থামছে না পুঁজিবাজারে পতন বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২২
- বিনিয়োগকারীদের ৭৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য অস্থির
- ডিএসইএক্স ১৭৭.৪০ পয়েন্ট এবং সিএএসটিআই কমেছে ৪৮৮.৬৫ পয়েন্ট
- তারল্য ফিরেছে ২১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা
পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। কোনোভাবেই থামছে না সূচকের পয়েন্ট হারানো ও দরপতন। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ আর ক্রন্দন। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। ভিটেবাড়ি ও সম্পদ বিক্রি করে এখানে বিনিয়োগ করে আজ পথে বসেছে। আশার আকাশে প্রতিদিনই নিরাশার কালো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। আতঙ্কে সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ৭৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য অস্থির হয়ে উঠছে। অনেকের অভিমত এটা ২০১০ সালের পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক কমতে কমতে ২০১১ সালের অবস্থানে ফিরে গেছে। গেলো সপ্তাহে ডিএসইর ডিএসইএক্স ১৭৭.৪০ পয়েন্ট এবং সিএএসটিআই সূচক কমেছে ৪৮৮.৬৫ পয়েন্ট।
এ দিকে, একটি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, গেলো সপ্তাহে পুঁজিবাজার বিক্রির চাপে ছিল ৭৫ শতাংশ এবং কেনার আগ্রহ ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ। বিক্রির চাপে ছিল ব্যাংক, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেলিকম ও প্রকৌশলী খাতের কোম্পানির শেয়ারগুলো। ব্যাংকগুলো মার্জারে দেয়ার কারণে এই খাতের বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারানোর ভয়ে বিক্রি করে নিরাপদে থাকতে চাচ্ছেন। আর বাজার মূলধনে এ শ্রেণীর শেয়ার ৮২.২ শতাংশ, বি শ্রেণীর ১৪.৪ শতাংশ, এন শ্রেণীর ১.৪ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর ছিল ১.৯ শতাংশ আধিপত্য। লেনদেনের তথ্য থেকে দেখা যায়, দুই বাজারই গেলো সপ্তাহে বড় অঙ্কের সূচক হারিয়েছে। পতনের জালেই বেশির ভাগ কোম্পনির শেয়ার। ঢাকা স্টকের ডিএসইএক্স কমেছে ১৭৭.৪০ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ৪৭.৮১ পয়েন্ট, শরিয়াহ সূচক ৩৫.৭৪ পয়েন্ট আর এসএমই সূচক ১৪৫.২৮ পয়েন্ট। যেখানে তার আগের সপ্তাহে এই পতনের হার ছিল একক অঙ্কের ঘরে। তবে গড়ে লেনদেন টাকায় বেড়েছে। গেলো সপ্তাহে ১৫ কোটি ৫২ লাখ শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৪৭৮ কোটি ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। তার আগের সপ্তাহে এই বেচাকেনা ছিল ১৩ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মোট ৪৩৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকায়। কারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দেয়ার জন্য মরিয়া। কিন্তু পুরো সপ্তাহে মোট টাকায় লেনদেন আগের সপ্তাহের চেয়ে কমেছে ২৬১ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পুরো সপ্তাহে ৬২ কোটি ১০ লাখ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৯১২ কোটি ৮১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। যেখানে আগের সপ্তাহে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার হাতবদল হয় দুই হাজার ১৭৪ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার টাকায়। মোট শেয়ার বিক্রির পরিমাণও আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে সাড়ে ছয় কোটি। কিন্তু গড় শেয়ার বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ১৩.০৯ শতাংশ। সার্বিকভাবে ডিএসইর বাজার মূলধনে তারল্য ফিরেছে ৩.১৫ শতাংশ বা ২১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা।
পুরো সপ্তাহে ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড লেনদেনে অংশ নেয়। কিন্তু এর মধ্যে দর হারিয়েছে ২৮৫টি, দর বেড়েছে ৮৯টির এবং ২১টি কোম্পানি অপরিবর্তিত। লেনদেন কমেছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ১৭টি। ব্লক মার্কেটে ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৮৭ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে। আর এসএমইতে ১২১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার লেনদেনে হয়েছে। এক পর্যালোচনায় দেখা যায়, টাকায় গেলো সপ্তাহে লেনদেন ব্যাংকিং খাতে ২৭.৩৭ শতাংশ, করপোরেট বন্ড ৫০.৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রকৌশল, জ্বালানি, সাধারণ বীমা খাতের কোম্পানির লেনদেন টাকায় বেড়েছে। সিমেন্ট, সিরামিক্স, তথ্যপ্রযুক্তি, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বস্ত্র ও জীবন বীমা খাতে লেনদেন টাকায় কমেছে।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টকও সবগুলো সূচক গড়ে ৩০০ পয়েন্ট হারিয়েছে। সিএএসপিআই হারিয়েছে ৪৮৮.৬৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৩২২.৩৯ পয়েন্ট এবং সিএসিএক্স ২৯২.৫ পয়েন্ট। এই বাজারে পুরো সপ্তাহে এক কোটি ৩৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৮২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার ২৩৪ টাকায়। লেনদেনে প্রাধান্য ছিল এ শ্রেণীর শেয়ারের ৫৫.১৬ শতাংশ, বি শ্রেণীর ২৭.৮০ শতাংশ, এন শ্রেণীর ১৬.৪১ শতাংশ। পুরো সপ্তাহে ৩০১টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এতে দর হারিয়েছে ২১১টি কোম্পানি, দর বেড়েছে ৬১টির এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ২৯টির।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা