দেশে ২০২৬ সালের পর বিদেশী প্যাটেন্টেড ওষুধ তৈরি হবে না
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩১ মে ২০২৪, ০০:০৫
বাংলাদেশের ওষুধ কারখানাগুলো বর্তমানে বিদেশের সর্বশেষ আবিষ্কৃত ওষুধ চাইলেই তৈরি করতে পারে; কিন্তু আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বরের পর সে সুবিধা আর পাচ্ছে না। কারণ এ সময়ের পর মেধাস্বত্ব আইন কার্যকর হবে। প্যাটেন্টেড ওষুধ তৈরি করতে চাইলে মূল কোম্পানিকে রয়্যালটি দিতে হবে। প্রয়োজনের তাগিদে জীবনরক্ষাকারী সর্বশেষ আবিষ্কৃত ওষুধ এখানে তৈরি করলে ভোক্তাকে অনেক বেশি দামে তা কিনতে হবে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির সাংবাদিকদের এই তথ্য দিয়েছেন। গতকাল তেজগাঁওয়ের ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিকেলসের অফিসে আয়োজিত এ-সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একাই বক্তব্য রাখেন। তিনি ‘উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের পর চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশের ওষুধ খাত’ শীর্ষক বক্তব্য রাখছিলেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প আমাদের প্রয়োজনের ৯৮ শতাংশ উৎপাদন করে। বাকি ওষুধ বিদেশ থেকে আসে। স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা থাকায় এখনো আমরা বিদেশের প্যাটেন্ট করা ওষুধগুলো মূল কোম্পানির অনুমতি ছাড়াই তৈরি করতে পারি। ফলে আমরা পৃথিবীতে সবচেয়ে কম দামে ওষুধ সরবরাহ করতে পারছি; কিন্তু ২০২৬ সালের নভেম্বরের পর মেধাস্বত্ব আইন কার্যকর হলে এই সুবিধায় আমরা আর তৈরি করতে পারব না। তবে এই অসুবিধাটা কেবল সর্বশেষ আবিষ্কৃত ওষুধের বেলায় ঘটবে। কিন্তু ২০২৬ সালের নভেম্বরের আগ পর্যন্ত সর্বশেষ আবিষ্কৃত সব গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন করে রাখার ব্যবস্থা করতে পারলে তা দিয়েই পরবর্তী সাত থেকে ১০ বছর দেশের চিকিৎসা চালিয়ে নিতে পারবে। এই ওষুধগুলো পরবর্তী সময়ে দেশে তৈরি করলেও মূল কোম্পানিকে রয়্যালটি দিতে হবে না; কিন্তু এর আগে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে প্রয়োজনীয় সব প্যাটেন্টেড ওষুধ নিবন্ধন করে রাখার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
আব্দুল মুক্তাদির বলেন, বাংলাদেশে গত ৫ বছরে ওষুধ শিল্পের সক্ষমতা বেড়েছে অনেক। ওষুধের মূল উপাদান ‘এপিআই’ উৎপাদনে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ২০২৬ সালের মধ্যেই আমরা ওষুধ তৈরির মূল উপাদান তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে পারব। এখন বেশির ভাগ এপিআই আমদানি করতে হয়; কিন্তু ২০২৬ সালের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এপিআই দেশেই তৈরি হবে। ফলে বিশাল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ওষুধ শিল্পের খরচ ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত ডলার কিনতে হয় সাড়ে ১১৭ টাকায়; কিন্তু বাইরে আরো বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি। এর বিপরীতে আমরা ওষুধের দাম বাড়িয়েছি মাত্র ৫ শতাংশ। এর বেশি দাম বাড়ালে ওষুধ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। ব্যাংক ঋণের সুদের হারও ৭ থেকে ৯ শতাংশ থেকে এখন ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে এখন বেশি সুদ দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাধারণত ফাইনাল প্রোডাক্টের ডিউটি হয়; কিন্তু কমপোন্যান্টের ডিউটি কম থাকে। কিন্তু ওষুধ শিল্পে কমপোন্যান্টের ডিউটি বেশি ধরা হচ্ছে। হার্ট অ্যাটাক এড়ানোর জন্য নাইট্রোগ্লিসারিন, ন্যাসাল স্প্রে একধরনের প্লাস্টিক প্রোডাক্ট। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে এই দু’টি পণ্যের ডিউটি ছিল ১৫ শতাংশ; কিন্তু এখন এটা করা হয়েছে ১২৭ শতাংশ। এটা অনভিপ্রেত, আমরা এই প্রোডাক্টের ডিউটি আগের মতো করার দাবি করছি। ওষুধের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের ডিউটি একটা পর্যায়ে রাখার দাবি জানাচ্ছি। অন্য দিকে বিদেশে ওষুধ রফতানি করতে হলে সেই ওষুধটির সেখানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দিতে হয় এবং রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এটা করতে দুই থেকে কিন লাখ ডলার প্রয়োজন হয়; কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশ সরকারকে ৪০ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এ ধরনের উচ্চ ভ্যাট আরোপ করলে ওষুধ রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে। উল্লেøখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের ওষুধ বাজার ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা