০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঝিনাইদহে ৬ ক্লিনিকের ওটি সিলগালা

স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভ
-

ঝিনাইদহের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। হাসপাতালের লিফট মাসের পর মাস বন্ধ। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুর্গন্ধ খাবারের মান নি¤œ। একদিকে জনবল/লোকবলের অভাব এবং অন্যদিকে কিছু চিকিৎসকের অবহেলা স্বাস্থ্যসেবা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে মানুষ প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের এই বেহাল দশা নিরসনে ঝিনাইদহে কোনো ‘কান্ডারী’ নেই। এ অবস্থায় অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছেন চিকিৎসাসেব প্রত্যাশীরা।
এদিকে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে প্রসূতি মায়ের লাশের সারি লম্বা হচ্ছে। চলতি মাসে অন্তত ছয়জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। চলমান নাজুক পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরী ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের আমিন বিশ্বাসের স্ত্রী লিপি খাতুনকে গত ১৬ এপ্রিল জেলা শহরের শামিমা ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি সুস্থ সবলভাবে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলেও সিজারের সময় তার কিডনির একটি রক্তনালী কেটে ফেলা হয়। পরে তাকে পুলিশ দিয়ে জোরপূর্বক ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে পাঠানো হয়। যাওয়ার সময় ৩৫ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় ওই হতদরিদ্র পরিবারকে। এর আগে গত ১২ এপ্রিল ওই একই ক্লিনিকে হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভবিতপুর গ্রামের রিনা খাতুন (২২), গত ২৫ মার্চ আরাপপুরের রাবেয়া হাসপাতালে শারমিন, গত ২৯ মার্চ কালীগঞ্জের দারুসশেফা ক্লিনিকে ও শহরের হামদহ এলাকার প্রিন্স হাসপাতালে একাধিক প্রসূতির মৃত্যু হয়।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার জেলা শহরের শামিমা ক্লিনিকসহ ছয়টি বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ ক্লিনিকগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঝিনাইদহ শহরের শামিমা ক্লিনিক, হাবিবা ক্লিনিক, স্মৃতি ক্লিনিক, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, হাবিবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সিভিল সার্জন ডা: শুভ্রা রানী দেবনাথ এ খবর নিশ্চিত করেন।
এদিকে শামিমা ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য অধিদফতর) খুলনার পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা: শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, সিজার করার সময় যেসব ওষুধ কিংবা স্যালাইন ব্যবহার করা হয় সেগুলো ভেজাল বা নকল বলে কোনো কোনো ডাক্তার দাবি করছেন। ফলে ওটিতে ব্যবহৃত স্যালাইনসহ ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওষুধ প্রশাসনের কাছ থেকে পরীক্ষা ও নিরীক্ষার পর ফলাফল জানানো হবে। ওষুধের কারণে মৃত্যু ঘটছে চিকিৎসকরা দাবি করলেও ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই সব প্রসূতির কারো কিডনির রক্তনালী ও কারো জরায়ু কাটার অভিযোগ রয়েছে। সিভিল সার্জন আরো জানান, শিগগিরই জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে জেলার মানহীন ক্লিনিক ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচলনা করা হবে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মিথিলা ইসলাম বলেছেন, চলতি মাসে ৫০টির বেশি সিজার হয়েছে। এর মধ্যে মত্যৃ হয়েছে ছয়জনের। বেশির ভাগ বেসরকারি ক্লিনিকে পোষ্টঅপারেটিভ ব্যবস্থা নেই। ঝিনাইদহের ড্রাগ সুপার সিরাজুম মনিরা জানিয়েছেন, জেলা শহরের শামিমা ক্লিনিক ও বেসরকারি প্রিন্স হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর পর ওটিতে ব্যবহৃত স্যালাইন, ইনজেকশন ট্যাবলেটসহ ১৭টি আইটেম পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য ওষুধ প্রশাসনের ড্রাগ টেষ্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। লিবরা কোম্পানির হার্টসল স্যালাইনের পরীক্ষার ফলাফল ইতোমধ্যে তারা হাতে পেয়েছেন। ওই ফলাফলে স্যালাইনে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। বাকি ১৭টির ফলাফল আসতে ১৫ দিন লাগবে।


আরো সংবাদ



premium cement