লোজড সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে। এসব ফুটেজে দেখা যায়, ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটে তানিয়া বাসার গলিতে ঢোকেন। দুই হাতে কাপড়ের দু’টি থলে এবং কাঁধে ঝোলানো ছিল ভ্যানিটি ব্যাগ। পেছনে কিছুটা দূরত্ব রেখে হাঁটছিলেন কুদ্দুসুর রহমান। তার পরনে ছিল জ্যাকেট, কাঁধে ব্যাগ (ব্যাকপ্যাক) ও মুখে মাস্ক। এর কিছুক্ষণ পরের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ওই বাসা থেকে হুডি পরে বের হচ্ছেন কুদ্দুসুর রহমান, পিঠে ব্যাগ। তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করছেন।
এর আগে অন্য ফুটেজগুলোতে দেখা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে কুদ্দুসুর ও তানিয়া ধানমন্ডির বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। তখন কুদ্দুসুর মাস্ক পরে ছিলেন না। ধানমন্ডি থেকে দু’জন রিকশা নিয়ে হাজারীবাগে ঢোকেন। বাসার কাছাকাছি দূরত্বে এসে তারা রিকশা থেকে নেমে যান। এরপর তানিয়ার পেছন পেছন দূরত্ব বজায় রেখে কুদ্দুসুর হাঁটতে থাকেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তানিয়ার স্বামী কুমিল্লায় থাকেন। দু’জনের বোঝাপড়ায় ঘাটতি থাকায় তানিয়া বেশির ভাগ সময় ঢাকায় নিজ পরিবারের সাথে থাকতেন। এর মধ্যে তানিয়ার সাথে কুদ্দুসুর রহমানের সখ্য গড়ে ওঠে। তারা নিয়মিত মোবাইলফোনে যোগাযোগ করতেন। একটা পর্যায়ে তানিয়া চেয়েছিলেন তাদের বিয়ে হোক। তাদের এই সম্পর্কের বিষয়টা তানিয়া তার দুয়েকজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকেও জানিয়েছেন। এমন কিছু সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে তানিয়া হত্যার রহস্য উদঘাটনের সূত্র পায় পুলিশ। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে তানিয়াকে হত্যার পর তার মুঠোফোন, জুতা, ভ্যানিটি ব্যাগ, বাসার চাবিসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত কুদ্দুসুর রহমান ব্যাগে ভরে নিয়ে যান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা