সাবেক সেনা ও পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে : অর্থমন্ত্রী
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৭ মে ২০২৪, ০১:১৯
সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, সাবেক পুলিশপ্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তার কি ক্ষমতা কম ছিল? সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজির আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত যে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তাতে সরকারের সমর্থন রয়েছে। এছাড়া সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে কোনো নিয়ম-দুর্নীতির তথ্য থাকলে, তার বিচার সেনাবাহিনী করবে।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে ঢাকা সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পরিচালক ড. কৃষ্ণমূর্তি ভি সুব্রামানিয়ানের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়- এই তিনটি বিষয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
উল্লেখ্য, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলে থাকা সব সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসাথে তার ২৭টি ব্যাংক হিসাবসহ আর্থিক লেনদেনকারী মোট ৩৩টি হিসাব জব্দ থাকবে। বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদ জব্দের আদেশ চেয়ে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন আদালত। অন্যদিকে, ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর আমেরিকা ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সে এবং তার পরিবারের কেউ আমেরিকায় যেতে পারবেন না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে, অনেক বাধা আছে... সেগুলো অতিক্রম করতে হবে। আগামী বাজেটে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকগুলোর কাজ হচ্ছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি আগে ছিল, এখন আর নেই। আমরা সঠিক ট্র্যাকে আছি। আস্তে আস্তে অন্য বাধাগুলোও থাকবে না। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এই কথা বলার সাথে সাথে অর্থমন্ত্রী কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কে? সাংবাদিকের প্রশ্ন থামিয়ে তিনি বলেন, তার পরিচয় আমাকে দিতে হবে না, তাকে আমি চিনি, তিনি বিরোধী পক্ষের লোক।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতি দুর্যোগের মধ্যে পড়েছে, এটা কি আপনি স্বীকার করেন? -সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, আমি বুঝলাম না। বিরুদ্ধে বললেই কি সে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল? আসলে তারা তো বিরোধী পক্ষের লোক। কিছুই হয়নি, সব নষ্ট হয়ে গেছে... এগুলো কী?
তাহলে সরকারবিরোধী কথা বললেই কি কেউ বিরোধীপক্ষ হয়ে যাবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, তবে তার টোনটা দেখতে হবে। কেউ কিছু বললেই দেশের অর্থনীতি শেষ হয়ে যাবে?
আগামী বাজেটে সরকারের প্রাধান্যের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- অর্থনীতিকে অন ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা। একই সাথে নিত্যপণ্য যাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মানও যেন সীমার মধ্যে থাকে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণকে যে ইশতেহার দিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে। সার্বিকভাবে বর্তমান সরকার যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল- সেটির একটা প্রতিফলন এবং একইসাথে সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার একটি প্রতিফলন বা প্রতিচ্ছবি আগামী বাজেটে দেখা যাবে।
আগামী বাজেট ‘সঙ্কোচনমূলক’ হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সঙ্কোচনমূলক তো ইতোমধ্যে হয়েছে। ওটা পার হয়ে যাচ্ছি আমরা। সঙ্কোচন থেকে আমরা ফেরত আসব। কিভাবে এক্সপ্যানশন করা যায়, সে চেষ্টা করছি। এই বাজেট থেকেই সে চেষ্টা করব।
আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়বে কি না- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা বাড়ানো হবে, দেখতে পারবেন বলে আশা করছি। তবে এটাতো একটা প্রসেসের মধ্যে আছে। এখন বলা যাবে না।
আইএমএফ প্রতিনিধির সাথে বৈঠকের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী জুনেই আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়া যাবে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে ডলারের প্রবাহটা বাড়ানো যায়। এখানে অনেক নেগোসিয়েশন আছে। আশা করছি, এই সমস্যাটি আমরা সমাধান করতে পারব। আমরা কাজ করছি।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আইএমএফের নির্বাহী পরিচালক বলেছেন যে, সরকার সঠিক পথে আছে। সমস্যা সমাধানে সরকার যে কাজ করছে, এতে তাদের সমর্থন রয়েছে।
আইএমএফ প্রতিনিধির সাথে বৈঠকের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। আমরা সে অনুযায়ী ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমি ঋণখেলাপিদের ধরতে চাই।
ঋণখেলাপিরা অনেক শক্তিশালী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন কি না- সাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেখা যাক্, পারা যায় কি না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন তুলে অর্থমন্ত্রী বলেন, গভর্নর বলেছেন, পৃথিবীতে কোন্ দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকতে পারেন?
তাহলে কি সাংবাদিকরা আর বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে পারবেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা তো আমি বলতে পারব না।
অন্য দেশে যেকোনো তথ্য ওয়েবসাইটে দেয়া হয়, যা আমাদের এখানে দেয়া হয় না। তাহলে অন্য দেশের রেফারেন্স কেন দেয়া হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন কথার জবাব এড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গভর্নর তো আলাদা কিছু না, গভর্নর গোটা সরকারেরই একটা অংশ। এর আগে উনি অর্থসচিব ছিলেন। কিছু পত্রিকায় বলা হয়েছে, উনি দায়িত্বজ্ঞানহীন, ওনার কোনো আইডিয়া নাই! এমনি এমনিই অর্থসচিব হয়েছেন। এখন তো বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। উনি বলেছেন, পৃথিবীতে কোথাও এভাবে ঢুকতে দেয় নাকি? সব খুলে দেয়? ওখানে ওদের লোক আছে, মুখপাত্র আছে। এগুলো আছে তো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা