১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় বিদায় নিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী

বনানী কবরস্থানে দাফন
-

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীকে ভালোবাসা ও ফুলেল শ্রদ্ধায় বিদায় জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। দীর্ঘ সাড়ে চার দশকের কর্মস্থল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরবিদায় নিলেন তিনি। নামাজে জানাজায় অংশ নিয়ে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাকে শেষ বিদায় জানান হাজারো আইনজীবী ও বিচারপতিরা।
গতকাল শনিবার বাদ আসর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মরহুমের জানাজায় অংশ নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, তিনি এমনই এক পরিবারের সন্তান, যার বাবা বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্টও ছিলেন এবং তিনিও অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এটি আর পাবেন কি না বলা মুশকিল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এম এইচ খন্দকারকে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ করেন। তারই সন্তান এই মোহাম্মদ আলী সাহেব। এ জে মোহাম্মদ আলীর সাথে আমার অনেক স্মৃতি। তিনি নিতান্ত একজন ভদ্রলোক ছিলেন। অত্যন্ত বড় মাপের মানুষ ছিলেন।
এ সময় তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক যেসব সভাপতি মৃত্যুবরণ করবেন তাদের লাশ যেন সুপ্রিম কোর্ট বারে আনা হয়, সে উদ্যোগ নিতে তিনি পরামর্শ দেন।
এ ছাড়া এ জে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে রোববারের আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে প্রধান বিচারপতির কাছে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অনুরোধ জানালে প্রধান বিচারপতি বলেন, রোববার কোর্ট বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
জানাজায় প্রবীণ আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, তিনি অত্যন্ত উঁচু মাপের ব্যক্তি ও আইনজীবী ছিলেন। তার বক্তব্য আইনের প্রতি শ্রদ্ধা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে যুগ যুগ ধরে থাকবে।
মরহুমের দীর্ঘ দিনের সহকর্মী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহসভাপতি মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, তিনি অত্যন্ত প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন। আমরা একই সাথে লেখাপড়া করেছি। একজন ভালো মানুষ, এক্সসিলেন্ট পারসন ছিলেন তিনি।
বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, গত ৩ এপ্রিল ছিল এ জে মোহাম্মদ আলী স্যারের শেষ কর্মদিবস। ওই দিন তিনি শিশু নুরজাহান নূরীর ও আকলিমার মা হাফসা আক্তারের জামিন আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে তার সারাদিন কেটে যায়। তিরি সারা জীবন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
গতকাল বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এ জে মোহাম্মদ আলীর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক ও বর্তমান বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, প্রবীণ আইনজীবী আবদুর রেজাক খান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক শাহ মনজুরুল হক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিত্ব এবং মরহুমের আত্মীয়স্বজন।
জানাজার আগে মরহুমের ছেলে ও মেয়ে তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বনানী কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজার আগে এ জে মোহাম্মদ আলীর জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক। স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতা করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। জানাজা শেষে প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ জে মোহাম্মদ আলীর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
প্রথিতযশা আইনজীবী আবদুল জামিল (এ জে) মোহাম্মদ আলী বৃহস্পতিবার দুপুরে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। চিকিৎসার জন্য গত ২৮ এপ্রিল সকালে তিনি বাংলাদেশ ছাড়েন। শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় এ জে মোহাম্মদ আলীর লাশ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আনা হয়। এ ছাড়া গতকাল বাদ জোহর ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদে মরহুম এ জে মোহাম্মদ আলীর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির শ্রদ্ধা, জানাজায় জামায়াতের অংশগ্রহণ
এ দিকে সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর কফিনে বিএনপির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার তাকওয়া মসজিদে প্রাঙ্গণে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ শ্রদ্ধা জানান। এ সময় রিজভী বলেন, দেশের এ সঙ্কটময় মুহূর্তে এ জে মোহাম্মদ আলীর মতো একজন বরেণ্য আইনজীবীর মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। আইনের শাসন, গণতন্ত্রের পক্ষের এবং ন্যায়বিচারের আন্দোলনের সপক্ষের আইনজীবী ছিলেন তিনি। বর্তমান এ দুঃসময়ে তার মতো একজন প্রতিভাবান আইনজীবীর বড় প্রয়োজন ছিল।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা: ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফজাল এইচ খান, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা: মো: রফিকুল ইসলাম, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, যুবদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম সান্ত, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি তারেক উজ জামান তারেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।
এ ছাড়া নামাজে জানাজায় জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দের মধ্যে অংশ নেন আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমির আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement