১৬ জুন ২০২৪
`

এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে বিব্রত আওয়ামী লীগ

-


ঝিনাইদহ-৪ আসনের দলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার সপ্তাহখানেক পর তার নির্মম ও রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডে বিব্রতবোধ করছে আওয়ামী লীগ। টানা তিনবারের একজন এমপি ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হত্যার শিকার হওয়ায় বেশ অস্বস্তিতেও পড়েছে দলটির হাইকমান্ড।
প্রথমত : দেশের একজন আইন প্রণেতা যদি বন্ধুরাষ্ট্রে গিয়ে এ রকম নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি জোরেশোরে সামনে চলে আসে। ইতোমধ্যে মাঠের প্রধানবিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্ররাও নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের ওপর আঙুল তুলেছে। যদিও দল ও সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গেল বুধবার বলেছেন, বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়েও কথিত এমপিদের নিরাপত্তা নাই। এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব বলেছেন, বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে নিরাপত্তা নাই। আপনাদের যদি শত্রু রাষ্ট্র হয়, তাহলে সেখানে সালাহ উদ্দিন আহমেদ এতদিন নিরাপদে কেমন করে আছেন! তাকে তো কেউ হত্যা করেননি। তার জীবনের তো নিরাপত্তা বিঘিœত হয়নি। এ ধরনের অপবাদ কেন দিচ্ছে বন্ধু রাষ্ট্রকে? ভারতের কলকাতায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার এমপির নিখোঁজ হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। অহেতুক বন্ধু রাষ্ট্রকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিবের এ ধরনের বক্তব্য দেয়া সমীচীন নয়।

দ্বিতীয়ত : ভারতের একটি পত্রিকা হত্যার শিকার এমপিকে চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছে। দেশের একজন টানা তিনবারের এমপিকে বন্ধুরাষ্ট্রের একটি গণমাধ্যম চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরায় দেশের অন্য এমপিদের বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে- সে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হলেও ভাবিয়ে তুলেছে দলটির শীর্ষ নেতাদের। যদিও বিষয়টি প্রসঙ্গে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভেতরে কেউ কোনো অপকর্ম করে কি-না এসব যখন প্রমাণ হয় তখন শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেন না, দলের লোক হলেও। ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি তার। ভারতের গণমাধ্যমে এসেছে চোরাচালানের কথা। তার মৃত্যুর আগে দেশের কোনো সাংবাদিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কেন বিষয়টা এলো না? তিনি আরো বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিম অপকর্মে জড়িত কি-না তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছু বলতে পারছি না। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে তৃতীয়বার মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল তার জনপ্রিয়তার কারণে বলে উল্লেখ করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এলাকায় গিয়ে দেখেন তার জন্য মানুষ শোকার্ত।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি যখন ‘ইয়াবা বদি’ হিসেবে দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে তখন খোদ প্রধানমন্ত্রী সরকারি-বেসরকারি সংস্থা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। এমনকি নিজস্ব সোর্স দিয়েও বদির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। যখন দল ও সরকারের ভাবমর্যাদার বিষয়টি সামনে চলে আসে তখন কক্সবাজার আওয়ামী লীগের জন্য বদি গুরুত্বপূর্ণ হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। যদিও কক্সবাজার-৪ আসনের বর্তমান এমপি তার স্ত্রী শাহীন আক্তার। তেমনিভাবে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার বিরুদ্ধে যদি এমন কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততা পাওয়া যেত তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাকে গত নির্বাচনে মনোনয়ন দিতেন না। তিনি একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। তার পরও নানাভাবে কেউ কেউ কিছু কিছুু বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন পেয়ে যান- সেটা দলের জন্য বিব্রতকর বটে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার বিরুদ্ধে ভারতের একটি পত্রিকা চোরাচালানীর সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন। আনারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সামনে আসার পরপরই সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর এমপিদের বিষয়ে নতুন করে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ে জড়িত এমপিদের ব্যবসায়ের ধরন কী, কোনো গুরুতর অপরাধকর্মের সাথে জড়িত আছে কি-না এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী এমপিদের সাথে সুসম্পর্ক থাকার সুবাধে কোনো বিশেষ অপরাধকারী চক্র দল সুযোগ নিচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও নড়েচড়ে বসেছেন।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিমের হত্যাকাণ্ডকে অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে দুই দেশের পুলিশ একসাথে কাজ করছে। এটা এখন তদন্তাধীন বিষয়, তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলা সমীচীন হবে না।
দলীয় একজন এমপির এমন পরিণতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, দলের একজন এমপির এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় দলের সবাইকে হতবাক করেছে। এটা উদ্বেগের। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি। হত্যার কারণ উদঘাটন জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement