১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মৎস্য বিভাগের মারধরে নদীতে নিখোঁজ জেলের লাশ ২২ ঘণ্টা পর উদ্ধার

-

বরগুনার পাথরঘাটা সংলগ্ন বিষখালী নদীতে বরগুনা সদর মৎস্য বিভাগের আবৈধ খুঁটি অপসারণ অভিযানের সময় মারধরের ২২ ঘণ্টা পরে নিখোঁজ জেলে রিপনের (৪১) লাশ উদ্ধার হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে বিষখালী নদীর কালমেঘা টুলু পয়েন্টর পাশে ভাসমান রিপনের লাশ উদ্ধার করে জেলেরা। কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম নাসির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) রাত আড়াইটার দিকে বিষখালীর নদী থেকে বরগুনা সদর মৎস্য বিভাগ তাকে ট্রলারে তুলে নিয়ে যায়। পরে সকাল ৯টার দিকে জেলে রাসেল ও দেলোয়ার রিপনের কথা জানতে চাইলে তাদের বেধড়ক মারধর করে এবং রিপনের নদীতে ঝাঁপ দেয়ার কথা জানায় মৎস্য বিভাগ। নিহত জেলে রিপন উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের দক্ষিণ কূপধোন গ্রামের মো: আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। আহত মো: রাসেল একই এলাকার নুরু মোল্লার ছেলে এবং দেলোয়ার হোসেন, সুলতান হাওলাদারের ছেলে।

জানা গেছে, রাত দেড়টার দিকে রিপনের লাশ উদ্ধর করে কালমেঘা টুলু পয়েন্টে নিয়ে এলে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ এ ঘটনায় জড়িত বরগুনা মৎস বিভাগের কর্মকর্তাদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, বরগুনা জেলা পরিষদের সদস্য এনামুল হোসাইন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম নাসিরসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
আহত দুই জেলে জানান, প্রতিদিনের মতো রিপনসহ তারা দু’টি ট্রলার নিয়ে বিষখালী নদীতে মাছ ধরার জন্য যায়। রাত আড়াইটার দিকে স্পিডবোট নিয়ে বরগুনা সদর মৎস্য বিভাগ অবৈধ খুঁটি অপসারণের জন্য সেখানে অভিযানে আসেন। তখন ওই দু’টি ট্রলারকে ধরে সেখানে থাকা জেলেদের মারধর করেন এবং জেলে রিপনকে তাদের স্পিডবোটে তুলে নিয়ে যান। স্পিডবোটে রিপনকে মারধরের একপর্যায়ে নদীতে ঝাঁপ দিলে পরবর্তী সময়ে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে সকাল ৯টার দিকে তাদের ট্রলারে কাছে স্পিডবোট আসে। এ সময় রিপনের কথা জানতে চাইলে মৎস্য কর্মকর্তারা তাদের বাঁশ ও লাঠি দিয়ে মারধর করে ছেড়ে দেন এবং রিপন নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে বলে জানিয়ে তারা চলে যান।
স্থানীয় তাওহীদ, দীপু ও রুম্মান হোসাইন জানান, নদী থেকে ফিরে আসা জেলেদের কাছ থেকে আমরা বিপনের নিখোঁজ হওয়ার কথা জানতে পারি। এরপর আমরা বিষখালী নদীর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে রিপনকে খোঁজ করি। জোয়ার শুরু হলে আবার শুক্রবার রাত ১০টার দিকে একযোগে ২০টি ট্রলারে নিয়ে অনুসন্ধানে নামি। রাত ১২টার দিকে কালমেঘা টুলু পয়েন্টের কাছের একটি বনের ভেতর রিপনের লাশ দেখি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম নাসির জানান, লাশের সন্ধান পাওয়ার পর পাথরঘাটা থানায় জানালে রাত দেড়টার দিকে পুলিশ বিষখালী নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে।
পাথরঘাটা থানার পরিদর্শক সাইফুজ্জামান জানান, লাশ উদ্ধার করে পাথরঘাটা থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে।
অভিযান পরিচালনার কথা স্বীকার করলেও জেলেকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বরগুনার সদর মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাচান জানান, আমরা শ্রমিকদের সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি এবং নদীতে থাকা খুঁটি অপসারণ করেছি। জেলে নিখোঁজ ও মারধরের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বরগুনা সদর মৎস্য বিভাগ বৃহস্পতিবার রাতে বিষখালী নদীতে অবৈধ খুঁটিগুলো অপসারণের জন্য একটি অভিযান পরিচালনা করে। তবে কোনো জেলেকে মারধর বা আটক করা হয়নি। তাদেরকে যে মারধর করা হয়েছে- এটা সত্য নয়। স্থানীয় লোকের মাধ্যমে মুঠোফোনে মারধর এবং নিখোঁজের কথা শুনেছেন। বিষয়টি বরগুনা জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement