১৬ জুন ২০২৪
`
শক্তিশালী হয়েছে লঘুচাপ

আজ দেশের সর্বত্রই তাপপ্রবাহ থাকবে

-

সামান্য অগ্রসর হয়ে লঘুচাপটি শক্তিশালী হয়েছে। এটা গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার আগে অবস্থান করছিল দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায়। এটা উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে এবং ঘনিভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে অবস্থান করছিল। আজ শুক্রবার সকালে অথবা এর কিছু আগে বা পরে এটা সামান্য একটু অগ্রসর হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
এ দিকে গতকাল থেকে সারাদেশে ব্যাপকভাবে বেড়েছে তাপমাত্রা। আজ শুক্রবার সারা দেশই থাকবে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহের কবলে। কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহও থাকতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকেই বৃষ্টি কমে গেছে। যদিও দেশের কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। যেমন রাজধানীর কোথাও কোথাও গতকাল বিকেলে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও ওই বৃষ্টি রাজধানীর উচ্চ তাপমাত্রা সামান্যও কমাতে পারেনি। গতকাল রাজধানীর তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে সর্বোচ্চ উঠে রাঙ্গামাটি ও পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমান লঘুচাপটি নিম্নচাপ হতে পারলে এবং নিম্নচাপ থেকে আরো একটি প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে পারলেই এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে যাবে। ঘূর্ণিঝড় হলে এর নাম হবে রেমাল। রেমাল একটি আরবি শব্দ এবং এ নামটি দিয়েছে ওমানের আবহাওয়া দফতর।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালেই প্রথম বঙ্গোপসগার ও আরব সাগরে উত্থিত ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ শুরু হয়। এর আগে সাঙ্কেতিক নাম্বার ব্যবহার করা হতো। নামকরণের দিক থেকে সিডরই বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে উত্থিত প্রথম ঘূর্ণিঝড়েরের নাম। সিডর নামটি শ্রীলঙ্কান ভাষার একটি নাম।

এ দিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাপারে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল আগামী রোববার (২৬ মে) ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি ১০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসতে পারে। তবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকালে ঘূর্ণিঝড়টি সর্বোচ্চ ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগ পেতে পারে। তিনি বলেন, এটি গতিবেগ সম্বন্ধে আরো সুস্পষ্ট করে বলা যাবে, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর। ঘূর্ণিঝড়ের সাথে বেশি আর্দ্রতা থাকলে এবং বৃষ্টি থাকলে গতিবেগ বেড়ে যেতে থাকবে।
মোস্তফা কামাল বলেন,সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির মূল কেন্দ্র যাবে বরিশালের অথবা এর দু’পাশের এলাকা দিয়ে। যদি কোনো ব্যতিক্রম কোনো ঘটনা না ঘটে তাহলে ঘূর্ণিঝড়টি বিস্তৃত থাকবে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। এটা ঘটতে পারে রোববার সকাল ৬টা থেকে পরদিন সোমবার (২৭ মে) দুপুরের মধ্যে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৪০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল ও ভোলা জেলার ওপর। মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানলে উপকূলীয় এলাকায় ৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। কিন্তু ভাটার সময় আঘাত হানলে ৩ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
তবে বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর তাদের পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে এখনো কোনো শব্দ ব্যবহার করেনি। তারা শুধু বলেছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপ আরো ঘনীভূত হতে পারে। তবে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে সৃষ্টি লঘুচাপ অথবা সুস্পষ্ট লঘুচাপটি যে শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় হতে সে ধরনের পূর্বাভাস দিতে শুরু করেছে।

তবে আজকের তাপপ্রবাহ সম্বন্ধে বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর বলেছে, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের সব বিভাগেই মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে এবং এটা অব্যাহত থাকতে পারে। সাধারণত মে মাসের ঘূর্ণিঝড়ের আগের দুই থেকে তিন দিন সারা দেশেই বেশি তাপমাত্রা থাকে। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের আগে যেহেতু শুকনো দিন যাচ্ছে কারণে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে না ওঠা পর্যন্ত দেশের উচ্চ তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। এমনও হতে পারে, আগামীকাল শনিবার দেশের কোথাও কোথাও তীব্র অথবা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
তবে তাপপ্রবাহ সত্ত্বেও আজ খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
প্রভাব নেই উপকূলীয় এলাকায়
পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। তবে লঘুচাপের প্রভাব এখনো পড়েনি উপকূলীয় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে। সকাল থেকে সেখানকার আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল। প্রখর রোদের তীব্রতাও রয়েছে বেশ। নদ-নদী ও সাগরের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক রয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক আকাশ মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। তবে আগামী পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement