নাঙ্গলকোটে বাবা-ছেলের লিচু, আম ও ড্রাগন বাগান : বছরে ১০ লাখ টাকা আয়
- সাইফুল ইসলাম নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা)
- ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০
ছেলে হৃদয় হাছান জয় লাঠি দিয়ে গাছ থেকে লিচু পাড়ছেন। বাবা ছায়েদুর রহমান মজুমদার গাছের নিচে লিচু কুড়াচ্ছে এবং বিক্রির জন্য আঁটি বাঁধছেন। ক্রেতারা এসে বাগান থেকে লিচু ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। বাবা-ছেলের যৌথ প্রচেষ্টায় লিচু, ড্রাগন এবং আমের মিশ্র বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। গ্রামীণ পর্যায়ে লিচু, ড্রাগন এবং আম বাগান খুব কম গড়ে ওঠে। কিন্তু কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বাঙ্গড্ডা ইউনিনের বাঙ্গড্ডা বাজারের পাশে বালিকা মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে বাবা-ছেলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় ৮৫ শতাংশ জমিতে লিচু, আম ও ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে উঠেছে। শুধু বাঙ্গড্ডা বাজারে নয়, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার চান্দিনার কাজুরী ইউনিয়নের সাচ্চার গ্রামে ছায়েদুর রহমানের স্ত্রীর বড় বোনের শ্বশুর বাড়িতেও ২০১৯ সালে ৬০ শতাংশ জমিতে ড্রাগন ফল বাগানের পাশাপাশি আম বাগানও গড়ে তোলেন।
ছায়েদুর রহমান ২০০১ সাল থেকে বাগান গড়ে তুললেও ছেলে হৃদয় হাছান গত ৮ বছর থেকে বাবার সহযোগী হিসেবে লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবাকে ফল বাগানে সহযোগিতা করে আসছেন। হৃদয় স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দাখিল শ্রেণীতে পড়ছে। এ ছাড়া সে ঢাকা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটিউট থেকে কৃষির ওপর ডিপ্লোমা করছে।
চলতি বছর তারা ১০০ লিচু ৫০০ টাকা করে বিক্রি করেন। আটটি গাছ থেকে প্রায় ১ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেন তারা। স্থানীয়ভাবে ক্রেতারা বাগানে এসে লিচু ক্রয় করে নিয়ে যায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর লিচু বেশি ধরলেও ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে অনেক লিচু নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান, ছায়েদুর রহমান। বাবা-ছেলে লিচু, আম ও ড্রাগন বাগান থেকে খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো আয় করছেন বলে তারা জানান। এ ছাড়া নতুন ড্রাগন বাগানের ফল তোলা শুরু হলে এখান থেকে আরো প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন।
লিচু ক্রয় করতে আসা ক্রেতা স্থানীয় চারজানিয়া গ্রামের প্রবাসী রফিক জানান, সরাসরি বাগান থেকে কেমিক্যাল মুক্ত লিচু ক্রয় করার জন্য লিচু বাগানে এসেছি। ২০০ লিচু ১ হাজার টাকায় ক্রয় করেছি। তাদের লিচুগুলো অনেক ভালো।
জানা যায়, ছায়েদুর রহমান ভারতের গুজরাটে ২১ বছর ছিলেন। প্রথম তিন বছর ভারতের গুজরাটে আম, লিচু ও সফেদা বাগানে কাজ করেন। পরে তিনি ২০০১ সালে গ্রামের বাড়িতে এসে ভারতের ফল বাগানে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বাঙ্গড্ডা গ্রামে নিজস্ব ৩৭ শতাংশ জমিতে আটটি লিচু গাছ দিয়ে লিচু বাগান শুরু করেন। পরে লিচু গাছের সাথে আরো ১০-১২টি আ¤্রপালি আম গাছ রোপণ করেন। লিচু গাছ রোপণের এক বছর পর থেকে উৎপাদন শুরু হয়। লিচু বাগান থেকে ছায়েদুর রহমান প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার লিচু বিক্রি করেন। আম বাগান থেকেও লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রি করেন। লিচু ও আম বাগানের পাশাপাশি ছায়েদুর রহমান ও তার ছেলে হৃদয় হাছান ১২ শতাংশ জমিতে ড্রাগন বাগান গড়ে তোলেন। বর্তমানে বাঙ্গড্ডার পুরনো ড্রাগন বাগানটিতে ফুল ধরা শুরু হয়েছে। আর কয়েক দিন পর ফুল ফলে পরিণত হবে।
ড্রাগন বাগান ছোট আকারে শুরু করলেও সফলতা দেখে চান্দিনায় ড্রাগন ফল বাগান শুরু করেন। পরে ড্রাগন ফল বাগানের পাশাপাশি ওইখানে আম বাগানও গড়ে তোলেন। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে বাঙ্গড্ডা মাঠে আরো ৩৬ শতাংশ জমিতে ড্রাগন বাগান গড়ে তোলেন। তারা টায়ার ছাড়া সিমেন্টের পিলার, সুতা, তার, বাঁশ ও লাইটিং দিয়ে চায়না পদ্ধতিতে ড্রাগন বাগান তৈরি করেছে। ড্রাগন বাগানে প্রায় তিন হাজার ৩০০ চারা রোপণ করেন। আশা করছেন আগামী তিন মাস পর নতুন ড্রাগন বাগান থেকে ফল তোলা শুরু হবে। ড্রাগন ফলের চারা রোপণের সময় টিএসপি, ম্যাগবিট, সুপার জিম সার প্রয়োগ শুরু হয়। এ বাগানটি গড়তে তাদের এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে।
ছায়েদুর রহমান বাঙ্গড্ডা গ্রামে লিচু ও আম বাগানের পাশের সফলতা দেখে তার স্ত্রীর বড় বোনের শ্বশুর বাড়ি চান্দিনার কাজুরী ইউনিয়নের সাচ্চার গ্রামে ২০১৯ সালে ৬০ শতাংশ জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তোলেন। ড্রাগন বাগান করতে তাদের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় হয়। বছরের প্রায় ১০ মাস ফলন আসে। প্রতি বছর প্রায় আট লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেন। এতে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৬ লাখ টাকা লাভবান হন তারা। চান্দিনায় ড্রাগন ফলের বাগানের পাশাপাশি ২০২১ সালে ৩০ শতক জমিতে আমবাগানও গড়ে তোলেন। তাদের বাগানে আ¤্রপালি, হাড়িভাঙ্গা, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, বারি-৪, গুটি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, কাউজাই আম গাছ রয়েছে। আম থেকে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হয়। ড্রাগন ফল তারা নিমসার, ঢাকা কারওয়ান বাজার এবং ফেনীতে বিক্রি করেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, ছায়েদুর রহমান ও হৃদয় হাছান বাবা-ছেলে সফল ফল চাষি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। আগামীতে লিচু, আম ও ড্রাগন ফল বাগানের পাশাপাশি মাল্টা বাগান করারও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা