১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


কর ছাড় বাদ দিলে ৪ বছরে বাড়তি ৬০ হাজার কোটি টাকা আয় সম্ভব

অটোমেশন ছাড়া রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব নয় : অর্থ প্রতিমন্ত্রী
-

সংস্কারমূলক পদক্ষেপের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু কর ছাড় পর্যায়ক্রমে বাদ দিলে আগামী চার বছরে অতিরিক্ত ৬০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। একই সাথে মধ্যমেয়াদে আর্থিক খাতে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারলে ২০৪১ সাল নাগাদ ৪৯ লাখ কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আয় হবে। আর এ সময়ে ব্যাপক সংস্কার বাস্তবায়ন না করলে ৫০ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতিতে পড়বে সরকার।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর প্রয়োজনীয় রূপরেখা সংক্রান্ত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেছেন, অটোমেশন রাজস্ব ছাড়া রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব নয়। আর বাংলাদেশের ইনফরমাল সেক্টর অনেক বড়, এ খাত থেকেও অনেক কর আদায় করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে মনসুর বলেন, বর্তমানে দেশে কর-জিডিপি’র অনুপাত মাত্র সাত দশমিক ৬ শতাংশ। যা কিনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। এটি সোমালিয়া ও কঙ্গোর কাছাকাছি অবস্থান করছে। যদি সংস্কার না করা হয়, তবে এই অনুপাত আগামীতে আরো কমবে। আর কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে থাকলে কখনো উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়া যাবে না।

কিন্তু আহসান মনসুরের এই কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম বলেন, সবাই কর-জিডিপি অনুপাত নিয়ে নানা হতাশার কথা বলেন। কিন্তু আমি এ নিয়ে মোটেও হতাশ নই। আর কর-জিডিপি অনুপাত নিয়ে সোমালিয়া বা কঙ্গোর সাথে তুলনা করলেও চলবে। তুলনা করতে হলে তাদের সাথে আরো কিছু প্যারামিটার নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট দেশের রাজস্ব উৎস সম্পর্কে খতিয়ে দেখতে হবে। যেমন মালদ্বীপের কর-জিডিপির অনুপাত অনেক বেশি। কারণ তাদের রাজস্বের বেশির ভাগ পর্যটন থেকে আসে। কিন্তু আমাদের দেশে তা সম্ভব নয়।
মূল প্রবন্ধে আহসান এইচ মনসুর বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে এক লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় তারা নতুন করে টাকা ছাপাবে না। দেশের ব্যাংক খাতে এ বছর সব মিলিয়ে দেড় লাখ কোটি টাকার মতো আমানতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ফলে ব্যাংক খাতের পুরো অর্থ সরকারের বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজন হলে ব্যক্তি উদ্যোগের কী হবে, এই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আহসান এইচ মনসুরের এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘আমি মনে করি, বেশি ঋণ নেয়া ভালো জিনিস। যত বেশি ঋণ নেয়া হবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তত বাড়বে।’
পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক বলেন, স্বল্পমেয়াদে আর্থিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য কর রাজস্ব বৃদ্ধি করা অপরিহার্য সংস্কারমূলক পদক্ষেপের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু কর ছাড় পর্যায়ক্রমে বাদ দিলে চার বছরে ৬০০ বিলিয়ন বা ৬০ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। তবে ব্যাপক সংস্কার বাস্তবায়ন না করলে ২০৪১ সালের শেষ হওয়া অর্থবছরে প্রায় ৫০ ট্রিলিয়ন ৫০ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হবে।

মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, সরকারি ব্যয়ের শতাংশ হিসাবে কর রাজস্ব হ্রাস, ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা এবং ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। কারণ সময়ের সাথে সাথে সুদের অর্থপ্রদান, ক্রমবর্ধমান মজুরি, ভর্তুকি ও পেনশন প্রদানের চাপসহ মানবসম্পদ এবং সামাজিক সুরক্ষার ব্যয়ের চাপ বাড়বে। আইএমএফের সাপোর্ট বাংলাদেশকে আর্থিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করছে, তবে রাজস্ব না বাড়ালে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতার উন্নতি হবে না।
এতে আরো বলা হয়, মধ্যমেয়াদি আর্থিক সংস্কারের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক কর নীতি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং ভ্যাট সংস্কার, কর প্রশাসনের প্রযুক্তি আধুনিকরণসহ সম্পদ করনীতি তৈরি করতে হবে। একই সাথে সময়ের সাথে সাথে বাণিজ্য করের ওপর নির্ভরতা কমানো হবে।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। এ ছাড়া ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আশরাফ আহমেদ, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বক্তব্য রাখেন।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, গত পাঁচ বছরে ১২০ ধরনের করছাড় দিয়েছে সরকার। এভাবে ব্যবসা ও শিল্পে সুবিধার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরে করছাড় দেয়া হচ্ছে। তবে ২৫ বছর ধরে (দীর্ঘ দিন) এমন সুবিধা থাকা উচিত নয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে কথা বলেন পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। রাজস্ব সংগ্রহে বাণিজ্য করের ওপর বিশেষ আলোচনা করেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল