নারায়ণগঞ্জে খামারে আগাম গরু কিনে রাখছেন কোরবানিদাতারা
কোরবানির টার্গেট ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪০- কামাল উদ্দিন সুমন নারায়ণগঞ্জ
- ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ১৬ মে ২০২৪, ১১:৩২
ঈদের এখনো প্রায় এক মাস বাকি, এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জে কেনাবেচা শুরু হয়েছে কোরবানির পশু। তবে এসব পশু কোরবানির হাটে নয় বিভিন্ন খামারে গিয়ে ক্রেতারা নিজেদের পছন্দমতো পশু কিনে রাখছেন। খামার থেকে ঈদের এক-দুই দিন আগে কোরবানির পশু পৌঁছে যাবে ক্রেতার কাছে। ফলে নারায়ণগঞ্জের গরুর খামারগুলোয় এখন প্রতিদিনই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। কোরবানির পশু বিক্রির জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছেন নারায়ণগঞ্জের খামার মালিকরা। জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জে এবারের কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪০।
কোরবানির হাটে গিয়ে কেনার ঝামেলা এড়াতে আগাম পশু কিনে রাখছেন এমনটাই জানালেন সিদ্ধিরগঞ্জে আরকে অ্যাগ্রো ফার্মে আসা ইউসুফ আব্দুল আজিজ। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, কোরবানি হাটে গিয়ে গরু কেনার ঝামেলা অনেক। তাই আগেভাগেই এখানে এসে গরু কিনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পছন্দ হলে গরু কিনে রেখে দেব। ফার্মের মালিকপক্ষ ঈদের আগে আমাদের গরু পৌঁছে দেবেন।
একই খামারে কোরবানির পশু কিনতে আসা জালকুড়ি এলাকার বাসিন্দা পিন্টু দেওয়ান জানান, কোরবানির ঈদের একমাস বাকি তবে আমরা পছন্দের গরু আগেভাগে দেখে রাখার জন্য এসেছি। গরু পছন্দ হলেই বুকিং দিয়ে যাব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে কৃষক ছাড়াও বড় শিল্পপতিরা গরু, মহিষ ও ছাগলের খামার গড়ে তুলেছেন। কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক ছাড়াও বেশির ভাগ খামারে সারা বছর চলে পশু বেচাকেনা। তবে এক বছরের প্যাকেজে অনেক খামারে পশু মোটাতাজা করা হয়। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার খামারি রয়েছেন। তাদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার রেজিস্টার্ড ও বাকিগুলো মৌসুমি খামারি। এসব খামারে প্রায় ৬০ হাজার গরু-মহিষ ও ৪০ হাজার ছাগল-ভেড়া পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে থ্রিস্টার ফার্ম হাউজ, আরকে অ্যাগ্রো, আমানা ক্যাটেল, তানিয়া ক্যাটেল, খন্দকার ক্যাটেল, ছায়েদ আলী অ্যাগ্রো ও প্রার্থনা অ্যাগ্রো অন্যতম। জেলার বন্দর, সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, রুপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে এসব পশুর খামার। কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে খামারিরা শেষ দিকের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। কর্মীরা কেউ গরুকে খাবার দিচ্ছেন, কেউবা গোসল করাচ্ছেন, আবার কেউ গরম থেকে বাঁচাতে পশুগুলোকে পাইপ দিয়ে পানি ছিটাচ্ছেন। খামারগুলোতে অনেক ক্রেতা সরেজমিনে পরিদর্শন করে দরদাম করছেন। কেউবা ওজনে কেনার জন্য আগ্রহী হচ্ছেন। আবার কেউ ঠিকা কিনতে চাচ্ছেন। খামারিরা জানান, গরুকে খৈল, ভুসি, সাইলেজ, ভুট্টা ও ঘাস খেতে দেয়া হয়। কোনো ধরনের রাসায়নিক খাবার, হরমোন কিংবা ইনজেকশন দেয়া হয় না। তবে গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল আর কে অ্যাগ্রো ফার্মের ম্যানেজার আব্দুস ছামাদ নয়া দিগন্তকে জানান, এবার গো খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় পশুর দাম শতকরা ২০ ভাগ বাড়তে পারে। দেশি গরু ৯০ হাজার টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিদেশী গরু ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এবার দাম একটু বেশি হওয়ায় ক্রেতার সমাগম আপতত কম। তবে সামনে হয়তো বাড়বে। আমাদের প্রায় ২০ ভাগ গরু এরই মধ্যে বুকিং হয়েছে ।
দেলপাড়া এলাকার একটি খামার মালিক মঞ্জু মিয়া বলেন, আমাদের খামারে ৪০টা গরু ছিল। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেক গরু বিক্রি হয়ে গেছে। খামারে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু আছে। আর সর্বনিম্ন আছে আড়াই লাখ টাকার গরু।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মুহাম্মদ ফারুক আহমেদ গতকাল বুধবার বিকেলে নয়া দিগন্তকে জানান, নারায়ণগঞ্জে এবারের কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪০। তবে জেলার পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে না। এ ঘাটতি পূরণের জন্য পশু আমদানি করতে হবে।