১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
শ্বেতপত্র চেয়ে টিআইবির বিবৃতি

উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতির দায়সারা ব্যাখ্যা সরকারের জন্য আত্মঘাতী হবে

-

ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ড এবং সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারের দায়সারাভাবে ব্যাখ্যা প্রদান যেমন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, তেমনি সরকারের জন্যও আত্মঘাতী হবে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, অবসরপ্রাপ্ত র‌্যাব ও পুলিশ প্রধানের ব্যাংক হিসাব, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ করার জন্য আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতার ঘোষণার যথার্থতা প্রমাণের বাধ্যবাধকতা অভূতপূর্ব গুরুত্ব লাভ করেছে।
গতকাল এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান এবং র‌্যাব ও পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং ভারতের কলকাতায় আমাদের একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল শুধু বিব্রতবোধ করে দায়সারাভাবে ব্যাখ্যা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে, তা যেমন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না; তেমনি সরকারের জন্যও আত্মঘাতী হবে। এ দেশের জনগণ ইতোমধ্যে এটুকু উপলব্ধি করার মতো সক্ষম যে, ব্যাপক আলোচিত তিনটি ঘটনাই কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, বরং উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের বহিঃপ্রকাশ। যা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। একইভাবে এটি সহজেই বোধগম্য যে এ ধরনের অপরাধের দায় শুধু প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অতএব, সরাসরি দায়ী ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে সহায়ক, যোগসাজশকারী, অংশীদারিত্বের ফলে লাভবান এবং বিশেষ করে সুরক্ষাকারী মহলকে জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব না হলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার আরো এক দফা ফাঁকা বুলি হিসেবেই রয়ে যাবে। এ ধরনের দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন ব্যাপকতর ও গভীরতর হবে। তাই যথাযথ প্রক্রিয়ায় অপরাধ প্রমাণসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতার পাশাপাশি উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির শে^তপত্র প্রকাশ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের মতো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর সাবেক প্রধানসহ একজন আইনপ্রণেতার এহেন দায়বদ্ধহীন কর্মকাণ্ড জনমনে সরকার, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শাসনকাঠামো নিয়ে সংশয় ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। যার বিশ্বাসযোগ্য নিরসন জরুরি। একই সাথে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আলোচিত কোনো কোনো বিষয়ে যে তৎপরতা দেখাচ্ছে, তা যেন লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত না হয়।
সংস্থাটি বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের ধারাবাহিক রাজনৈতিক ঘোষণা ও প্রত্যয়ের বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট প্রতিফলন পাওয়া যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ঘোষিত দলটির নির্বাচনী ইশতেহারে। এবারের ইশতেহারে জবাবদিহিমূলক সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে রয়েছে ছয় অনুচ্ছেদসংবলিত পুরো এক অধ্যায়ব্যাপী প্রতিশ্রুতিমালা, একই সাথে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রয়েছে এক ডজনেরও বেশি সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। যদিও কিভাবে এসব আড়ম্বরপূর্ণ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে, তার কোনো কৌশল বা পথরেখা নির্ধারিত নেই। এমন বাস্তবতায় এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল যদি তাদের নিজেদের প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার বিন্দুমাত্র প্রমাণ দিতে চান, তবে তিনটি ক্ষেত্রেই মৌলিক উপাদান যে ক্ষমতার অপব্যবহার, তার বিদ্যমান স্বরূপ উদঘাটনসহ সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠান ও খাতভিত্তিক উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির শে^তপত্র প্রকাশ করা অপরিহার্য। একই সাথে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও পথরেখা নির্ধারণের আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

 


আরো সংবাদ



premium cement