ভোট না দিলে সিক গরম করে সোজা করার হুমকি
- সরকার মাজহারুল মান্নান রংপুর অফিস
- ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
রংপুরের বদরগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ফজলে রাব্বি সুইট নামের প্রার্থীকে ভোট না দিলে ভোটারদের রড গরম করে সোজা করার হুমকি দিয়েছেন এক ইউপি সদস্য। হুমকিদাতা ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম উপজেলার কালুপাড়া ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। আর প্রার্থী সুইট বতর্মান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। হুমকি দেয়ার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
গত বুধবার রাতে কালুপাড়া ইউনিয়নের বৈরামপুর গ্রামের ফজলে রাব্বি সুইটের উঠান বৈঠকে হুমকি দেয়ার ভিডিওটি গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে বক্তব্য দেন ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম। এ সময় বক্তব্যে শফিকুল বলেন, সুইট এলাকার সন্তান। গত নির্বাচনে এলাকার দুই কেন্দ্রে সুইটের বিপক্ষ প্রার্থীরা ভোট পেয়েছিলেন ৩৩টি। আশা করি এবার যেন সেটাও না পান। এরপর উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এবার শনাক্ত করব সুইটের অ্যাগেইনস্টে কে। আমরা প্রথমে তাদের আদর করব, হাত ধরব, প্রয়োজনে পা ধরব। তবু যদি সোজা না হয়, তাহলে কী করব? ইউপি সদস্যের এমন প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত কয়েকজন বলেন, ‘ঢাশি ধরব’। এ সময় শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘না, প্রয়োজনে জ্বলন্ত আগুনে সিক গরম করে সোজা করব।’
ফজলে রাব্বি সুইট পর পর দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান। এবারো তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং রংপুর জেলা যুবলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। এখানে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান তবিকুর চৌধুরী ওরফে পলিন চৌধুরী। তিনি স্থানীয় এমপি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসানুল চৌধুরী ডিউক এমপির চাচাতো ভাই। চতুর্থ দফায় আগামী ৫ জুন এ উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ওটা (বৈরামপুর এলাকা) হামার বাড়ি। সুইটকে ভোট দিতে ভাই-ভাতিজাদের নিয়ে হাইস্কুল মাঠে ঘরোয়া বৈঠক করেছি। সেখানে যদি পরিবারের মধ্যে দু-একজন ট্যারী হয়, তাহলে হামরা ডাংগাই না মারি সেটা হামার ব্যাপার। হামরা কি অন্য এলাকাত গিয়ে সেটা করোছি?’ তিনি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মীর বাড়িতে হামলা চালাইনি। ওই কর্মীর বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে সুইটের পক্ষে ভোট করার কথা বলেছি।’
প্রার্থী সুইটের উপস্থিতিতে তার স্বপক্ষের একজন ইউপি মেম্বারের এ ধরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসান তবিকুর চৌধুরী বলেন, ‘ওই হুমকি দেয়ার দুই দিন আগে (গত সোমবার) বৈরামপুর এলাকায় আমার যুবলীগের কর্মী সমাবেশ ছিল। ওই ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে তার সাঙ্গপাঙ্গরা কর্মী সমাবেশের শামিয়ানা ছিঁড়ে ফেলেন এবং আমার এক কর্মীর বাড়িতে হামলা চালান। বিষয়টি থানায় জানালেও ওসি ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে ওই ইউপি সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।’
পলিন বলেন, ভোট করার অধিকার সবার আছে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে কাজ করতেই পারেন। কিন্তু ওই ইউপি সদস্যের হুমকি ধমকিতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
নিজের উপস্থিতিতে একজন কর্মীর এ ধরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলে রাব্বি সুইট বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। তবে উপস্থিত একাধিক কর্মী জানিয়েছেন শফিকুল ইসলাম যখন এ ধরনের বক্তব্য মাথা নাড়িয়ে এবং ঠিক ঠিক বলে সায় দিয়েছেন ফজলে রাব্বি সুইট।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন ওই ইউপি সদস্যের হুমকির বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়িতে হামলার বিষয়েও থানায় কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানান ওসি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা