নদী দখলদাররা রক্ষা পাবে না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৪ মে ২০২৪, ০০:৫১
নদী দখলদাররা রক্ষা পাবে না মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের নদী রক্ষার জন্য নদীখেকো, বালুখেকো, নদী দখলকারী এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। আর যেসব শিল্পের মালিকেরা নদীতে রঙিন পানি ফেলে, তারা সমাজের শত্রু। এদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।
গতাকল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নোঙর ট্রাস্ট আয়োজিত ২৩ মে ‘জাতীয় নদী দিবস’ ঘোষণার দাবিতে ‘ঢাকা নদী সম্মেলন’ প্রস্তুতি সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের চতুর্থ রোববার বিশ্ব নদী দিবস পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু নদীমাতৃক বাংলাদেশের জন্য একটি দিবস নেই। তাই এখন থেকে প্রতি বছরের ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের দেশের মানুষ এখন উন্নয়ন মানেই বোঝে রাস্তা, ব্রিজ ও বিল্ডিং বানানো। এই উন্নয়নের সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করি। রাস্তা বানাতে গিয়ে যেটা হচ্ছে খাল-বিল-নদী-নালার ওপরে ব্রিজ বানানো হচ্ছে, কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। আমরা যদি শুরু থেকে নদীর নাব্যতা রক্ষা করে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতাম তাহলে; কিন্তু আজকে নদীর এই অবস্থা দাঁড়াত না।
নদী দখলদারা ছাড় পাবে না মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি ছোটবেলায় যে নদীর পাড়ে খেলা করতাম, সেই নদী আর এখন নেই, বালুচরও নেই। কারণ নদী শুকিয়ে গেছে। আর এর পেছনের কারণ হচ্ছে নদীতে বিভিন্ন রাবার ড্যাম তৈরি হয়েছে, তাই নদীর উজানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এটি সারা দেশের চিত্র। আর শহর অঞ্চলের যে নদী সেগুলো ক্ষমতাসীনরা দখল করেছে। এখন নদীগুলো শুকানোর পাশাপাশি আবার সরু হয়ে যাচ্ছে।
নগরায়নের প্রভাব পরিবেশে পড়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, গত ৫০ বছরে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ৩০০ কোটি থেকে ৮০০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় তিন গুণের কাছাকাছি। মানুষ বাড়ছে, আগে মানুষ দুই এক বালতি পানি দিয়ে গোসল করত। কিন্তু এখন সেটা করে না। এখন আবার অনেকে বাথটাব ব্যবহার করে। তাই মানুষ বাড়ার কারণে পানির ব্যবহার বেড়েছে। আবার ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কারণে, নগরায়নের কারণে পানির ব্যবহার বাড়ছে। এগুলোর একটা ইফেক্ট পরিবেশের ওপর, নদীর ওপরে পড়েছে। আবার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার, সারফেস ওয়াটার এবং নদীর ওপর প্রভাব পড়েছে। কিন্তু সেটাকে প্রোপারলি ম্যানেজ করার জন্য সবাইকে সমন্বয় করে যে রিজিওনাল কো-অপারেশন দরকার ছিল- সেটা নাই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আমি মনে করি সবার জন্য নদীর পানির ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য অর্থাৎ নদীর অববাহিকায় যারা বসবাস করে সবার জন্য সুষমভাবে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক সহযোগিতা দরকার। আমাদের যৌথ নদী কমিশন আছে; কিন্তু আমি মনে করি এটাকে আরো ইফেক্টিভ করা দরকার। আমাদের একটি আঞ্চলিক সহযোগিতার ফোরাম গঠন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ নদীর উৎপত্তি নেপালে, তারপর ভারতের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সাগরে গিয়ে মিশে। এখানে কয়েকটি দেশ জড়িত। অতএব সবাই মিলে যদি আমরা একটা আঞ্চলিক ব্যবস্থাপনা দাঁড় করাতে পারি তাহলে সবার জন্যই এটি সুবিধা হবে।
নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামসের সভাপতিত্বে এতে অন্যানের মধ্যে ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মো: আওলাদ হোসেন, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান ও সংগঠনের অন্য সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সুমন শামস বলেন, আমরা এখন চাইব কারিগরি কারণে ২৩ মে যদি নৌ নিরাপত্তা দিবস ঘোষণা করা সম্ভব না হয়, তাহলে একে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা করা হোক। কারণ নদীর নিরাপত্তা শুধু যাত্রী ও পরিবহনের বিষয় নয়, নদীর নিরাপত্তার সাথে নদীর সার্বিক নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। দখল দূষণ, বালু উত্তোলন অপরিকল্পিত স্থাপনা, প্রবাহস্বল্পতামুক্ত নদীই হচ্ছে নিরাপদ নদী। ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা করা হলে নদীর সার্বিক ও সামগ্রিক নিরাপত্তার প্রশ্নটি আরো জোরালো হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা