ঈদ ও নববর্ষ ঘিরে ১৫০ কোটি টাকা বিক্রির টার্গেট
- নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
- ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৭
দু’টি উৎসবকে সামনে রেখে ব্যস্ত নারায়ণগঞ্জের জামদানি পল্লী। ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষকে (পয়লা বৈশাখ) ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটছে জামদানি শিল্পীদের। দু’টি উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার জামদানি শাড়ি বিক্রি করার টার্গেট নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বিসিক শিল্পনগরী জামদানি পল্লীতে তাঁতীদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। সে কারণে তাদের ব্যস্ততাও বেড়েছে বহু গুণ।
ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ির ইতিহাস কয়েক শ’ বছরের। বাঙালি নারীর পরিশীলিত সৌন্দর্যবোধ ও আবেগের সাথে জড়িয়ে আছে প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকার এই জামদানি শাড়ি। যার আতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ। এ উপজেলার নোয়াপাড়া বিসিক শিল্পনগরীর জামদানি পল্লীতে কর্মমুখর সময় কাটছে এখন প্রায় ১০ হাজার তাঁতীর। জেলার সোনারগাঁও এবং রূপগঞ্জে রয়েছে জামদানি শাড়ি তৈরির অনেকে তাঁতঘর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামদানি পল্লীতে সরাসরি যত ক্রেতা আসছে, তার থেকে বেশি ক্রেতা মিলছে অনলাইনে। ই-কমার্স ও সরাসরি শাড়ি কিনতে আসা ক্রেতাদের সমন্বয়ে এই ঈদ ও পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও তাঁতীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা দেশ থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যাচ্ছেন রূপগঞ্জের এই শাড়ি। এ ছাড়াও প্রায় ৩০ কোটি টাকার জামদানি রফতানি হতে চলেছে ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। এর ফলে দেশেও আসছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।
ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি বিভিন্ন রকম ডিজাইনের হয়ে থাকে। যার মধ্যে বেশি জনপ্রিয় হলো পান্না হাজার, তেরছা, পানসি, ময়ূরপক্সক্ষী, বটতপাতা, করলা, জাল, বুটিদার, জলপাড়, দুবলী, ডুরিয়া, বলিহার, কটিহার, কলকাপাড় ইত্যাদি ডিজাইনের জামদানি।
তাঁতীরা জানান, জামদানি পল্লীতে রয়েছে ৪০টির মতো এ শাড়ির শোরুম। এসব শোরুম থেকে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা নিজেদের পছন্দমতো বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইনের জামদানি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আগে তাঁতীরা শুধু জামদানি শাড়ি তৈরি করলেও বতর্মানে জামদানি দিয়ে পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, টু-পিস ও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করা হচ্ছে। এভাবে জামদানির বাজার আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে।
জামদানি ব্যবসায়ীরা জানান, জামদানি পল্লীর তাঁতী ও দোকানমালিকদের সবারই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে সেই পেজের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত তাঁতী নিজেদের তৈরি করা জামদানি শাড়ি বিক্রি করে চলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ই-কমার্সে বেশ সাড়াও পাচ্ছেন তারা। তাদের বুনন করা শাড়ি বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। একেকটি শাড়ি পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা দামে বিক্রি হয়ে থাকে। তাঁতীদের কাছ থেকে জামদানি কিনে অনেক উদ্যোক্তাও অনলাইনে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
জামদানি পল্লীতে ২০-২২ বছর ধরে শাড়ি বুননের কাজে নিয়োজিত মাইদুল ইসলাম বলেন, আসন্ন ঈদের কারণে কাজের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। কাজের চাপে বিশ্রামের সুযোগ নেই।
তাঁতী নাদিম বলেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে জামদানি শাড়ি বুনছি। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারো কাজ বেড়েছে। আমরা চাই কাজের পরিধি বাড়ুক। কাজ বাড়লে মালিক, বিনিয়োগকারী ও শ্রমিকদের জন্য ভালো হবে।’
জামদানি পল্লীর আরেক শ্রমিক শামীম বলেন, ‘আগে আমি সকাল ৯টায় কর্মস্থলে আসতাম। এখন আসতে হচ্ছে ভোর ৫টায়। আগে সন্ধ্যায় বাসায় যেতাম। এখন মাঝে মাঝে রাত ১০টা বা ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরতে হয়। এখন কাজের চাপ বেড়েছে।’
জুনায়েদ জামদানি তাঁতের মালিক রুহুল আমিন বলেন, ‘ভারতীয় জামদানির কারণে আমাদের বাজার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারা মেশিনে জামদানি বুনছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তারা কম দামে বিক্রি করতে পারছে। কিন্তু আমরা পারছি না। তারা একটি শাড়ি দুই হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু জামদানি শাড়ি বুনতে দুই হাজার টাকার সুতা লাগে। আমরা পাঁচ হাজার টাকার নিচে শাড়ি বিক্রি করতে পারি না। আগে আমরা প্রতি মাসে ১০০টি শাড়ি বিক্রি করতাম, কিন্তু এখন ভারতীয় শাড়ির কারণে আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।’
জামদানির কারিগর পরিবারের সন্তান শাহ আলম বলেন, ‘এখন দেখছি অনলাইনে জামদানি বিক্রি হয়। কিন্তু জামদানি শাড়ির কথা অনেকেই জানেন না। ভারতের মেশিনে তৈরি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে জামদানি নামে। আসলে ওগুলো জামদানি শাড়ি নয়। অরিজিনাল জামদানি শাড়ি কিনতে হলে বিসিক আসতে হবে। আমাদের জামদানি শাড়ি রফতানি হচ্ছে। ঈদকে টার্গেট করে আমরা নতুন শাড়ি বুনছি। এখন পল্লীতে এলে ভালো শাড়ি পাবেন।’
রূপগঞ্জ জামদানি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটির কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, এখানে সব ধরনের উদ্যোক্তা রয়েছেন। কেউ বেশি বিক্রি করে, কেউ কম। যাদের ১৫-২০টি তাঁত আছে তারা ঈদুল ফিতরে এক থেকে দেড় কোটি টাকার শাড়ি বিক্রি করবে বলে ধারণা করা যায়। আর যাদের তাঁত কম তারা একটু কম বিক্রি করবেন। জামদানি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে এ বছর মোট ১৫০-১৬০ কোটি টাকা বিক্রির প্রত্যাশা করছি
রূপগঞ্জের জামদানি পল্লী থেকে জামদানি কিনে অনলাইনে বিক্রি করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সামিরা আক্তার মিতু। কুসুম ফুল জামদানি নামে তার ফেসবুক পেজ রয়েছে। লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পাশাপাশি অনলাইনে জামদানি বিক্রি করছেন তিনি। সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। তিনি বলেন, ‘আমি একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করছি। জামদানির প্রতি আমার অনেক আগে থেকেই দুর্বলতা রয়েছে। এ কারণেই অনলাইনে জামদানি ব্যবসা শুরু করি। ঈদ সামনে রেখে আমার অনলাইনে অনেক ইউনিক ডিজাইনের জামদানির কালেকশন উঠিয়েছি, যা কিনা ক্রেতারাও বেশ পছন্দ করছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা