সূচক ফেরায় মূলধন ফিরেছে ৬ হাজার ২৩০ কোটি টাকা
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৪ মে ২০২৪, ০২:১৩
- শেয়ারের বিক্রেতা থাকলেও কেনার মতো ছিল না তেমন
- বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যালস ও টেক্সটাইল সেক্টর খাতে
এক ধরনের অস্থিরতাতেই রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। হুজুগ ও গুজব এই পুঁজিবাজারকে বেশ আকর্ষণ করে। যার কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের পুনঃনিয়োগের খবরকে কেন্দ্র করে বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। নিয়োগের পরের দিনই আবার বাজার পতনের সাথে হাত মেলায়। শেষের দিকে এসে পুঁজিবাজার ইতিবাচক পথে ফেরায় ডিএসইর বাজারমূলধনে নতুন করে ০.৮৯ শতাংশ বা ৬ হাজার ২২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ফিরেছে। একমাত্র এসএমই সূচক ছাড়া সব সূচকই উল্লেখ করার মতো পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে এর স্থায়িত্ব। বাজার ইতিবাচক পথে ফিরলেও শেয়ারের ক্রেতা নেই। বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে (২৪.১ শতাংশ)। তারপরে টেক্সটাইল সেক্টর (১৪.২ শতাংশ) এবং ফুড সেক্টরে (১১.৯ শতাংশ)। এর মধ্যে বেশির ভাগই লাইফ ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে (৬.৯ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি মুনাফা পেয়েছে।
সপ্তাহের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ঢাকা স্টকের সব সূচকেই পয়েন্ট ফিরেছে। গত বছর এই সময়ে ডিএসইর সব সূচকই নেতিবাচক ছিল। শুধু এসএমই সূচক ছিল ইতিবাচক পথে। ডিএসইর ব্লক মার্কেটে পুরো সপ্তাহে মোট ২৯৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে। আর এসএমই মার্কেটে ৪৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। লেনদেন গড়ে বেড়েছে ২৭.৬৬ শতাংশ। ডিএসইএক্স সূচক ৯৭.১৭ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ৩৩.৩৫ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ১৫.১৬ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। তবে এসএমই সূচক থেকে ২৫.৭৯ পয়েন্ট চলে গেছে।
পুরো সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধিতে ছিল ২২৮টি, দরপতনের শিকার ১৩৩টি, অপরিবর্তিত ছিল ৩৪টি এবং ১৭টি লেনদেনে অংশ নেয়নি। বাজারমূলধন ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এখন সাত লাখ ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকায় রয়েছে। ডিএসই বলছে, গেলো সপ্তাহে টাকায় লেনদেন বেড়েছে ব্যাংক, আইটি, সিরামিকস, করপোরেট বন্ড, ফার্মাসিউটিক্যালস, রিয়েলস্টেট, চামড়া, বস্ত্র, ভ্রমণ ও বিবিধ খাতের কোম্পানির শেয়ারে। কমেছে সিমেন্ট, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সাধারণ বীমা, মিউচুয়াল ফান্ড, টেলিকম খাতের কোম্পানির।
এ সময়ে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ১০ কোম্পানির সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। হলোÑ আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, লাভেলো আইস্ক্রিম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকে বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), ওয়ালটন হাইটেক, ওরিয়ন ইনফিউশন, বিএসআরএম লিমিটেড ও ন্যাশনাল পলিমার। এসব কোম্পানির ২২০ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
আর কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্লক মার্কেটে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের। প্রতিষ্ঠানটির মোট ৬২ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ দর ছিল ১২২ টাকা ৫০ পয়সা। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৫৪ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ দর ছিল ২৩ টাকা ৮০ পয়সা। উত্তরা ব্যাংকের ২০ কোটি ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ২৬ টাকা। ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া অন্য সাতটি কোম্পানির মধ্যে- লাভেলো আইস্ক্রিমের ১৯ কোটি ১৮ লাখ টাকার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার, বিএটিবিসির ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার, ওয়ালটন হাইটেকের ৯ কোটি ৬৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকার, ওরিয়ন ইনফিউশনের ৯ কোটি ১৩ লাখ ১০ হাজার টাকার, বিএসআরএম লিমিটেডের ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার টাকার এবং ন্যাশনাল পলিমারের ৮ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম স্টকে সব সূচকই সপ্তাহান্তে গড়ে ১৫০ পয়েন্টের বেশি ফিরে পেয়েছে। সিএএসপিআই সূচক ২৩৫.৬৪ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২৪০.৭৫ এবং সিএসসিএক্স ১৪২.৫৭ পয়েন্ট বেড়েছে। পুরো সপ্তাহে ১৮৩ কোটি ৬৭ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ছয় কোটি ২৬ লাখ ২১ হাজার ৭৫৪ টাকা বাজারমূল্যে। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩০৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৬টির, কমেছে ১৩৩টির এবং দর অপরিবর্তিত ২৫টির। জেড শ্রেণীর শেয়ারের দাপটেরও পতন হয়েছে। এ শ্রেণীর শেয়ারের দাপট ছিল ৫৯.৫৬ শতাংশ, বি শ্রেণীর ৩৬.২০ শতাংশ, এন শ্রেণীর ৩.৯৪ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর ছিল ০.৩০ শতাংশ।
এ দিকে ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণায় দেখা যায়, এখানে ১৭ খাতে মুনাফায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। একই সময়ে প্রকৌশল খাতে ০.৪০ শতাংশ এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ২.৪০ শতাংশ দর কমেছে। এর ফলে লোকসানে রয়েছে এই দুই খাতের বিনিয়োগকারীরা। শুধু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে। এই ২ খাতে ৬.৯০ শতাংশ করে দর বেড়েছে। চার শতাংশ দর বেড়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। একই সময়ে ৩ শতাংশ দর বেড়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে চামড়া খাত। অন্য খাতগুলোর মধ্যেÑ পাট খাতে ২.৪০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ২.৩০ শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতে ১.৭০ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ১.৬০ শতাংশ, সিরামিক খাতে দেড় শতাংশ, জেনারেল ইন্স্যুরেন্স খাতে দেড় শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১.৩০ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশন খাতে এক শতাংশ, আর্থিক খাতে ০.৯০ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ০.৮০ শতাংশ, বিবিধ খাতে ০.৭০ শতাংশ, প্রকাশনা খাতে ০.৬০ শতাংশ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ০.৪০ শতাংশ দর বেড়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা