১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দর্জিপাড়ায় নির্ঘুম রাত : নিরুত্তাপ অভিজাতপাড়া

রমজান মাসের শেষ মুহূর্তে দর্জিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন : নয়া দিগন্ত -


ঈদ কেনাকাটায় রাজধানী প্রতিটি বিপণী বিতান, শপিংমল সরগরম হলেও অনেকটা নিরুত্তাপ রয়েছে অভিজাতপাড়া বলে পরিচিত গুলশান-বনানী। একাধিক মার্কেট ঘুরে দেখা যায় এসব এলাকার শপিংমলগুলোতে ভিড় কম। ক্রেতাদের মধ্যে যারা আসছেন তাদের মধ্যে মধ্যবিত্তের সংখ্যাই বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, অভিজাত এলাকায় যারা বসবাস করেন তারা বছরের বেশির ভাগ সময়ই বিদেশে থাকেন। ফলে তারা কেনাকাটা বিদেশেই করেন। যার কারণে ঈদসহ নানা উৎসবে তাদের দেশীয় শপিংমলে যাওয়ার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। ফলে রাজধানীর অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানকার মার্কেটগুলোতে ক্রেতা কম হয়।

গুলশান অ্যাভিনিউর পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্সেসহ একাধিক শপিংমল ঘুরে কোনো ভিড় চোখে পড়েনি। বেশির ভাগ দোকানে ছিলেন এক-দুজন ক্রেতা। কোনোটা একদম খালি। মার্কেটের একজন বিক্রেতা জানান, গুলশানের বাসিন্দাদের অনেকে ভারত থেকেই কেনাকাটা করেন। গত কয়েক বছর থেকেই এমন হচ্ছে। ফলে বিক্রি একেবারে কম। তবে ‘শবে বরাতের পর থেকে বিক্রি কিছুটা বাড়বে বলে তাদের প্রত্যাশা।
অন্যদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভারত থেকে কাপড় এনে অনলাইনে অনেকে ব্যবসা খুলে বসেছেন। ফলে মানুষ শপিংমলে না গিয়ে ঘরে বসেই অর্ডার করছেন। তাতে করে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কয়েকজন ক্রেতা জানান, তারা গুলশানে থাকেন না। তবে ঢাকার অন্যান্য এলাকার চেয়ে অভিজাত এলাকায় ট্রাফিক জ্যাম যেমন কম হয় তেমনি ক্রেতার ভিড়ও কম। তাই আয়েশের সাথে শপিং করতে তারা এই এলাকায় এসেছেন। তবে শপিংমলে লোক কম হলেও ব্রান্ডের দোকান আড়ংয়ে ছিল উল্টো চিত্র। প্রতিষ্ঠানটির গুলশান ও বনানীর দুটি আউটলেটেই ছিল ক্রেতাদের ভিড়।
গুলশান-বনানীর বিভিন্ন শপিংমলের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের শপিংমলগুলোতে এক্সক্লুসিভ সব ধরনের টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, থ্রি পিস, শাড়ি, লেহেঙ্গা আনা হয় বিদেশ থেকে। এর মধ্যে বেশির ভাগই সিঙ্গেল পিস। দেশের কোথাও এসব পোশাকের দ্বিতীয় কপি পাওয়া যাবে না।

গুলশান শপার্সওয়ার্ল্ড, নাভানা টাওয়ার, মনিক্যাপিটাল সেন্টার, পিংক সিটি ঘুরে দেখা যায় এসব দোকানে লাখ লাখ টাকার পোশাক রয়েছে। এর মধ্যে সেখানে একটি শার্ট সর্বনিম্ন বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায় এবং সর্বোচ্চ ৩১ হাজার টাকা দামেরও শার্ট মিলছে। বড় ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে জারা ফ্যাশন, ভাসাবি, শপার্সওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন হাউসে ভারতীয় কাপড়ের প্রাধান্য বেশি।
আর শাড়ির মধ্যে রয়েছে অ্যান্ডি ও হাফ সিল্কের ভেজিটেবল ডাইয়ের শাড়ি। দাম দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা। নিজস্ব তৈরি এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের জামদানি শাড়ি মিলছে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকায়। এছাড়া রয়েছে গহনাও।

গুলশানের ইকবাল সেন্টারের একজন ব্যবসায়ী জানান, তাদের এখানে সর্বনিম্ন ৯ হাজার টাকায় আংটি পাওয়া যাচ্ছে। আর গহনা রয়েছে ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা দামের মধ্যে। আর বিশেষ ধরনের কানের দুল বানাতে হলে গুনতে হবে লাখ টাকার উপরে।
গুলশান-বনানীর বিভিন্ন রোডে আছে দেশি বুটিক শপ কে ক্রাফট, সাজ ফ্যাশন, রং, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা, অন্যমেলা, সাদাকালো, বাংলার মেলা, অন্যরকম, জয়নব, কীত্তনখোলা, ট্রেন্ডস, মাচমোরের পাশাপাশি আছে রেমন্ডসহ বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র। এর বাইরেও বনানী ও গুলশানে অন্যান্য ফাশন হাউসগুলোর মধ্যে ক্যাটস আই, দর্জিবাড়ি, কুমুদিনী হ্যান্ডি ক্রাফট, লুবনান, আড়ং ও মায়াসি। এসব ব্রান্ড হাউস ঈদ উপলক্ষে এনেছে আকর্ষণীয় সব পোশাক।

গুলশানের ১ নম্বরে শপার্সওয়ার্ল্ড। যাতে উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের আভিজাত্যের দিকে খেয়াল রেখেই সেখানে পণ্য রাখা হয়। যার দাম প্রায় আকাশচুম্বী। এছাড়া রয়েছে বিলাসী সব পণ্য, যার দাম শুনে সাধারণ ক্রেতাদের চোখ ছানাবড়া হওয়ার জোগাড় হয়! তবে এগুলোর ক্রেতা খুব কম।
এদিকে ঈদ ঘিরে দর্জিপাড়ায় কাটছে কারিগরদের নির্ঘুম রাত। রাজধানীর পাঞ্জাবি সেলাইয়ের অন্যতম বড় মার্কেট হোসাফ টাওয়ার। এখানে সব ধরনের পাঞ্জাবির কাপড় বিক্রির সাথে রয়েছে টেইলার্স।
একজন ব্যবসায়ী জানান, পুরো রাজধানীজুড়ে যত টেইলার্স রয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই এখন ব্যস্ততায় কাটছে। রাত জেগে কাজ করছেন কর্মীরা। যাতে সময়মতো ডেলিভারি দেয়া যায়, সেজন্য তাদের এ প্রচেষ্টা। এমন ব্যস্ততা শেষ রমজান পর্যন্ত চলবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল