০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভারতীয় পণ্য বর্জনের সমর্থনে লন্ডনে ইন্ডিয়া হাউজ অবরোধ

-


জিবিএএইচআর মানবাধিকার সংস্থার আয়োজনে ইংল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা গত সোমবার লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশন (ইন্ডিয়া হাউজ) অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। গ্লোবাল বাংলাদেশিজ অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস (জিবিএএইচআর) লন্ডনে কমিউনিটিভিত্তিক ২১টি মানবাধিকার সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম এই সমাবেশ আহ্বান করে।
বিক্ষোভ চলাকালে নরেন্দ্র মোদি ও আদানির মুখোশসংবলিত প্রতিকৃতিতে বিক্ষোভকারীরা তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেন।
সোমবার দুপুর ১২টা থেকেই সেন্ট্রাল লন্ডনের টেম্পল এলাকায় ইন্ডিয়া হাউজের সামনে পুরো অল্ডউইচ এলাকাজুড়ে বাংলাদেশীদের জমায়েত শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই সমাবেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীদের বিক্ষোভে গোটা এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবিতে সমাবেশকারীরা ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শংকর বরাবরে হাইকমিশনের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা। বিক্ষোভে সভাপতিত্ব করেন জিবিএএইচআর আহ্বায়ক ও লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন।
বিক্ষোভে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ও ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের উদ্যোক্তা ড. পিনাকী ভট্টাচার্য ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর।
ড. শহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে যে সাহায্য করেছে তাতে আজকের ভারত হটাও আন্দোলন অভাবনীয়। কিন্তু ভারত তার পাশের দেশগুলোর সাথে বিশেষ করে বাংলাদেশের সাথে যে ব্যবহার করে আসছে তাতে ধারণা পরিষ্কার হয়ে যায়। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে যেভাবে ভারত সাহায্য করে আসছে দিনের পরে দিন, তাতে কোনো দেশের জনগণের পক্ষেই ভারতকে সম্মানের জায়গায় বসিয়ে রাখা সম্ভব নয়। অবৈধ সরকারকে সাহায্য করার জন্য ভারত আমাদের দেশের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন অবৈধ চুক্তির বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নিচ্ছে বিনা পয়সায় ট্রানজিট চুক্তি। লাখ লাখ অবৈধ ভারতীয় কাজ করছে বাংলাদেশে। বিনিময়ে দিচ্ছে সীমান্তে বাংলাদেশীদের লাশ। এমনকি এই স্বাধীনতা দিবসেও ভারত আমাদের দিয়েছে দু’জনের লাশ।
আমাদের দেশের অবৈধ মন্ত্রীরা বলছে ভারতের সাথে আমাদের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক। সেটা যে গৃহ নির্যাতন সেটা আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝে গিয়েছি। এটা পরিষ্কার যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান ভারত তা বাংলাদেশীরা বুঝে গিয়েছে। ভারতীয় ‘র’ যেভাবে বাংলাদেশকে চালাচ্ছে, তা আজ বাংলাদেশীরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।

পিনাকী ভট্টাচার্য ভার্চুয়াল বক্তব্যে বলেন, আমাদের এই কর্মসূচি ধারাবাহিক থাকবে এবং ভারত যদি আমাদের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় তাহলে অতি সত্বর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিরপেক্ষতার উদাহরণ দেখাতে হবে। না হয় আমাদের আন্দোলন শুধু ভারতীয় পণ্য বর্জন নয়, বাংলাদেশ থেকে সব ভারতীয় স্বার্থ উচ্ছেদ করা হবে।
নুরুল হক নুর বলেন, বাংলাদেশের নিপীড়িত মানুষ তার রক্তাক্ত সীমান্ত ও অধিকৃত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে ফিরে পেতে প্রয়োজনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়ার জন্য প্রস্তুত। ভারতকে দায়িত্বশীল ভূমিকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু পণ্য বর্জন নয়, ভারতের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি বাস্তবায়নে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে শামসুল আলম লিটন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করা হচ্ছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে নরেন্দ্র মোদি আর বাংলাদেশের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহন করতে হবে। দিল্লি যদি একটি ফ্যাসিবাদী দলের জন্য বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে তার সমর্থন অব্যাহত রাখে, তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আগামী ১০০ বছর তার জবাব দিতে থাকবে। বন্ধুত্বের জবাব বন্ধুত্ব। শত্রুতার জবাবে বন্ধুত্ব হয় না। এই সত্য দেরি হওয়ার আগেই দিল্লি উপলব্ধি করবে বলে আমরা আশাবাদী হতে চাই। অন্যথায় ভারতীয় পণ্যের পাশাপাশি চিরদিনের জন্য বাংলাদেশকে ভারতীয় প্রভাবমুক্ত করা হবে। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশ পাকিস্তানকে গুডবাই দিয়েছিল। দিল্লিকেও অচিরেই গুডবাই দেয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক ও কলামিস্ট রাকেশ রহমান ও সিনিয়র ফেলো রুপম রাজ্জাকের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র ফেলো ও সিনিয়র ড্যাটা ইঞ্জিনিয়ার রুপম রাজ্জাক, ব্যারিস্টার জাকির হাসান, টিভি সাংবাদিক শেখ মুহিতুল রহমান বাবলু, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই-এর মুসলিম খান, ফাইট ফর রাইট ইন্টারন্যাশনালের বোরহান উদ্দিন চৌধুরী, মহিলা নেত্রী অন্জনা আলম, তাসলিমা তাজ, জাহানারা আক্তার শিমলা, মানবাধিকার সংগঠন ইআরআইর সম্পাদক নওশিন মুস্তারি মিয়া, অ্যাডভোকেট সুফিয়া পারভীন, সাংবাদিক মিনহাজুল আলম মামুন, তোবারক হোসেন, মিশুক হোসেন ও হাসনাত আরিয়ান খান প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement