০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


এবার পাগলা মসজিদে মিলল অলঙ্কারসহ ২৭ বস্তা টাকা

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সের টাকা গণনার দৃশ্য : নয়া দিগন্ত -

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার পাওয়া গেল অলঙ্কারসহ ২৭ বস্তা টাকা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬ কোটি টাকা গণনার খবর জানিয়েছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের তত্ত্বাবধানে মসজিদের দান বাক্সগুলো খোলা হয়।
এই মসজিদের ইতিহাসে দানবাক্স থেকে রেকর্ড পরিমাণ এত টাকা আর কখনো পাওয়া যায়নি।
দানবাক্স থেকে টাকা বের করে যখন ২৭টি বস্তায় ভরা হয় কমিটির লোকজন তখনই ধারণা করেছেন এবার টাকার পরিমাণ সাড়ে সাত কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে গণনার কাজ।
নগদ টাকা ছাড়াও প্রতিবারের মতো এবারো দানবাক্সে মিলেছে বিদেশী মুদ্রা ও সোনা-রূপার বিপুল অলঙ্কার।
এবার অলঙ্কারের পরিমাণ পাঁচ কেজি ছাড়িয়ে গেছে বলে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির এক সদস্য। মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মের লোকজনও এ মসজিদে দান করে।
সাধারণত তিন মাস পরপর মসজিদের দান বাক্সগুলো খোলা হয়। করোনার পর থেকে বাক্স খোলার সময়ের কিছুটা হেরফের হয়। এবার চার মাস ১১ দিন পর খোলা হয়েছে পাগলা মসজিদের দানবাক্স।
এর আগে সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর এ মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। পরে টাকা গণনা করে সর্বোচ্চ ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
তারও আগে গত ১৯ আগস্ট খোলা হয়েছে মসজিদের সিন্দুকগুলো। তখন পাওয়া যায় পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। গত বছরের মে মাসের ৬ তারিখে দানবাক্স থেকে মিলেছিল পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকা। গত বছরের জানুয়ারি মাসে পাওয়া যায় চার কোটির বেশি টাকা।
স্থানীয়রা জানায়, এ মসজিদের দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকা। এ কারণে মসজিদের দান বাক্সে কী পরিমাণ টাকা পাওয়া গেল, তা নিয়ে লোকজনের থাকে কৌতূহল। তাই গণনা শেষে প্রতিবারই জানিয়ে দেয়া হয় টাকার অঙ্ক।
তবে স্থানীয়রা অনেকে বলেছেন, স্বচ্ছতার স্বার্থে আয়ের পাশাপাশি মসজিদের টাকা-পয়সা ব্যয়ের হিসাবটাও জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করা উচিত। এছাড়াও প্রতিদিন মসজিদটিতে কুরআন মজিদ, মোমবাতি, গবাদিপশু, গাছের ফলফলাদি ইত্যাদি মানত হিসেবে দান করা হয়। টাকার মূল্যে এগুলো দান বাক্সের টাকার সমপরিমাণ বা কোনো কোনো সময় এর চেয়ে বেশি হয় বলে অনেকের ধারণা। এগুলোর হিসাব মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে কোনো সময়ই প্রকাশ করা হয় না। এগুলো বিক্রির টাকার হিসাব জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করারও দাবি এলাকাবাসীর।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় খোলা হয় মসজিদের ৯টি সিন্দুক। এরপর টাকাগুলো বস্তাবন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় দোতলায়। টাকাগুলো ভরতে ২৭টি বস্তার প্রয়োজন হয়। বস্তাগুলো খুলে টাকাগুলো মেঝেতে রেখে যখন গণনা করা হয় এ বিরল দৃশ্যের ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে শহরের শত শত মানুষ জড়ো হয়।
স্থানীয়রা জানায়, এ মসজিদের দানবাক্সে যে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়, তা দেশের আর কোনো মসজিদে মিলে না। টাকার সাথে সোনা-রূপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশী মুদ্রাও। তাছাড়া প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে থাকে লোকজন।
আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে পাওয়ার আনন্দ, না-পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে। এমনকি শত্রুকে ঘায়েলের দাবিও থাকে কোনো কোনো চিঠিতে।
সকালে দানবাক্স বা সিন্দুক খোলার সময় মসজিদে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বড়সড় দল টাকা-পয়সা গণনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন।
জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা গচ্ছিত থাকে রূপালী ব্যাংকে। ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দেয়া হয় বলে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এছাড়াও দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে। এসব সেবামূলক কর্মকাণ্ড সারা বছরই করে থাকে পাগলা মসজিদ জানান জেলা প্রশাসক।
মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দানের টাকায় মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিকমানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরো বিভিন্ন আয়োজন। এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে। এখন সবকিছু গুছিয়ে আনা হচ্ছে। শিগগিরই হয়ত কাজে হাত দিতে পারব আমরা।’
কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল।


আরো সংবাদ



premium cement