সৌন্দর্যের আরেক নাম সোনাইছড়া ট্রেইল
- এম মাঈন উদ্দিন মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
- ২৫ মে ২০২৪, ০২:০৫
পাহাড়, গুহা, ঝরনার মেলবন্ধনে অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক নাম সোনাইছড়া ট্রেইল। মিরসরাই উপজেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটের মতো খুব বেশি পরিচিত না হলেও এখানে ছুটে যাচ্ছে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন এই ট্রেইলে। তবে ছুটির দিনে অন্যদিনের তুলনায় সমাগম বেশি হয়।
জানা গেছে, বারৈয়াঢালা অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত মিরসরাই উপজেলার হাদিফকিরহাট বাজার হয়ে সোনাইছড়া ট্রেইল অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। পিচ্ছিল ঝিরিপথ, খাড়া পাহাড় ও বাদুইজ্জাখুম পার হয়ে যাওয়ার সময় যে রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়, সেই অভিজ্ঞতা সারা জীবনের এক অনন্য সঞ্চয়। এই ট্রেইলে নানা রকমের গাছের পাতা, পশুপাখি, সঙ্গে স্বচ্ছ পানি, আর এই স্বচ্ছ পানিতে অনেকে ঘা ভেজাতে ভুল করে না। প্রকৃতির রূপের এতটা সৌন্দর্য রয়েছে, তা আগে যারা এই ট্রেইল ভ্রমণ করেনি, কেউ জানবে না।
ট্রেইলটা সোনাইছড়ি নামে পরিচিত। তবে শুরুতেই দেখবে বাদুইজ্জাখুম; যা এই ট্রেইলের অন্যতম আকর্ষণ। বেশ কিছুটা সময় চড়াই-উতরাই। সেখানে হাজার হাজার বাদুরের উড়াউড়ি। ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝখানটা ফাঁকা করে দুইপাশে উঠে গেছে খাঁড়া পাহাড়। গুহার ভেতর হতে বহমান পানীর ধারা।
সরু গুহার ভেতর সাঁতরে গিয়ে দেখবেন এক ফালি আলোর ঝরনাধারা। উচ্ছ্বাস আর অপ্রত্যাশিত ঝরনার সৌন্দর্য দেখে যারপরনাই আনন্দে বিগলতি হবেন।
এরপর কিছুটা পথ ঘুরে এসে আবারো হাইকিং-ট্র্যাকিং। একের পর এক বেশ বড়সড় পাথুরে বোল্ডার অতিক্রম করতে হবে। কিছুক্ষণ আগে যে গুহার ভেতরে ছিলেন এখন সেই বাদুইজ্জাখুমের ঠিক উপরেই। দৃষ্টির খুব কাছাকাছি হাজার হাজার বাদুরের উড়াউড়ি।
চলতি পথে অনেক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যে চোখ আটকায়। কখনো কখনো সেই সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য থমকে দাঁড়াবেন। চলতে চলতে ছোটবড় কিছু ক্যাসকেড, ঝিরি ও বুনোপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবেন সোনাইছড়া ঝরনায়।
সোনাইছড়া ঝরনার উচ্চতা খুব বেশি নয়। বড় জোর ৪০-৫০ ফুট হবে। তবে এর চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। বেশির ভাগ পর্যটক যে পথে যায় সে পথে আর ফিরে না। তাতে প্রকৃতির নতুন নতুন সৌন্দর্য দেখার সুযোগ মিলে। বিকল্প আরেকটি পথ দিয়ে বেশির ভাগ পর্যটক ফিরে আসেন।
পাহাড়-পর্বত, ঝরনা, বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কী নেই এখানে! গহিন পাহাড়ে কী পরিমাণ রহস্য আর সৌন্দর্য যে লুকিয়ে আছে, তা সেখানে না গেলে অজানাই রয়ে যাবে। এখানে যত পাহাড়ি ট্রেইল আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম, রহস্যময় এবং সুন্দর ট্রেইল হলো সোনাইছড়া।
স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে এখানে ঝরনা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের কারণে এখন লোকজন এখানে ছুটে আসছে। সোনাইছড়া এমন একটা রোমাঞ্চকর ট্রেইল, যেখানে এক ট্রেইলে গুহা, ঝরনা ও পাহাড় ট্র্যাকিংয়ের আনন্দ উপভোগ করা যায়। ঘুরতে আসা প্রান্তিক ভৌমিক জানান, আমার বাড়ি ঝরনা এলাকা থেকে দুই কিলোমিটার এরিয়ার মধ্যে। কোনো দিন আসা হয়নি। অথচ বাড়ির পাশে এমন চমৎকার অপরূপ সৌন্দর্যের জায়গা এতদিন মিস করেছি। তিনি আরো জানান, ওইদিন বিভিন্ন ট্র্যাভেল গ্রুপের প্রায় ১৭০ জন্য সদস্য এই ট্রেইলে বেড়াতে আসেন।
কিভাবে যাবেন?
দেশের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো গাড়িতে উঠে নামতে হবে মিরসরাই উপজেলার হাদিফকিরহাট বাজারে। সেখানে নামার পর সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাযোগে রেললাইন পর্যন্ত অনায়াসে যাওয়া যাবে। রিজার্ভ গাড়ি নিয়েও যেতে পারবেন। রেললাইনের পর থেকে হেঁটে যেতে হবে। রেললাইন হতে সবমিলিয়ে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই ঘুরে আসা সম্ভব।
থাকা ও খাওয়া
এখানে থাকার জন্য খুব বেশি আবাসিক হোটেল নেই। পার্শ্ববর্তী বড়তাকিয়া বাজারে দু’টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডে কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। খাওয়ার জন্য রেললাইনের পাশে জয়নালের হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া হাদিফকিরহাট থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কমলদহ বাজারে রয়েছে বিখ্যাত ড্রাইভার হোটেল। সেখানে অনায়াসে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা