সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু কাল
শেষ মুহূর্তেও মাছ না পেয়ে হতাশ উপকূলের জেলেরা- রবিন আহম্মেদ পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী)
- ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০
বছরের শুরু থেকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার নদ-নদী ও সাগরে ইলিশের দেখা নেই। রীতিমতো ইলিশের জন্য হাহাকার চলছে। মার্চ-এপ্রিল টানা দুই মাস তেঁতুলিয়া নদীতে অভয়াশ্রমের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের আশা ছিল ইলিশের দেখা মিলবে। কিন্তু কাক্সিক্ষত ইলিশের আর দেখা মেলেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বৃষ্টি না হওয়া এবং তাপমাত্রা বাড়ার কারণে পানি গরম হওয়ায় ইলিশ তো দূরের কথা- মে মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জালে দেশী প্রজাতির অন্যান্য মাছও ধরা পড়ছে কম। জেলেদের এমন দুঃসময়ের মধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এই সময়ে সংসারের খরচ, দাদন ও ঋণের টাকার জোগান হবে কোথা থেকে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে জেলেদের তেমন তৎপরতা নেই। শেষ মুহূর্তে এসেও জালে ধরা পড়ছে না কাক্সিক্ষত মাছ। তবুও আগুনমুখা নদীর তীরে জাল সেলাই করছেন একদল জেলে। সাগরে মাছ ধরতে না গিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে জাল মেরামত করছেন তারা। কারণ সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মাছ পাওয়া তো দূরের কথা, সামুদ্রিক কাঁকড়া আটকে যাওয়ায় তাদের জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ট্রলারের মাঝি উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন বলেন, সাগরে এখন তো মাছ মিলছেই না। বরং জালে আটকা পড়ছে ছোট ছোট কাঁকড়া। যে কারণে ছিঁড়ে গেছে জাল। এমন দুরবস্থায় পড়েছেন অনেক জেলেই। তাই আগেভাগেই তীরে ফিরে এসেছেন অনেকে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, সাগর কিংবা নদী কোথাও মাছের দেখা নেই। টুকটাক যা, মাছ ধরা পড়ছে- এতে কারও কারও জ্বালানি খরচই উঠছে না। সাগরে মাঝেমধ্যে টুকটাক ইলিশ ধরা পড়লেও নদীতে তো মাছের দেখা নেই বললেই চলে। কোড়ালিয়া গ্রামের জেলে মান্নান চৌকিদার বলেন, কয়দিন আগে তেতুঁলিয়া নদীতে দুই মাসের অবরোধ গেছে। ভাবছি, অবরোধের পর মাছ পামু। কিন্তু মাছের জন্য অপেক্ষা করতে করতে এহন আবারো ৬৫ দিনের অবরোধ আইয়া পড়ছে। এখন জাইল্ল্যাগো গ্রাম ছাইড়া ঢাকা যাওয়া ছাড়া উপায় নাই।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: ইমরান হোসেন বলেন, ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করতে এবং উৎপাদন বাড়াতে আগামী ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। এ সময় নিবন্ধিত তালিকাভুক্ত প্রত্যেক জেলেকে প্রথম ৫৬ কেজি এবং পরে ৩০ কেজি করে মোট ৮৬ কেজি চাল দেয়া হবে।
জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলায় মোট ১৬ হাজার ৮০৯ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তবে জেলেদের দাবি, এর বাইরও অসংখ্য জেলে রয়েছে। যারা নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে প্রতিবার বঞ্চিত হয়। আগুমনুখা নদী পাড়ে ট্রলার মেরামতের কাজে ব্যস্ত জেলে মামুন হাওলাদার বলেন, ভাই জাইল্ল্যারা চাউল পায় না। সরকার তো আমাগো লাইগা দেয় কিন্তু আমরা পাই না। আমাগো চাউল পায় খাইয়া লইয়া যারা ভালো আছে তারা। এই যে এহন ৬৫ দিনের অবরোধ আইছে আমরা এহন কী করমু কন? একটু খাইয়া লইয়া যে সময় পার করমু, মাছও তো পাই নাই কোনো। সঞ্চয় তো দূরের কথা, সংসার আর দাদন-ঋণের টাকা দিমু ক্যামনে হেইডাইয়া ভাবতাছি।
উপজেলার কোড়ালিয়া মৎস্য সমিতির সভাপতি জহির হাওলাদার বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে আমাদের দেশের জেলেরা যখন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবে, ঠিক তখন এক মাসের বেশি সময় ভারতের জেলেরা গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে আসে। তখন তাদের নিষেধাজ্ঞা না থাকার সুযোগে মাছ ধরে নিয়ে যায়। আমাদের দেশের জেলেরা তখন মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হয়। তাই দুই দেশের একই সময় নিষেধাজ্ঞা হলে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে। মাছের উৎপাদন বাড়বে।
এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, একোয়াকালচার ও মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের দেশের উপকূলীয় অভয়াশ্রমের জেলেরা সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে। কারণ- ইলিশের জন্য অক্টোবরে ২২ দিনের অবরোধ, নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা ধরা নিষেধ, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষেধ এবং এই ৬৫ দিনের অবরোধতো আছেই। এখন এই ৬৫ দিনের অবরোধটাই ভারতে ৬০ দিন। ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ভারতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। এখন আমাদের দেশের জেলেদের জন্য ঠিক তখনই এপ্রিল মাসে অভয়াশ্রমের নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। এপ্রিলের শুরুর ১৫ দিন ভারতের জেলেরা মাছ ধরার সুযোগ পেয়েছে। আবার আমাদের দেশের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে। অথচ ভারতের জেলেদের নিষেধাজ্ঞা ১৪ জুনের পর থেকে উঠে যাচ্ছে। এর ফলে এক মাসের বেশি সময় ধরে আমাদের দেশের জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়া থেকে বিরত থাকলেও ভারতের জেলেরা ঠিকই মাছ ধরতে পারবে। ফলে আমাদের দেশের জেলেরা সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে দুই দেশের নিষেধাজ্ঞা সমান হওয়া এবং আন্ত:দেশীয় একটি ব্যবস্থাপনা দরকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা