‘তিস্তায় জলবিদ্যুৎ হলে নদীগুলো বিরানভূমি হবে’
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ মে ২০২৪, ০১:২৮
তিস্তায় পশ্চিমবঙ্গের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রংপুরের নদীগুলো বিরানভূমি হবে মন্তব্য করে বক্তারা বলেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তার সাথে অনেক নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, তিস্তার অনেক শাখা নদীকে হত্যা করেছে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন : প্রেক্ষিত পদ্মা ও তিস্তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলা হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন নদী ও পরিবেশবিদ মাহবুব সিদ্দিকী, সাংবাদিক ও পানি বিশেষজ্ঞ শেখ রোকন, তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হাক্কানী প্রমুখ।
এতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, তিস্তা, ধরলা ও মহানন্দার উপনদীগুলোতে অনেক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সর্বনাশা উদ্যোগ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এটি বাস্তবায়িত হলে ধরলাসহ রংপুর বিভাগের আন্তঃসীমান্ত সব নদী বিরানভূমিতে পরিণত হবে।
তার অভিযোগ, ‘জলঢাকা উপজেলার শৈলমারীতে ঘাঘটের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে পাউবো; যার কারণে ঘাঘটের শাখা শ্যামাসুন্দরী, শালামারা ও আলাইয়ের আজ মরণদশা। এরকম তিস্তার সাথে অনেক নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পাউবো তিস্তার অনেক শাখা নদীকে হত্যা করেছে।’
তিনি বলেন, তিস্তা কেবল একটিমাত্র প্রবাহ নয়, শাখা-প্রশাখা ও উপনদী মিলেই তিস্তার প্রাণ-প্রকৃতি। তিস্তা নদীকে সুরক্ষা করতে হলে উপনদী ও শাখা নদীকে বাদ দিয়ে তা কখনোই সম্ভব নয়। তিস্তার দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশে এর দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার। আপাতদৃষ্টে আমাদের তিস্তা নদীকে একটিমাত্র নদী ভাবা হলেও এর সাথে জড়িয়ে আছে ২২টি শাখা ও উপনদী।’
তিস্তা ও তিস্তার শাখা-প্রশাখা ও উপনদীগুলো মাছের অভয়ারণ্য ছিল মন্তব্য করে রাশেদ খান মেনন বলেন, একসময় তিস্তার নৌপথই ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। এখন তিস্তা বারোমাসি নদী নয়। মৌসুমি নদী মাছশূন্য নদী। এপ্রিল-মে মাসে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রজননের জন্য উজানে ছুটে যায়। বর্তমানে এপ্রিল-মে মাসে বাংলাদেশ অংশের তিস্তায় পানিশূন্য থাকায় মাছের প্রজনন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়েছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। নদীতে পানি না থাকলে স্বাভাবিকভাবে মাছের প্রজনন প্রক্রিয়া একেবারেই হারিয়ে যাবে। শুধু মাছ নয়, নদী জলশূন্য হওয়ায় তিস্তাসহ তিস্তার শাখা-উপনদী সব বেদখল হয়ে যাচ্ছে। তিস্তা দখলে মহোৎসবে মেতে উঠেছে দেশীয় নানা কোম্পানি।
সভায় অন্যান্য বক্তা বলেন, ভারতের গজালডোবা নামক স্থানে নির্মিত ব্যারাজ তিস্তার প্রবাহকে বন্দী করে রেখেছে। গজলডোবার উজানে সিকিমে নির্মিত হয়েছে ৩১টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। খবরে প্রকাশ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরো তিনটি খাল খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। একই সাথে তিস্তা, ধরলা ও মহানন্দার উপনদীগুলোতে অনেক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সর্বনাশা উদ্যোগ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এটি বাস্তবায়িত হলে ধরলাসহ রংপুর বিভাগের আন্তঃসীমান্ত সব নদী বিরানভূমিতে পরিণত হবে। শুধু খরাকালে নয়, সম্পূরক সেচের কাজে ও বর্ষাকালেও তিস্তায় পানি থাকবে না।’
সভায় বলা হয়, বর্ষার প্রবহমান পানির মাত্র ৮ শতাংশই আমরা ব্যবহার করতে পারি। বাকি পানি সাগরে পতিত হয়। তিস্তা মহাপরিকল্পনার মৌলিক বিষয়টি হবে বর্ষা মৌসুমের পানি ধরে রেখে পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুসারে তা ব্যবহার করা। তিস্তা ব্যারাজের উজানে ১২ কিলোমিটার অংশে বড় জলাধার ও আরো বড় একটি ব্যারাজ নির্মাণ, তিস্তার আশপাশে দিয়ে প্রবাহিত নদনদী, পুকুর-বিলসহ সব জলাধারগুলোকে সংযুক্ত করে সেসবে পানি ধরে রাখতে নানা কর্মকাণ্ড ও অবকাঠামো, শাখা-উপনদীগুলোকে উন্মুক্তকরণ। শাখা-প্রশাখা ও উপনদী খনন করা অপরিহার্য।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা