১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শাহীনকে ফেরাতে দুই দেশ থেকে তৎপরতা চালানো হবে

-

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের সফলভাবে তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকার ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, মূলত তিনটি বিষয় মাথা নিয়ে তিনি কলকাতা গিয়েছেন। তদন্তে তারা সবগুলোতে সফলতা পেয়েছেন। শুধু মাস্টারমাইন্ড শাহীন আমেরিকা ও তার সহযোগী নেপালে অবস্থান করায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে যেহেতু মামলা দুই দেশ থেকে চলবে তাই এদের গ্রেফতারে দুই দেশ থেকেই তৎপরতা চালানো হবে।
এমপি আনারের হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে গত ২৬ মে ভারতের কলকাতায় যায় বাংলাদেশ পুলিশের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। যার নেতৃত্ব দেন মহানগর ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। সাথে ছিলেন ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো: আব্দুল আহাদ ও এডিসি শাহীদুর রহমান। গত চার দিন নিরলসভাবে কাজ করে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে এসব কথা বলেন তিনি।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে কলকাতায় গিয়েছিলাম। আমরা যে মূল ঘাতককে গ্রেফতার করেছি তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো মিলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। যার প্রায় সবগুলোই মিলে গেছে। দ্বিতীয়ত, ভারতে গ্রেফতার হওয়া জিহাদের দেয়া তথ্য আমার কাছে গ্রেফতার ঘাতকদের তথ্য যাচাই করেছি সে গুলোতেও শতভাগ মিল পেয়েছি। এ ছাড়া স্বচক্ষে ডিজিটাল অ্যাভিডেন্সগুলো মিলিয়ে দেখিছি। আনারের ঘনিষ্ঠ গোপাল বাবুর সাথে কথা বলেছি। আমরা সিআইডিকে বলেছিলাম সেপটিক ট্যাংক ও কমোড ভেঙে দেখার জন্য। আমাদের অনুরোধে সিআইডি সেপটিক ট্যাংক থেকে ভিকটিমের দেহের অনেক খণ্ডাংশ পেয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে কলকাতায় গিয়েছিলাম তার শতভাগ সফলতা নিয়ে আমরা বাংলাদেশে ফিরছি।
হারুন অর রশীদ বলেন, সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশের যে খণ্ডাংশগুলো পাওয়া গেছে, আমরা ধারণা করছি এগুলো এমপি আনারের। তবে, ডিএনএ টেস্ট ও ফরেনসিক রিপোর্ট ছাড়া এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। ডিএনএ টেস্টের জন্য ভিকটিম আনারের মেয়ে ভারতে যাবেন। ডরিনের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। সে ভিসার জন্য আবেদন করেছে।
এমপি আনারের সাথে থাকা ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিস উদ্ধার হয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, ‘কলকাতার পুলিশ অত্যন্ত পরিশ্রম করছে। আশা করি উদ্ধার হতে পারে।’ এ হত্যাকাণ্ডে শুধু আক্তারুজ্জামান শাহীন নন, বড় বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নাম শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মিডিয়াতে অনেক তথ্য দিচ্ছে। আমরাও অনেক তথ্য পাচ্ছি। যেহেতু মামলার তদন্ত চলছে, এ জন্য স্পেসিফিক বলা যাচ্ছে না।’
গোয়েন্দা প্রধান বলেন, বাংলাদেশের পেনাল কোডের ৩৬২ এবং ৩৬৪ ধারা অনুযায়ী, লাশ বা লাশের টুকরো, খুনির ঘড়ি বা অন্য কোনো অংশবিশেষ উদ্ধার না হলে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হয়। আর সে কারণে আমরা এসেছি। এ ছাড়া এমপি আনারের লাশ বা লাশের টুকরো যাতে পাওয়া যায় সে কারণেই আমরা এই তদন্ত চালিয়েছি। কারণ একটা মামলার নিষ্পত্তি করতে গেলে সুরতহাল, মেডিক্যাল রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্ট, আলামতের দরকার হয়। আমাদের কাজ ছিল কলকাতা পুলিশের সাথে তথ্য শেয়ার করা এবং তাদের কাজে সহযোগিতা করা। আমরা মনে করি, আমরা সহযোগিতা করতে পেরেছি।
বাংলাদেশের দুষ্কৃতকারীরা পশ্চিমবঙ্গকে কি একটি সেইফজোন মনে করছে- এমন প্রশ্নে ডিবি প্রধান বলেন, এবার কলকাতা আসার পর এখানকার পুলিশের সাথে এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে আমাদের যে হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, এতে করে বলতে পারি বাংলাদেশ থেকে কেউ অপরাধ করে এসে কলকাতাকে স্বর্গীয় ভবন মনে করবে তা অসম্ভব। আমরা আগামীতে তাদের আরো দ্রুত সময়ে কলকাতা থেকে ধরে নিয়ে যেতে পারব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শাহীন আমেরিকায় রয়েছেন। তিনি আমেরিকার নাগরিক। তার সহযোগী সিয়াম রয়েছে কাঠমান্ডুতে। আমরা ইতোমধ্যে নেপালকে জানিয়েছি। শাহীনের বিষয়ে আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বলেছি, যেহেতু এখানে একটি মামলা হয়েছে, শাহীন এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত। সুতরাং তারাও যেন শাহীনকে ফিরিয়ে আনতে আমেরিকার সাথে কথা বলে। এ ছাড়া শাহীনের বিষয়ে ইন্টারপোলে আবেদন করা হবে। বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে এই বিষয়ে মৌখিকভাবে কথা বলেছি। এই বিষয়ে আমরা সরাসরিও কথা বলব।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল