ইউরোপ ও কিরগিজস্তানগামী শ্রমিকদের বহির্গমন ছাড়পত্রে অনিয়ম
- মনির হোসেন
- ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৬
মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তান ও ইউরোপে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এরইমধ্য দেশগুলোতে কর্মী যাওয়াও শুরু হয়েছে। তবে পাড়ি জমানো কর্মীদের সঠিক চাকরি, থাকা, খাওয়ার নিশ্চয়তা আদৌ আছে কি না- এ নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের শঙ্কা। তবে কিরগিজস্তানগামী কর্মীদের খোঁজ নেয়ার জন্য পাশের দেশ উজবেকিস্তানে থাকা বাংলাদেশ মিশন থেকে সত্যায়ন দেয়ার কার্যক্রম চলছে। নতুন এই শ্রমবাজারে যাতে বৈধভাবে বেশি বেশি শ্রমিক যেতে পারেন, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন এই পেশার ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে ভিসা করে ওয়ানস্টপে আবেদন জমা দেয়ার পর অনেকে হয়রানি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়ানস্টপ সার্ভিসে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের একক ভিসার বিপরীতে বহির্গমন ছাড়পত্রের যে শত শত আবেদনের ফাইল জমা পড়ছে, সেগুলো নানা সমস্যায় আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে যারা বহির্গমন বিভাগের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীকে ‘বিকাশে/নগদে’ লেনদেন ঠিক রাখতে পারছেন, তাদের ফাইল নানা কৌশলে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এটি গোয়েন্দাদের দিয়ে মনিটরিং করালে থলের বেড়াল বের হয়ে আসবে বলে সচেতন ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কাকরাইল এলাকার একটি জনশক্তি অফিসের স্বত্বাধিকারী নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএমইটিতে সৎ এবং ভালো কর্মকর্তাদের আসলে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয় না। তাদের নিয়ে বেশি টানাটানি করা হয়। তিনি বলেন, আমি এ নিয়ে এর বেশি কিছু বলতে চাই না। বুঝলে আমার এই কথায় সবাই বুঝে নেবে। এরইমধ্যে ডিজি মহোদয় দু’দিন পরপর নিজের খেয়াল খুশি মতো কর্মকর্তা কর্মচারী বদলি করছেন। এতে আমরা দেখছি কাজের গতি কমছে।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রবাসী’ অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে ওয়ানস্টপ সার্ভিসে বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত যতগুলো আবেদন জমা পড়েছে তার একটির ছাড়পত্র হয়নি বলে জানি। কেনো দিচ্ছেন না জানতে চাইলে ওই এজেন্সি মালিক বলেন- এটা তাদের মর্জি। তবে যারা নগদ টাকা দিচ্ছে তাদেরটা কেমনে জানি হয়ে যাচ্ছে। আমিও ওইসব ঝামেলায় না গিয়ে কিরগিজস্তানের তিনজন কর্মীর ফাইল (প্রতিজন ৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত) করে নিয়ে এসেছি! মোটকথা টাকা দিলেই ফাইল ছাড়ছে বহির্গমন শাখা থেকে। কয়েক দিন আগেও আমাদের ফাইল ক্লিয়ার করতে কোনো টাকা লাগেনি। এগুলো আমাদের ঊর্ধ্বতনরা কি দেখেন না?
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ বছর ১৫ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর টার্গেট নিয়েছে। কিন্তু পুরনো শ্রমবাজার মালয়েশিয়া বন্ধসহ শ্রমবাজার যেভাবে সঙ্কুচিত হচ্ছে, তাতে তাদের টার্গেট পূরণ করা নিয়ে বিশ্লেষকরা সন্দিহান রয়েছেন।
গতকাল ইউরোপের শ্রমবাজারে কর্মী পাঠিয়ে আলোচনায় আসা একজন জনশক্তি ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে বলেন, মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তানে গার্মেন্ট ও নির্মাণ খাতে অনেক লোকের চাহিদা আছে। এখানে থাকা খাওয়া বাদে একজন শ্রমিক ৪০০ ইউএস ডলার উপার্জন করতে পারবেন। এই শ্রমবাজারটির সত্যায়ন দিয়ে থাকে উজবেকিস্তানে থাকা আমাদের মিশন। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এই শ্রমবাজারটির উপর নজর দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তাই ভিসা আনার পর যাতে বিএমইটি থেকে দ্রুত ও ঘুষ ছাড়া ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হয় সেদিকে যেনো নজরদারি করা হয়। একই সাথে বিএমইটির সার্বিক কর্মকাণ্ড যেন মনিটরিংয়ের মধ্য রাখা হয় সে ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে গতকাল রাত ৭টা ৩২ মিনিটে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) ছাদেক আহমদের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন রিসিভ না করে লাইন কেটে দেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা