০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভিডিও বার্তায় বেনজীর আহমেদ

যেসব সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে সেগুলো প্রমাণ করতে পারলে বিনে পয়সায় লিখে দেবো

-

সাবেক আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ তাকে নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গতকাল (শনিবার) বেলা সাড়ে ১১টায় নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে ২৪ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা আপলোড করেন। সেখানে তিনি বলেন, এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর যারা একপ্রকার পৈশাচিক উল্লাসে মত্ত ছিলেন তাদের জন্য বলছি, প্রতিবেদনে আমার এবং আমার পরিবারের যেসব সম্পত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে যেগুলোর মালিক আমি ও আমার পরিবার নই বলে আপনাদের জানিয়েছি, প্রতিবেদকসহ তারা সবাই যদি সেসব সম্পত্তির মালিক আমি ও আমার পরিবার মর্মে কোনো দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে হাসিমুখে আমরা সেগুলো তাকে বা তাদেরকে বিনা পয়সায় দিয়ে দেবো।
বেনজীর আহমেদ বলেন, আমি দুই বছর আগে অবসরে গিয়েছি। এর পর আমাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণের অপচেষ্টা অত্যন্ত হতাশা ও দুঃখজনক। এ ধরনের অপচেষ্টা যারা ভবিষ্যতে সৎ পথে থেকে ভালো কাজ করতে চান, তাদেরকে নিরুৎসাহিত করবে। কোনো ব্যক্তিগত কারণে ক্রোধান্বিত হয়ে এ ধরনের আক্রমণ করলে জাতি হিসেবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
ভিডিও বার্তার শুরুতে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ‘সম্প্রতি পত্রিকায় আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু খুবই আপত্তিজনক ও মানহানিকর অসত্য ও বিকৃত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেই সংবাদের সূত্র ধরে অন্যান্য কিছু মিডিয়া আউটলেট একই সংবাদ পুনরাবৃত্তিক্রমে পরিবেশন করেছে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, দেশের মেইনস্ট্রিম প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এসব অসত্য ও মানহানিকর বিকৃত সংবাদ পরিবেশনে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমার অবসর গ্রহণের প্রায় দুই বছর পর আকস্মিকভাবে আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের একটি মানহানিকর, অসম্মানজনক, অসত্য সংবাদ কেন পরিবেশিত হলো আমি সে আলোচনায় যাবো না। তবে এর কারণ রাজধানীর সব সাংবাদিক ও সচেতন মহলের মুখে মুখে। আপনারা জানেন যে, বিগত ১৪ বছরে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে মহানগরীর সম্মানিত নাগরিক, সেই সঙ্গে ডিজি র‌্যাব ও আইজিপি হিসেবে সমগ্র দেশবাসীকে সেবা দেয়ার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছি।’ প্রায় ৩৫ বছর রাষ্ট্রের বেতনভুক কর্মচারী হিসবে কর্তব্য পালন করেছি, সেহেতু ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার অবস্থান থেকে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্য এবং তথ্য তুলে ধরার একটি নৈতিক তাগিদ অনুভব করছি। সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমার এই বক্তব্যের লক্ষ্য কাউকে পাল্টা আক্রমণ বা পাল্টা অভিযোগ কিংবা বিদ্বেষ সৃষ্টি করা নয়। শুধু নৈতিক এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার প্রেক্ষাপটে আমি আমার কথাগুলো বলব।’
বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রকাশিত ৪৫টি তথ্য/অভিযোগ বা অপমানজনক মন্তব্য সন্নিবেশিত আছে। তার মধ্যে ২৪টি অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কল্পনাপ্রসূত। দু’টি বিষয়কে সাতবার পুনরাবৃত্তি করে পরিবেশন করা হয়েছে। দু’টি তথ্যকে ভুল প্রেক্ষাপটে বিকৃতভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। বাকি ১০টি অভিযোগ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে শুধু তিলকে তাল নয়, তালগাছের ঝাড় সহকারে তাল বানিয়ে ভুল এবং অসত্য তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। আমার স্ত্রীর পরিবার সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিজনক মন্তব্য করা হয়েছে। তার বাবা বাংলাদেশ সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। আমার স্ত্রী বিগত ২৪ বছর ধরে তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক আয়ের বিপরীতে সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে আসছেন।’
প্রতিবেদন দু’টিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আমার এবং আমার পরিবারের যে সম্পত্তি উল্লেখ আছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রতিবেদন মোতাবেক ঢাকার কাছেই আমার বিঘার পর বিঘা কোনো জমি নেই। পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির উপর ডুপ্লেøক্স বাড়ি নেই, পূর্বাচলে সেই কথিত ডুপ্লেøক্স বাড়ির পাশে একই জায়গায় আরো ১০ বিঘা জমি নেই। আমার ৩৫ বছরের চাকরিজীবনে বেতনভাতার যে কাল্পনিক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে সেটিও ভুল ও অপমানজনক। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আমার অবসরের পর তথাকথিত ‘থলের বিড়াল’ বেরিয়ে এসেছে। আমাদের পারিবারিক ব্যবসা ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, অর্থাৎ বিগত ১০ বছর ধরে আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রকাশ্যে এবং সর্বসম্মুখে পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে গোপন বা আড়াল করার কোনো সুযোগ নেই। গোপালগঞ্জ প্রজেক্টে দু’টি কোম্পানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার একটি ২০ কোটি এবং আরেকটিতে পাঁচ কোটি অনুমোদিত মূলধনের কথা এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেন সাধারণ পাঠকদের মনে হবে যে, এই ২৫ কোটি টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে হয়েছে। অনুমোদিত মূলধন এবং পরিশোধিত মূলধন এক নয়। এই দুই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন সব মিলিয়ে এমনকি এক কোটি টাকার ধারে কাছেও নয়। সাভানা এগ্রোতে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে মর্মে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য এই যে, এই দু’টি কোম্পানি এখন পর্যন্ত অর্থাভাবে ব্যবসাই শুরু করতে পারেনি। শতকোটি টাকা বিনিয়োগের প্রশ্নই আসে না। মগবাজারে একটি বহুতল ভবনে চার হাজার স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট আছে; এটিও একটি সর্বাংশে মিথ্যা তথ্য। মগবাজার কেন, রমনা, সিদ্ধেশ্বরী ও এর আশপাশে আমাদের ফ্ল্যাট বা এপার্টমেন্ট কিছুই নেই।’
তিনি বলেন, আনন্দ হাউজিং-এ ৪০ কাঠা জমিসহ ৪৫ কোটি টাকার বাড়ি আছে বলে দাবি করা হয়েছে। আনন্দ হাউজিং একটি সমবায় সমিতি। ২০০৭ সালে আমরা এখানে একটি প্লট বুকিং দিই এবং কিস্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই টাকা পরিশোধ করি। সেখানে আমাদের ৪০ কাঠার কোনো প্লøট নেই। ‘আমি আইজিপি থাকা অবস্থায় পূর্বাচলে ফারুক মার্কেটের পেছনে ১০ কাঠার একটি প্লট ক্রয় করেছি, যার বাজারমূল্য ২২ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। কিন্তু আমি আইজিপি হিসেবে বা র‌্যাব ডিজি থাকাকালীন কোনো প্লøট কিনিনি। ২০০১ সালে রাজউক বরাবর আবেদন করে আমি একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত হই। নিজের এবং পারিবারিক অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় আমি প্লটটি বিক্রি করেছি। পূর্বাচলে বর্তমানে আমাদের কোনো প্লট বা বাড়ি কিছুই নেই। এটিও একটি মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘রূপগঞ্জের নাওড়ায় আমাদের দুই বিঘা জমি রয়েছে, যার বাজারমূল্য ২০ কোটি টাকা। এটিও মিথ্যা তথ্য। মেয়ের বিশ্রামের জন্য বসুন্ধরায় তিন কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছি অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের শেষদিকে আমরা বসুন্ধরা এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে অসম্পূর্ণ একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করি, পরবর্তীকালে বিভিন্ন কারণে সেটি বসবাস উপযোগী প্রতীয়মান না হওয়ায় বিক্রি করে দিই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের স্টক মার্কেটে বিজনেস পোর্টফলিও এবং শেয়ার কেনাবেচার ব্যবসা আছে। এগুলোর বিপরীতে লা মেরিডিয়ানে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে দুই লাখ শেয়ার রয়েছে। লা মেরিডিয়ানের মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৫ কোটি ৫০ লাখ। সেখানে আমাদের পরিবারের হাতে থাকা শেয়ার ১ শতাংশেরও অনেক নিচে।’ ‘ভাওয়াল রিসোর্ট, বনানীতে ইউনিক রিজেন্সি হোটেল, কক্সবাজারের বেস্ট ওয়েস্টার্ন এবং হোটেল রামাদায় আমাদের মালিকানা আছে মর্মে দাবি করা হয়েছে। এই সমস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনো মালিকানা বা বিনিয়োগ কিছুই নেই। এ ছাড়া পদ্মা ব্যাংক এবং ক্যানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা মালিকানা কিনেছি মর্মে দাবি করা হয়েছে। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনো মালিকানা ও বিনিয়োগ নেই। এমনকি পদ্মা ব্যাংকে মালিকানা তো দুরের কথা একটা অ্যাকাউন্টও নেই। দুবাইতে শতকোটি টাকার হোটেল ব্যবসা, সিঙ্গাপুরে অর্ধশত কোটি টাকার সোনার ব্যবসা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জমি কিনেছি মর্মে দাবি করা হয়েছে। দুবাইতে আমাদের শতকোটি টাকার কোনো হোটেল ব্যবসা নেই। সিঙ্গাপুরে অর্ধ শতকোটি টাকার কোনো সোনার ব্যবসা নেই। থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়াতে আমাদের কোনো জমি নেই। দুবাই-এর কেন্দ্রস্থল কনকর্ড হোটেলে মোটা অঙ্কের শেয়ার রয়েছে মর্মে দাবি করা হয়েছে। উল্লেখিত হোটেলে আমাদের কোনো শেয়ার নেই।’
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমার পুরো ক্যারিয়ারে আমি পুলিশের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, আমার অবসরের পর আমাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণের অপচেষ্টা অত্যন্ত হতাশা এবং দুঃখজনক।’


আরো সংবাদ



premium cement