পথচারীদের জন্য অভিশাপে পরিণত যাত্রাবাড়ী মোড়
- আবু সালেহ আকন
- ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
যাত্রাবাড়ী মোড়। মানুষের জন্য এখন অভিশাপ। পথচারী, ব্যবসায়ী, স্থানীয় বাসিন্দা, সবার কাছে এখন আতঙ্কের নাম ওই মোড় পারাপার। অপর দিকে কিছু পুলিশ, স্থানীয় মাস্তান আর চাঁদাবাজদের জন্য এই মোড়টি এখন আশীর্বাদ। দিন নেই, রাত নেই, শুক্রবার, আর শনিবার নেই; প্রতিক্ষণই পথচারীদের জন্য ভয়ের স্থান এই যাত্রাবাড়ী মোড়। এই মোড়ের চক্করে পড়ে পথচারীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। মোড়ের সড়কের বড় বড় গর্তে পড়ে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। অপর দিকে পরিবহন কাউন্টার, অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ড, ফুটপাথের বাজার থেকে একশ্রেণীর লোক কামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। গত কয়েকদিন সরেজমিন ঘুরে এমনই চিত্র মিলেছে যাত্রাবাড়ী মোড়ের।
সরেজমিন দেখা গেছে গোলচক্করের চার দিক ঘিরে গড়ে উঠেছে লেগুনা স্ট্যান্ড, বাস কাউন্টার, অবৈধ পার্কিং, আর বাজার। ফুটপাথ থেকে সেই বাজার এখন রাস্তার উপরও বসেছে। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা রোডের দু’পাশেই অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ড। এই গাড়িগুলো যাত্রাবাড়ী মোড় হয়ে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার, আর কোনাপাড়া পর্যন্ত আসা-যাওয়া করে। দু’পাশ মিলে অন্তত চার-পাঁচ শ’ গাড়ি রয়েছে। রাস্তার দু’পাশেই লাইন দিয়ে এই গাড়িগুলো পার্কিং করে রাখা হয়। স্থানীয় সূত্র বলেছে, এই গাড়িগুলোর কারণে যাত্রাবাড়ীর কাঁচামালের আড়ত থেকে মোড় পর্যন্ত দু’পাশের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখা যায় না। এটি যাত্রাবাড়ী থানার পেছন পাশের অবস্থা। মোড়ের সিগন্যাল আর এই গাড়িগুলোর কারণে দিন-রাত এই রাস্তায় যানজট লেগে থাকে। এমনকি, অনেকদিন গভীর রাত পর্যন্ত মোড় থেকে কাজলার পাড় পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। অনেকসময় এই যানজট মৃধাবাড়ী পর্যন্ত চলে যায়।
মোড় হয়ে পোস্তগোলার দিকের রাস্তায় দিনভর যানজট লেগে থাকে। এখানে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াত করে এমন প্রায় প্রতিটি পরিবহনের কাউন্টার গড়ে উঠেছে। এই কাউন্টারের সামনে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো হয়। যে কারণে পথচারীদের জন্য এখন রাস্তাটি এক অভিশাপ। পরিবহন কাউন্টারগুলোর একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে গাড়ি থামানো হয় পুলিশকে পয়সা দিয়ে। যেসব গাড়ি পুলিশকে টাকা দেয় সেসব গাড়িই কেবল এখানে থামতে পারে। একটি গাড়ি থামতে ৫০০ টাকা দেয়া লাগে। টাকা না দিলে লাঠি দিয়ে গাড়ির বডিতে পেটাতে থাকে। এতে গাড়ির বডি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এই পরিবহন কাউন্টারগুলোর কারণে তারা স্বাভাবিকভাবে ঘর থেকে বের হতে পারেন না। পরিবহন কাউন্টারের পাশাপাশি এখানেও রয়েছে লেগুনা স্ট্যান্ড। যে কারণে রাত-দিন সেখানে যানজট লেগে থাকে। এর উল্টো পাশে শহীদ ফারুক সড়কের মুখে বিভিন্ন লোকাল পরিবহনের বাসগুলো জটলা হয়ে থাকে যাত্রীর জন্য। দীর্ঘক্ষণ যাত্রীর জন্য অপেক্ষার কারণে গাড়ির জটলায় অনেকসময় অন্যান্য পাশের সিগন্যালগুলোতে দীর্ঘ জট হয়ে যায়। যাত্রাবাড়ী মোড় হয়ে সায়েদাবাদের দিকে যাওয়ার রাস্তায়ও জটলা বেঁধে যায় লোকাল যাত্রী ওঠানোর জন্য। যে কারণে ডেমরা রোড, চিটাগাং রোড ও মাওয়া রুটের সিগন্যালের গাড়িগুলো দীর্ঘক্ষণ সিগন্যালেই পড়ে থাকে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ছাড়া পুরো এলাকার ফুটপাথে হকার বসানো হয়েছে। যাত্রাবাড়ী মোড়ের মৎস্য বাজারের পাশ থেকে বিবিরবাগিচা ২ নম্বর রোডের মাথা পর্যন্ত কয়েক শ’ হকারের দখলে ফুটপাথ। মোড়ের উত্তর-পশ্চিম পাশে ফল ও সবজির বিশাল বাজার। যে কারণে সেখানে দিন-রাত যানজট লেগে থাকছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন বলেছেন, এই এলাকার মানুষ এখন চরম অশান্তিতে রয়েছেন। এ দিকে মোড়ের রাস্তায় বড় বড় গর্ত আর লেগুনাগুলো ও অটোরিকশার বেপরোয়া গতির কারণে এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, রাজধানীর অন্যান্য প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো নিষিদ্ধ হলেও যাত্রাবাড়ীতে প্রধান সড়কেও দিব্যি বেপরোয়া গতিতে এই গাড়িগুলো চলছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা