১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দ্বিতীয় ধাপেও উত্তাপ

আজ ১৫৬ উপজেলায় নির্বাচন, বিনা ভোটে জয়ী ২২ জন
-


অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো চলমান ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন বয়কট করেছে। তার পরও কিছু উপজেলায় মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনের প্রার্থিতার কারণে উত্তাপ, শঙ্কার মধ্যে আজ দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ চলছে। নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারাই ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনী এলাকার কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নজরদারি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটার অনীহার কারণে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা উঠেছিল। এই অবস্থার কারণে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো: আলমগীর গতকাল কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো বিধিনিষেধ বা নিয়ম নেই যে, কত শতাংশ ভোট পড়লে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এগুলো নিয়ে ইসি ভাবে না। যে কোনো শতাংশ ভোট পড়লেই খুশি। ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে ইসি উদ্বিগ্ন নয়।

সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এই ধাপে মোট এক হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী তিনটি পদে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। নির্বাচনের জন্য আজ মঙ্গলবার ১৫৬ উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ঢাকায় নির্বাচন কমিশন থেকে সিসিটিভির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে ভোট মনিটরিং করা হবে। প্রথম ধাপে তিন পদে বিনা ভোটে ২৮ জন নির্বাচিত হন। আর এই দ্বিতীয় ধাপে ২২ জন বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। ৯ জেলার ২৪ উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করার কথা। বাকিগুলোতে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে।
গতকাল সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার অর্থাৎ ভোটগ্রহণের পর রাত ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত বোটসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। সহিংসতার আশঙ্কায় দ্বিতীয় ধাপের ১৫৬ উপজেলার মধ্যে ১৬ উপজেলায় ২-৪ প্লাটুন অতিরিক্ত বিজিবি, রথ্যাব এবং কোস্টগার্ড মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির দেয়া সর্বশেষ তথ্য বলছে, দ্বিতীয় ধাপে মোট এক হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী তিন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৬৯৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। এই ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৭, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ করে অর্থাৎ মোট ২২ প্রার্থী ইতোমধ্যে বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। রাউজান ও কুমিল্লা আদর্শ সদর এই দুটি উপজেলার সব পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। অর্থাৎ এই দুই উপজেলায় কোনো পদেই ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না। দ্বিতীয় ধাপে ১৩ হাজার ১৬ ভোট কেন্দ্রে ৯১ হাজার ৫৮৯ ভোট কক্ষে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার ৭৪৮ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ এক কোটি ৭৯ লাখ ৫ হাজার ৪৬৪ জন, নারী এক কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭ জন এবং ২৩৭ জন হিজড়া ভোটার। এখানে ৮ হাজার ৮৪১টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ রাখা হয়েছে। ভোটের আগের দিন গতকাল সোমবার ৬৯৭টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। আর আজ সকালে ভোটের দিন ১২ হাজার ৩২৩টি কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয়।

১৭ উপজেলায় বিশেষ নজরদারি : ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোলা সদর, পটুয়াখালীর গলাচিপা ও বাউফল উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলা, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলা, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা, ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও কসবা উপজেলা, গাইবান্ধার সদর, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলায় ২-৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে এসব এলাকায় রথ্যাব এবং কোস্টগার্ডের অতিরিক্ত টিমও মোতায়েন করার জন্য বলা হয়েছে। সারা দেশের ভোট কেন্দ্রগুলোতে ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করার কথা।

২ লাখ আনসার-ভিডিপি : ইসির দেয়া তথ্যানুযায়ী, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় মোট ১৩ জন বা ততধিক আনসার ও ভিডিপি সদস্য রোববার থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে একজন প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) ও দুইজন সহকারী প্লাটুন কমান্ডারের (এপিসি) নেতৃত্বে ৬ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী আনসার-ভিডিপি সদস্য রয়েছেন। কোনো কেন্দ্রে বুথ সংখ্যা ৬টির বেশি হলে বুথ প্রতি অতিরিক্ত আরো একজন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পিসি ও এপিসিদের তিনজন অস্ত্রসহ এবং আনসার-ভিডিপি সদস্যরা অস্ত্রবিহীন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা রক্ষায় এক লাখ ৮৫ হাজার ৫২৭ জন সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের পাশাপাশি ৭৯ প্লাটুন (২ হাজার ৩৭০ জন) আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালনের জন্য স্ট্রাইকিং/স্ট্যাটিক ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে। মোবাইল টিমে/স্ট্রাইকিং ফোর্সে দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা ন্যূনতম সেকশন (প্রতি সেকশন ১০ জন করে) ফরমেশনে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া পুলিশের মোবাইল টিম/ স্ট্রাইকিং টিমের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন প্রায় ১০৫ প্লাটুন (৩ হাজার ২৪০ জন) সশস্ত্র আনসার-ভিডিপি সদস্য। মোতায়েন করা সদস্যদের দায়িত্ব পালন তদারকের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আরও ২ হাজার ২৯০ সদস্য মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement