সুন্দরবনে ২২ বছরে ৩২ বার আগুন পুড়েছে শত একর
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০
কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে সুন্দরবন বারবার আগুনে পুড়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এ বনে গত ২২ বছরে ৩২ বার আগুন লেগেছে। পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক একর বনভূমি। বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডের পরও তা নেভানোর সক্ষমতা দেখা যায়নি।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত ‘বারবার আগুন সন্ত্রাসের কবলে সুন্দরবন : কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ও বাপার জাতীয় কমিটির সদস্য ড. আবদল্লাহ হারুন চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সবশেষ গত ৪ মে বেলা ১১টায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন লাগে। এতে পুড়ে যায় ৭ দশমিক ৯ একর বনভূমি। সেই ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সংবাদ সম্মেলনে বাপার যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম শেখ বলেন, এশিয়ার ফুসফুস বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন অক্সিজেন ও কার্বনের এক সুবিশাল ভাণ্ডার। কিন্তু আমাদের নীতিনির্ধারকদের কাছে সুন্দরবন আজও গুরুত্বহীন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বারবার কেন সুন্দরবনে আগুন লাগে? সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা কি প্রাকৃতিক, নাকি মানবসৃষ্ট? সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দায় কোনোভাবেই বন বিভাগ এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, যাদের কাছে সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্ব তারা কি সুন্দরবন আদৌ নিরাপদ রাখতে পারছেন। বারবার সুন্দরবনে আগুনে সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে চোরা শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগানো হচ্ছে। এর দায়ভার বন বিভাগকেই নিতে হবে।
ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, দেশের কিছু কুচক্রী মহলের অতি লোভের কারণে সুন্দরবন বিভিন্নভাবে ধ্বংস হচ্ছে। আর দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে বনজীবীদের ওপর। বারবার আগুনে সুন্দরবনে প্রাণিকুলের আবাস ও প্রজননস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। প্রাণিকুলের খাদ্যচক্রে প্রভাব পড়ছে। চরম আঘাত আসছে বনের বাস্তুতন্ত্রেও।
তিনি বলেন, আমরা নিজ হাতেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করছি। আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, বাঘনিধন এবং হরিণ শিকার করে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছি। বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগলেও আমরা নেভাতে সক্ষম হচ্ছি না।
সভাপতির বক্তব্যে বাপার সহসভাপতি মহিদুল হক খান বলেন, রাষ্ট্রের সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক সমন্বয় না হলে বন-পরিবেশ কোনোটাই নিরাপদ থাকে না। সুন্দরবনের ওপর যে অত্যাচার চলছে, তা খুবই দুঃখজনক। সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ববাসীর সম্পদ। এর ক্ষতি করার কোনো অধিকার আমাদের নেই। বরং বন রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। সুন্দরবন রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে।
বাপা সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, বাপার পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে রামপালবিষয়ক ১৩টি গবেষণাপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এসব সুলিখিত গবেষণা প্রতিবেদন জমা দিয়ে প্রয়োজন মতো উন্মুক্ত আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম; কিন্তু গত সাত বছরেও সরকার কোনো মতামত দেয়নি। এ নীরবতা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এসব গবেষণাপত্রের যৌক্তিকতা বিষয়ে সরকারের কোনো দ্বিমত নেই।
তার ভাষ্য, পরিবেশবাদীদের মতামতের তোয়াক্কা না করে প্রকল্প গ্রহণের কুফল বিভিন্নভাবে সুন্দরবনের ওপর পড়ছে। সুতরাং এখনই সময় সুন্দরবনকে রক্ষার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে বায়ুমণ্ডলী দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, আমরা সুন্দরবন রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ। অনিয়ন্ত্রিত জলযান ও পর্যটকদের অবাধ বিচরণের ফলে সেখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। সুন্দরবনে গবেষকদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ করে বন ধ্বংসকারীদের অবাধে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা