সরকারি দলের হামলা আতঙ্কে বিরোধী নেতাকর্মীরা
- ইকবাল মজুমদার তৌহিদ
- ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০
- দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
- ক্ষমতাসীনদের সহনশীল হওয়ার পরামর্শ সুজন সম্পাদকের
দেশজুড়ে বিরোধী নেতাকর্মীর মধ্যে হামলা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক বিরোধীদলীয় নেতাদের ওপর সরকারদলীয় নেতাকর্মীর হামলার পরে এ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশেবিরোধী নেতাদের ওপর একের পর এক যে হামলা হচ্ছে তা ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের কর্মীসহ কোনো সাধারণ মানুষও নিরাপদ না।
গতকাল বুধবার বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার একদিকে রাষ্ট্রযন্ত্র, অন্যদিকে দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের জীবন অনিরাপদ করে তুলেছে। দেশের কোথাও এখন তাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই। স্বাধীনভাবে কোথাও দাঁড়িয়ে কথা বলার অধিকারও নেই।
সরকার ও তার রাজনৈতিক দল চরমভাবে মানবাধিকার লংঘন করছে অভিযোগ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা এমন একটি দেশে বসবাস করছি যে দেশে কোথাও দাঁড়িয়ে কথা বলার মতো স্বাধীনতাটুকুও নেই। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো- পুলিশের সামনে একটা মানুষকে মারধর করা হচ্ছে কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছে না। এমনকি এসব ঘটনায় থানায় মামলাও নিচ্ছে না। অর্থাৎ মানবতার সর্বনিম্ন স্তরকেও পাশ কাটিয়ে সরকার এসব ন্যক্কারজনক হামলাকে বৈধতা দিয়েছে। তাই আপনি বলতেই পারেন দেশে মানবাধিকার বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই।’
তিনি বলেন, ‘অতীতে দেশে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ছিল। এখন সেটাও নেই। শীর্ষ ছাত্রনেতাদের ওপর অকারণে হামলা করা হচ্ছে। এটা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রূপের বহিঃপ্রকাশ।’
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নয়া দিগন্তকে বলেন, এতদিন বিরোধী নেতাকর্মীরা পুলিশি আতঙ্কে ছিল। এখন সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্কে রয়েছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাইয়ের সাথে কথা বলা অবস্থায় না যেন হামলার শিকার হয়। এমনকি হাসপাতালে পরিবারের অসুস্থ রোগী নিয়ে যাওয়ার সময়েও মানুষ আতঙ্কে থাকে। কারণ কেউ জানেন না তিনি কখন হামলার শিকার হবেন।
তিনি বলেন, সরকার দলের ক্যাডাররা একের পর এক বিরোধী নেতাকর্মীর ওপর যেভাবে রাস্তাঘাটে হামলা করছে তাতে মনে হয় সরকারের মতলব ভালো না। সরকার বাকশাল প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। সরকার গণতন্ত্রকে কবর দেয়ার ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত। তবে তাদের সেই স্বপ্ন এ দেশের মানুষ সফল হতে দেবে না।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগ চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাসেল বাবু নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। এ দেশে অবাধে চলাফেরা করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আর আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু সরকার তার দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। আমাদের মানবাধিকার হরণ করছে। এমনকি আমরা হামলার পরে যে বিচার চাইব সেই বিচার পাওয়ার অধিকারও হরণ করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে দেশে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর ওপর অকারণে হামলার যে প্রচলন চালু করা হচ্ছে তা গণতন্ত্রের জন্য এক অশনিসঙ্কেত। এটা ফ্যাসিবাদী চরিত্রের একটি বহিঃপ্রকাশ।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, পরপর অনেকগুলো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় দেশে অনেকটা একদলীয় কর্তৃত্ববাদী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ফলে সারা দেশে সরকারদলীয় নেতাকর্মীর মাঝে একটি বেপরোয়া ভাব সৃষ্টি হয়েছে। যা দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেও কাম্য না।
এ সময় দেশের বৃহৎ স্বার্থে ক্ষমতাসীনদের সহনশীল হওয়ার পরামর্শও দেন প্রবীণ এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর শিল্পকলার সামনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করে বলে অভিযোগ করে বিএনপি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলার একটি ভিডিও ভাইরালও হয়।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান, শিল্পকলার সামনে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কথা বলছিলেন শ্রাবণ। এ সময় রড-চাপাতি-রামদা-হকিস্টিকসহ শ্রাবণের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এতে গুরুতর জখম ও আহত ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শ্রাবণকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর আগে একই দিন মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুর ১২টার দিকে ঢাবির পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের উল্টো দিকে ইউ টার্ন নেয়ার সময় চার-পাঁচজন যুবক হাতুড়ি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা গোলাম মাওলা রনির গাড়িতে হামলা চালায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে তার গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। ড্রাইভার প্রথমে গাড়ি ব্রেক করলেও পরে আবার দ্রুত টান মেরে সেখান থেকে চলে যান।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এক ফেইজবুক স্টাটাসে গোলাম মাওলা রনি লিখেন, জল্লাদের কবলে পড়ে আজ আর একটু হলেই মরতে বসেছিলাম। প্রাণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমার প্রাণের ওপর আঘাত আসবে এমন চিন্তা কোনোদিন মাথায় ঢোকেনি। তাই রাত বিরেতে একাকি, পায়ে হেঁটে, রিকশা বা উবারের মোটরসাইকেলে করে মনের আনন্দে দোয়েল চত্বর হয়ে কখনো টিএসসি বা কখনো শহীদ মিনার হয়ে নীলক্ষেত দিয়ে বাসায় ফিরেছি। অফিসে আসার ক্ষেত্রেও সর্বদা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে আসতেই শান্তি অনুভব করি!
এর আগে ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনকে পিটিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই দিন রাতে রাজধানীর মগবাজারে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রদলের এক নেতা জানান, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খোকন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সম্রাটসহ তার মগবাজার নয়াটোলার বাসায় যাবার পথে মগবাজার মাজারের সামনে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তার পথ রোধ করে। তারা বলে, তুই ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খোকন না? এ কথা বলেই ছাত্রলীগের কর্মীরা এলোপাতাড়ি মারতে থাকে খোকনকে। মুহূর্তের মধ্যেই ১৫ থেকে ২০ মোটরসাইকেলে সেখানে ছাত্রলীগের আরো কর্মী এসে তাদের সাথে যোগ দেয়। তার ৫ মিনিট পর পুলিশের পোশাকে চারজন দু’টি মোটরসাইকেলে এসে আহত খোকনকে তুলে নিয়ে যায়।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বিরোধী নেতাকর্মীরা ক্ষমতাসীনদের হাতে হামলার শিকার হচ্ছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা