রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন তার সফরসঙ্গী
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৫ মে ২০২৪, ০২:০৫
ইরানের প্রেসিডেন্টের দফতরপ্রধান অবশেষে আয়াতুল্লাহ রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্টের দফতরপ্রধান গোলাম হোসাইন ইসমাইলি পূর্ব আজারবাইজানে সাইয়েদ ইবরাহিম রাইসির শেষ সফরে তার সাথে গিয়েছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট রাইসির ওই প্রাদেশিক সফর এবং তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। পার্সটুডে।
গোলাম হোসাইন ইসমাইলি বলেছেন, আমরা ৩০ মে রোববার সকাল ৬টায় তেহরান থেকে তাব্রিজের উদ্দেশে রওনা হই। সকাল ৭টা ১০ মিনিটে আমরা তাব্রিজে অবতরণ করি। পরিষ্কার আবহাওয়ার মধ্যেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের প্রধান বলেন, আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের সাথে আমাদের যৌথ কর্মসূচি ছিল বাঁধ উদ্বোধন করা। সেই কাজ সেরে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সাথে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে একটি কূটনৈতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে জোহরের নামাজ আদায় করি আমরা। এ সময় গ্রামের বেশ কিছু মানুষ ওইখানেই তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে আসে। এলাকার লোকজনের সাথে প্রেসিডেন্ট রাইসির সর্বশেষ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানটি ঠিকঠাকমতোই শেষ হয়। এরপর আমরা সম্পূর্ণ পরিষ্কার আবহাওয়ার মধ্যেই হেলিকপ্টারে চড়ে তাব্রিজের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাই। আকাশ একেবারেই পরিষ্কার ছিল।
আধা ঘণ্টার মতো আমরা এভাবেই যাচ্ছিলাম। এরপর এক খণ্ড মেঘের মতো কিছু একটা দেখা গেল।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় প্রধান বলেন, হেলিকপ্টারগুলো মেঘের স্তরের উচ্চতায় কিংবা মেঘের স্তর থেকে কিছুটা কম উচ্চতায় উড়ছিল। ক্যাপ্টেন মুস্তাফাভি ছিলেন রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির পাইলট এবং আমাদের সাথে যাওয়া হেলিকপ্টার গ্রুপের কমান্ডার। তিনি ওই মেঘ দেখে ঘোষণা করলেন, আরো উচ্চতায় উড়ে গিয়ে মেঘের ওপরে যেতে এবং সেই উচ্চতায় হেলিকপ্টার চালিয়ে যেতে।
ইসমাইলি বলেন, নির্দেশ অনুযায়ী মেঘের ওপরে চলে গেল হেলিকপ্টারগুলো। আমরা ছিলাম ৩ নম্বর হেলিকপ্টারে। মাঝখানের হেলিকপ্টারে ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসি আর সামনে ছিল অপর হেলিকপ্টারটি।
তিনি জানান, আমরা মেঘের ওপরে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পর ক্যাপ্টেন বুঝতে পারল যে মূল হেলিকপ্টারটি আমাদের সাথে নেই এবং ওই হেলিকপ্টারটিকে দেখা যাচ্ছে না।
ইসমাইলি আরো বলেন, হেলিকপ্টারটি না আসায় আমাদের পাইলট পেছনে ফিরে গেল। আমি কো-পাইলটের কাছে জানতে চাইলে তিনি বললেন সম্ভবত ওই হেলিকপ্টারটি জরুরি অবতরণ করেছে। আমরা যতই যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কোনোভাবেই যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তাই কোনো সাড়া মেলেনি। তিনি বলেন, আমাদের পাইলট ওই এলাকায় কয়েক রাউন্ড করে উড়ে উড়ে দেখার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে মেঘের ওপরেও চলে যায়। কিন্তু সেখান থেকে নিচে কিছুই দেখতে পায়নি এবং মেঘের নিচে আসাটাও সম্ভব হচ্ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে আমরা পার্শ্ববর্তী সুনগুন তামা খনি এলাকায় অবতরণ করলাম এবং ঘটনার খোঁজখবর নিতে শুরু করলাম।
ইসমাইলি বলেন, প্রেসিডেন্টের সাথে যারা ছিলেন তাদের কাছে মোবাইলফোন ছিল। তাদেরকে কল করেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয়প্রধান আরো বলেন, ফ্লাইট ক্রু আমাদের বলেছিল যে পাইলট মুস্তাফাভির সেলফোনে একবার যোগাযোগ হয়েছিল। জবাব দিয়েছিলেন শহীদ আয়াতুল্লাহ আলে হাশেম। তিনি বলেছিলেন, আমি ভালো নেই এবং আমি উপত্যকায় পড়ে গেছি, এছাড়া বিশেষ কোনো কিছু বলেননি তিনি। আমি ফোন করে তার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন বুঝতে পারছি না কী হয়েছে! বলতেও পারছি না আমি কোথায় আছি। তিনি বললেন আমি গাছগাছালির মধ্যে আছি। জিজ্ঞেস করলাম কাউকে দেখতে পাচ্ছেন? তিনি বললেন, না, কাউকে দেখতে পাচ্ছি না, আমি একা, আমার চারপাশে কেউ নেই। আমি বললাম ওই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যটা কী রকম দেখছেন? তিনি আমাদের গাছগাছালি ও বনের অস্তিত্বের কথা জানালেন। তার কথা থেকে আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল যে হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। আমরা দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা