১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ইআরএফের আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতারা

দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা

ইআরএফের আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতারা : নয়া দিগন্ত -


আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন সাংবাদিক নেতারা। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ব্যাংক ও আর্থিক খাত তথা দেশের অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হবে বলেও মনে করেন তারা।
গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে নেতাদের অবহিতকরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ডেইলি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস এডিটর শামসুল হক জাহিদ, ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন, বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ইআরএফের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাজ্জাদ আলম খান তপু ও সোহেল হায়দার, সিনিয়র সাংবাদিক সোহেল মঞ্জুর, ইআরএফের সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে অলিখিত এ নিষেধাজ্ঞা স্বাধীন সাংবাদিকতা, গণতন্ত্র এবং মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থে বলে আমরা মনে করি না। এ সিদ্ধান্ত লুটেরাদের রক্ষার জন্য। তিনি বলেন, যেকোনো দেশের অর্থনীতি ও গণমানুষের আস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ব্যাংক খাত বিনির্মাণ এবং এ খাতের ওপর জনগণের আস্থাকে সুদৃঢ় করতে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

শ্যামল দত্ত বলেন, এখন ব্যাংক খাত থেকে একজন পি কে হালদার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাবেন অথচ কিছু বলা যাবে না, এটা হতে পারে না। একজন ব্যক্তি সাত থেকে আটটি ব্যাংকের মালিক কীভাবে হন? সরকারের উন্নয়নের সহায়ক ভূমিকা পালন করেন সাংবাদিকরা। সামনে বাজেট আসছে। এমন সময়ে কেনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে। হলমার্কসহ সবগুলো আর্থিক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করে সরকারকে সহযোগিতা করেছে গণমাধ্যম। তিনি বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন এ বিষয়টি (প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা) নিয়ে কাজ করছেন। তবে আমাদেরও এ বিষয়টি শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, ভল্টের সোনা চুরি, ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি এসবের খবর যেন জনগণের সামনে না আসে এজন্যই নিষেধাজ্ঞা। তিনি বলেন, এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধে ১৩ জন সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা রুখে দিয়েছিলাম। অতীতে আমরা পেরেছি এবারো আমরা পারব। যখন আমরা সকল মতপথের সাংবাদিক ও নেতৃবৃন্দ একসাথে হয়েছি আমরা পারবই।

শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তকে জনস্বার্থে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের তথ্য প্রকাশে গণমাধ্যমের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথে অভূতপূর্ব প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে আর্থিক খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির যেসব তথ্য জনস্বার্থে প্রকাশিত হয়েছে, তার বেশির ভাগই এসেছে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকারের কারণে।
সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধারা এই দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন আর সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই স্বাধীনতাকে কলুষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ থেকে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে গভর্নরকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
শুকুর আলী শুভ বলেন, সাংবাদিক যদি বাংলাদেশে থাকে তথ্য তাকে দিতেই হবে। যখনি তথ্য দিবে না তখনি লুকোচুরির বিষয় থাকবে আমরা ধরে নেবো। গভর্নর তো কিছুদিনের জন্য। আমাদের অধিকার আমাদেরই আদায় করে নিতে হবে। যুগে যুগে সাংবাদিকদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়। সাংবাদিকরা কোনো ব্যক্তির জন্য কাজ করে না, তারা পুরো দেশের জন্য কাজ করেন।
ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছে। এই যে প্রতিনিয়ত পত্রিকায় তাদের ব্যাপারে রিপোর্টগুলো হচ্ছে এসব করে তাদের নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তারা কি কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতেই এমন করছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

সভাপতির বক্তৃতায় ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, গভর্নরের সাথে কথা বলেছি। উনি বলেছেন আসা-যাওয়া করতে থাকো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দেড় মাস পার হলেও এখনো আমাদের সহকর্মী সাংবাদিক ভাইয়েরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছে না। আগে সাংবাদিকরা যেভাবে সহজে যেকোনো অফিসারের সাথে কথা বলতে পারতেন তা এখন পারছেন না। তিনি বলেন, গভর্নর আমাদের বলেছেন দেশ প্রেমিক হওয়ার জন্য। আমরা তো দেশ প্রেমিক। আমাদের থেকে দেশ প্রেমিক লোক আর দেখছি না। আমাদের সহকর্মীরা বলছেন যে তাদের ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। যা খুবই ভয়ানক ব্যাপার। তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণেরই নামান্তর উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা আরো বলেন, তথ্য গোপন করতেই বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা তৈরি করছে। যা তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থী। ব্যাংক খাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আড়তদার তৈরি করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, এ মালিক ৯/১০টি ব্যাংকের মালিক হয় কি করে। এই আড়তদারদের অনিয়ম গোপন করতে চায় আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটা খুবই দুঃখজনক।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল