১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঈদ শপিংয়ে বাড়তি উদ্বেগ মোবাইলচোর

-

ঈদ শপিংয়ে প্রতিটি মার্কেটের সামনে পুলিশ প্রহরা থাকলেও সক্রিয় রয়েছে মোবাইলচোর। ফলে আনন্দের শপিংয়ে বাড়তি উদ্বেগ ছড়াচ্ছে মোবাইলচোর। ফলে প্রতিদিন কোনো না কোনে মার্কেট বিপণিবিতান কিংবা ফুটপাথে আসা ক্রেতাদের মোবাইল চুরি হচ্ছে। এ নিয়ে দু’একজন থানায় অভিযোগ করলেও বেশির ভাগ মানুষ কোনো প্রতিকার পাবেন না ভেবে থানায় অভিযোগ করেন না। ফলে কত সংখ্যক মোবাইল প্রতিদিন চুরি হচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই।
নিউমার্কেটে শপিং করতে আসা নেওয়াজ জানান, প্যান্টের পকেটে মোবাইল রেখে শপিং করছিলেন। হঠাৎ মনে হলো পকেটটি হালকা লাগছে। হাত দিয়ে দেখেন মোবাইলটি নেই। তার ভাষ্য মার্কেটে প্রচণ্ড ভিড়। এই ভিড়েই হয়তো মোবাইলটি চুরি হয়েছে বলে তার ধারণা।

চাঁদনিচক মার্কেটে আসা নিলুফার জানান, ব্যাগে মোবাইল রেখে দোকানে দোকানে কেনাকাটা করছিলেন। এক দোকানে কাপড় পছন্দের পর দাম পরিশোধের জন্য ব্যাগের দিকে খেয়াল করে দেখেন চেইন খোলা। ভেতরে মোবাইল নেই। টাকা অন্য একটি পকেটে থাকায় তা নিতে পারেনি। তার ভাষ্য এখানে নারী মোবাইল চোরও আছে ফলে নারীদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েই এটি চুরি করেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা প্রতিদিন মোবাইল চুরির অভিযোগ পাচ্ছেন। যদিও ক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে মার্কেটের ভেতরে বাইরে সিসিক্যামেরা বসিয়েছেন। আর প্রতিটি মার্কেটের সামনে পুলিশও প্রহরায় রয়েছে। তারপরও মোবাইল চুরির ঘটনা অপ্রীতিকর মন্তব্য করে একজন ব্যবসায়ী বলেন, বেশি মানুষের ভিড়ে এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত হলেও অস্বাভাবিক না। তাই তারা ক্রেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কোনো কোনো মার্কেটে মাইক লাগিয়েও আগতদের সতর্ক করা হচ্ছে।
গত কয়েক দিনে অনেক ক্রেতা তাদের মোবাইল চুরির অভিযোগ করে বলেন, মার্কেটে ভিড়ের মধ্যে নারীদের ব্যাগ আর পুরুষদের পকেট থেকে মোবাইল চুরি যাচ্ছে। এছাড়া কারো কারো ম্যনিব্যাগও চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিদিন এমন ঘটছে জানিয়ে তারা বলেন, এদের দুই একজন থানায় অভিযোগ করলেও বেশির ভাগই কোনো প্রতিকার পাবেন না ভেবে থানায় অভিযোগ থেকে বিরত থেকেছেন।
মোবাইল চুরির বিষয়টি স্বীকার করে নিউমার্কেট থানার একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জনান, মোবাইল চুরির ঘটনায় থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হচ্ছে। তার ভাষ্য, অনেকেই মোবাইল খোয়া গেলেও থানায় জিডি করেন না। নারীদের ব্যাগ এবং ছেলেদের পকেট থেকে মানিব্যাগ চুরির ঘটনাও ঘটছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব অপরাধ ঠেকাতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনাসহ পুলিশ তৎপর। প্রতিটি মার্কেটে অডিও রেকর্ড দেয়া হয়েছে। এতে চুরি বা ছিনতাই ঘটনা এড়াতে সতর্কতার পাশাপাশি পুলিশি সহায়তা নেয়ার কথাও বলা হচ্ছে। এছাড়া কিছু মার্কেটের সামনে ২৪ ঘণ্টা অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

তার ভাষ্য, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় চোর ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইলফোন কম দামে কিনে আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর পরিবর্তন করে ফেলা হয়। পরে সেগুলো বিভিন্ন দোকানের মাধ্যমে আবারো বিক্রি হয়ে চলে যায় সাধারণ মানুষের হাতে। এভাবে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলায় চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ক্রেতাদের নিরাপত্তার বিষয়ে অপর এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি মার্কেটের সামনেই পুলিশ মোতায়েন আছে। সে সাথে যানজট নিরসনেও রয়েছে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ। ক্লোজ মনিটরিংয়ের জন্য পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ঈদ ঘনিয়ে আসায় প্রতিদিন শপিংমল, বিপণিবিতান ও ফুটপাথে ক্রেতা বাড়ছে। সকাল থেকে শুরু করে এখন মার্কেট খোলা থাকছে মধ্যরাত পর্যন্ত। এতে রাজধানীর সর্বত্রই কেনাকেটা বেশ জমেছে।
বিক্রেতারা জানান, রমজান শুরুর পর থেকে মধ্য রমজান পর্যন্ত বিক্রি তেমন ছিল না। এতে তারা অনেকটা চিন্তিতও ছিলেন। কারণ গত কয়েক বছর প্রথমে করোনা মহামারী, এরপরই রাজনৈতিক অস্থিরতা সব মিলিয়ে বিগত সময় ব্যবসা খারাপ ছিল। কিন্তু এবারো যখন শুরু থেকে মার্কেটে ক্রেতা ছিল না তখন তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল। ধারণা ছিল এবারো হয়তো আশানুরোপ ব্যবসা হবে না। কিন্তু শেষদিকে আলোর ঝলকানি তাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে।
তাদের ভাষ্য, কয়েক বছর আগেও রমজানের শুরু থেকেই ক্রেতায় মার্কেট গমগম করতো। কিন্তু করোনা মহামারীর সময় থেকেই সব যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। যার কারণে গত প্রায় চার বছর টানাপড়েনের মধ্যে টিকে থাকাটাও চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে এবার মনে হচ্ছে তারা পেছনের লোকসান গোছাতে পারবেন।


আরো সংবাদ



premium cement