রোমানিয়াগামী ১০ হাজার কর্মীর বেশির ভাগের চাহিদাপত্র সঠিক নয়
প্রতারিত হচ্ছেন কর্মীরা টাস্কফোর্স নীরব- মনির হোসেন
- ০৫ মে ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ০৫ মে ২০২৪, ০৫:৪০
ঢাকার বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি অনলাইনে রোমানিয়ান কোম্পানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা চাহিদাপত্রের মধ্য বেশির ভাগ সঠিক না-ও হতে পারে বলে মনে করছেন রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী।
সম্প্রতি তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাহিদাপত্র নিয়ে এমন আশঙ্কার কথা নয়া দিগন্তের কাছে বলেন। তবে এসব বিষয় নিয়ে তারা কাজ করছেন। খুব শিগগিরই একটি সার্কুলার জারি হতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এই মুহূর্তে ঢাকার বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এজেন্সির লাইসেন্স ব্যবহার করে রোমানিয়ার বিভিন্ন কোম্পানির নামে শত শত চাহিদাপত্র টাকা খরচ করে নিয়ে এসেছেন। এরপর তারা এসব চাহিদাপত্রের বিপরীতে কর্মীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ও নগদ টাকা নিজেদের হেফাজতে নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশকেই (কর্মী) রিক্রুটিং এজেন্সি না পাঠিয়ে শুধু তারিখের পর তারিখ দিচ্ছেন। এভাবে কারো ছয় মাস কেটে গেলেও বিদেশ যাওয়ার খবর নেই। অনেকের আবার এক থেকে দুই বছর কেটে গেলেও রোমানিয়াগামী ফ্লাইটের তারিখ পড়ছে না। এ অবস্থায় কেউ কেউ হতাশ হয়ে পাসপোর্ট ফেরত নিতে পারলেও জমা দেয়া টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। যারা পাচ্ছেন তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। আবার অনেকে ঝামেলায় জড়াতে না চাওয়ায় নীরবে টাকার মায়া ছেড়ে দিচ্ছেন।
এমন অভিযোগ প্রায়ই ঘটলেও এ নিয়ে বিএমইটি ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স নীরব ভূমিকায় রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল (শনিবার) ঢাকার দু’টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়ার শ্রমবাজারটিতে প্রতারক চক্র ঢুকে পড়ায় অনেকে বিদেশ যাওয়ার আগেই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। কিন্তু এসব ব্যপারে আমাদের মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নীরব। এই সুযোগে অনেকে ভুয়া চাহিদাপত্র এনে বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকে দালালদের কাছ থেকে স্থানীয়ভাবে সালিস বৈঠক করে জমা দেয়া টাকার একটি অংশ তুলতে পারছেন।
এজেন্সি মালিকদের ধারণা, সঠিক-বেঠিক মিলিয়ে বর্তমানে আট-দশ হাজার কর্মীর নামে রোমানিয়ান কোম্পানির চাহিদাপত্র রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোতে রয়েছে।
তবে কোনো কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের দাবি, কাদের আনা চাহিদাপত্র সঠিক না এটা রিক্রুটিং এজেন্সি নয়, এটা রোমানিয়ান নিয়োগকারী কোম্পানি অথবা দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ বলতে পারবে। আর বলতে পারবে রোমানিয়ায় থাকা আমাদের বাংলাদেশ দূতাবাস।
রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলীর সাথে সম্প্রতি এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, যারা রোমানিয়ায় এসে অন্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় অথবা পালানোর সংখ্যা কিভাবে কমানো যায় এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।
ঢাকায় কমপক্ষে ১০ হাজার কর্মীর নামে চাহিদাপত্র রয়েছে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে। এগুলোর কতগুলো সঠিক?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ধারণা ও জানা মতে, যার (কোম্পানি) লোক দরকার ১০ জনের তারা চাহিদাপত্র দিয়ে রেখেছে ২০০-৩০০ জন কর্মীর নামে। কেন দিয়ে রেখেছে- কারণ চাহিদাপত্র দিলেই তো কিছু টাকাপয়সা নেয়া যায়। ‘তাই এটাই যৌক্তিক, জেনুইন চাহিদাপত্র এটা আমি মনে করি না।’ এসব নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমাদের সচিব মহোদয়ের সাথে, এখানকার স্টেকহোল্ডারদের সাথে মিটিং করেছি। অফিসিয়ালি অর্ডার না হলে ফাইনালি এটা বলতে পারছি না। আশা করছি খুব শিগগির এ নিয়ে একটি সার্কুলার জারি হবে। এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দূতাবাস এটা (চাহিদাপত্র) ভেরিফাই করে না দেবে নিয়োগকারী কোম্পানিগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারবে না।