রাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে রাতভর সংঘর্ষ ককটেল বিস্ফোরণ
- রাবি প্রতিনিধি
- ১৩ মে ২০২৪, ০০:৫৯
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাবি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১১ মে) রাত সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলগেট ও মাদার বখ্শ হলের মধ্যবর্তী স্থানে দুই পক্ষ অবস্থান নিয়ে এ হামলা চালায়।
এ সময় দফায় দফায় রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা হাতে একে অন্যকে ধাওয়া দিতে দেখা যায়। তবে এতে কোনো পক্ষেরই হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সংঘর্ষে জড়ানো ছাত্রলীগের দু’টি পক্ষ হলো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ।
হল ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, গেস্টরুমে বসাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত। শনিবার রাত ১০টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে নিয়াজের কয়েকজন কর্মী বসেছিলেন। এ সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে গেস্টরুমে যান। আতিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারী। এ সময় নিয়াজের অনুসারীদের কিছুক্ষণের জন্য চলে যেতে বলেন আতিক। কিন্তু নিয়াজের অনুসারীরা চলে যেতে অস্বীকৃতি জানান। পরে আতিক নিয়াজকে ফোন করে তার অনুসারীদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু নিয়াজ তার অনুসারীরা সেখানেই থাকবে বলে আতিককে জানান। কিছুক্ষণ পর নিয়াজ সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাগি¦তণ্ডা ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে আতিক তার অনুসারীদের নিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারীরা বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল গেটে এসে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের সাথে সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীরাও যোগ দেন। একপর্যায়ে নিয়াজ ও তার অনুসারীরা হলের ছাদ থেকে মিছিল নিয়ে সভাপতির অনুসারীদের ওপর ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিক্ষেপ করে হলগেট দখলে নিয়ে তালা দেন। কিছুক্ষণ পর মোস্তাফিজুর রহমান ও গালিবের অনুসারীরাও পাল্টা হামলা করে। এ সময় ছয়টি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। এ ছাড়া তাদের হাতে রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা দেখা যায়। রাতভর দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ ঘটনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চাপা আতঙ্ক কাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে যান প্রোভিসি সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) তারিকুল হাসান, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদসহ হল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের সাথে পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী হলের কিছু কিছু কক্ষে তল্লাশি চালান। এরপর রাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘হলের গেস্টরুমে আমার অনুসারীরা সাংগঠনিক কাজ করছিলেন। তখন ওই হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এসে আমার অনুসারীদের বের হয়ে যেতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নিয়াজ হলে বহিরাগত ঢুকিয়ে আমার অনুসারীদের ওপর রেললাইনের পাথর, ইট ও ককটেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।
অন্যদিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, গেস্টরুমে বসা নিয়ে প্রথমে একটু বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। পরবর্তীতে সভাপতির কয়েকজন অনুসারী এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। তবে এ ঘটনায় তার পক্ষের কেউ আহত হননি। প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, এমন একটা ঘটনা ঘটেছে এটি দুঃখজনক। দুই গ্রুপের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি কিভাবে বিষয়টি সমাধান করা যায়। আমরা দুই পক্ষেরই কথা শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে সবসময় সতর্ক। তারপরও একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছু ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে, লাঠি বা দেশীয় অস্ত্র চার্জ হয়েছে সেগুলো আমরা শুনেছি ও দেখেছি। তবে হলের মধ্যে যখন আমরা গেলাম তখন এ ধরনের কোনো নমুনা পাইনি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে মতিহার থানার ডিসি মধুসূদন রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যেন স্বাভাবিক থাকে এবং পড়াশোনার পরিবেশ বজায় থাকে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেন নির্ভয়ে পড়াশোনা করতে পারে সেই লক্ষ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে একসাথে কাজ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ চাইলেই সহজে এসে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি কোনো সহযোগিতা লাগে আমরা সর্বদা তৎপর। শনিবার রাতের ঘটনায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে এক হয়ে কাজ করেছি। এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা