বাংলাদেশের অর্থনীতি ৮ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
চলতি ২০২৪ সালে বাংলাদেশে অর্থনীতি আটটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশ (আইসিসিবি)। আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে এক সম্পাদকীয়তে এই চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছে।
সংস্থাটি বলেছে, ২০২৪ সালে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, বাজেটের ঘাটতিসহ পরিশোধের ভারসাম্য ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, রেমিট্যান্স সঙ্কোচন, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য এবং এনার্জি খাতে চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, ঋণখেলাপি দ্বারা পঙ্গু দুর্বল ব্যাংকিং খাত ইত্যাদির মতো একাধিক ক্ষেত্রে অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে না পারলেও অধিকাংশ দেশে তা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
আইসিসিবি বলেছে, চিত্তাকর্ষক প্রবৃদ্ধির হার সত্ত্বেও, বাংলাদেশ তার রফতানি ঝুড়ির বৈচিত্র্যকরণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি পোশাক রফতানি থেকে আসে। চামড়া এবং পাদুকা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ফার্মাসিউটিক্যালস, লাইটইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাসেম্বলিং প্যান্টস এবং এপিআই উৎপাদনে বাংলাদেশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ খাতগুলোতে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ এবং এফডিআই উভয়ই বাড়াতে হবে।
সম্পাদকীয়তে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার চার দশকের মধ্যে দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি থেকে নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশে দেশটির যাত্রা তার স্থিতিস্থাপকতা, নীতিগত সিদ্ধান্ত, দারিদ্র্য হ্রাস এবং সমৃদ্ধির লালন পালনের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ দেয়।
নি¤œস্তরের মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চস্তরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাথে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তি এবং আর্থসামাজিক সাফল্যের প্রধান চাবিকাঠি। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নি¤œ-মধ্যম আয়ের স্থিতিতে পৌঁছেছে এবং ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার পথে ও ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার আশাবাদী।
আইসিসিবি বলেছে, ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রাধিকার গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হবে। যদিও ইইউ এবং যুক্তরাজ্য অতিরিক্ত তিন বছরের জন্য অগ্রাধিকারমূলক শুল্কমুক্ত বাজার অ্যাক্সেস বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, তবে অন্যান্য বাজারে রফতানি পরিস্থিতি গ্র্যাজুয়েশনের পরপরই পরিবর্তিত হবে। ৩.০৮ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি এবং ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্যসহ ৬৬১ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত আসিয়ান অঞ্চলে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ আসিয়ান দেশগুলো থেকে প্রায় ৭.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে যেখানে রফতানি করে মাত্র ১.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাই বাংলাদেশের রফতানি বাড়াতে আসিয়ানের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
বিভিন্ন বড় মেগা প্রকল্প যেমন পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকার সাথে কক্সবাজারের রেলওয়ে সংযোগ, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এগুলো অধিকাংশ শেষ হয়েছেএবং ২০২৪-এ এর সুফল পাওয়া শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইসিসিবি বলেছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রবর্তন এবং অন্যান্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বেও এফডিআই আকর্ষণে বাংলাদেশ মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এফডিআই আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে চীন, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার পর ভিয়েতনাম চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ভিয়েতনামে ২০২২ সালের শেষে ২৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মোট ঋণপ্রবাহের বেশির ভাগই ছিল উৎপাদন খাতে, যা মোট নিবন্ধিত ঋণ এর ৬১ শতাংশ। ভিয়েতনামের ৩৬.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশ বার্ষিক গড়ে ২.৯২ বিলিয়ন ডলার এফডিআই পেয়েছে। এফডিআই হলো রফতানি আয় বাড়ানো এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিও অন্যতম প্রধান উপাদান। বাংলাদেশের উচিত এফডিআই আকর্ষণের জন্য ভিয়েতনামের কৌশল পর্যালোচনা করা। আমদানিকৃত জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে বাংলাদেশ জ্বালানি সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বছরে প্রায় আনুমানিক ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে। এছাড়া নবায়নযোগ্য ও ক্লিনটেক বিকল্পের অভাব রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস অনুসন্ধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে, বাংলাদেশ জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা, তেল এবং এলএনজি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জার্মানওয়াচের ২০২১ গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুসারে, ২০০০-২০১৯ সময়কালে জলবায়ুু বিপর্যয়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা