১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে আমদানি-রফতানি অর্ধেকে নেমেছে

নাব্যতা সঙ্কট
বেড়ার মোহনগঞ্জে হুড়াসাগর ও যমুনার মোহনায় বিআইডব্লিউটিএ এর চলমান ড্রেজিং : নয়া দিগন্ত -


বাঘাবাড়ী নৌবন্দরমুখী চ্যানেলে নাব্যতা সঙ্কটে বন্দরের আমদানি-রফতানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। নৌবন্দরের ভাটিতে মোহনগঞ্জসহ ছয়-সাতটি পয়েন্টে নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধরন করেছে। ফলে জাহাজ থেকে রাসায়নিক সারসহ বিভিন্ন পণ্য লাইটারেজে করে বাঘাবাড়ী বন্দরে আনা হচ্ছে। এ দিকে বিআইডব্লিউটিএ নৌচ্যানেল যমুনা নদী ড্রেজিং করে পলিমাটি নদীতেই ফেলছে। এতে ¯্রােতের টানে পলিমাটি ভাটিতে জমে আবারো ডুবো চর জেগে উঠছে। ফলে নাব্যতা সঙ্কট দূর না হয়ে আরো তীব্র হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বাঘাবাড়ী বন্দরের সহকারী পরিচালক এস এম সাজ্জাদুর রহমান জানান, দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌপথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী পরিবহনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মাধ্যম। এ নৌপথে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বলানি তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল ও গমসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। নাব্যতা সঙ্কটে বন্দরে আমদানি রফতানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ নৌ চ্যানেলের মোহনগঞ্জ পয়েন্টে মারাত্মক নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ নৌ চ্যানেলের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাঘাবাড়ী বন্দর নৌচ্যানেল যমুনা নদীতে গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এই সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। জ্বালানি তেল ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য পানির গভীরতা প্রয়োজন ১০ থেকে ১১ ফুট। বাঘাবাড়ী বন্দরের ছয় কিলোমিটার ভাটিতে মোহনগঞ্জ থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত এলাকার কোথাও কোথাও পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ছয় থেকে সাত ফুট। বিপিসি সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর মাসে ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়েছে। সেখানে ডিসেম্বর থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছিল সাত লাখ লিটারে। পণ্যবাহী জাহাজ আন্ডারলোড নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দরে আসছে। এ কারণে বন্দরে বিভিন্ন পণ্য আমদানি রফতানি অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বিপিসির বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপো, রাজশাহী ও রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে উত্তরের ১৬ জেলায় প্রায় ১৮ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বোরো ধানের চারা রোপণ শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বোরো ধান চাষ করে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও রাজশাহী জেলার কৃষক।
বোরো মওসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সেচের জন্য সাত লাখ ৯৬ হাজার ৭৫টি সেচযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ডিজেল ও ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎনির্ভর। সেচ মওসুমে ডিজেলচালিত ৮২৮টি গভীর নলকূপ, পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ৮৭০টি অগভীর নলকূপ, ১১ হাজার ৩৭৭টি শক্তিচালিত পাম্পের সাহায্যে সেচকার্যক্রম চলবে। এর জন্য প্রায় ৫৫ কোটি লিটার ডিজেলের প্রয়োজন হবে। ডিজেল চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপো থেকে সরবরাহ করা হয়। জ্বালানি তেলনির্ভর বেড়ার ৭১ মেঘাওয়াট, বাঘাবাড়ীর ৫০ মেঘাওয়াট, রাজশাহীর আমনুরা ৫০ মেঘাওয়াটসহ পাঁচটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্পের রয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার। এর জন্য বাড়তি বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে প্রায় ৮৪৩ মেগাওয়াট। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে নদী ড্রেজিং অব্যাহত রাখা হয়েছে। যাতে এ অঞ্চলের সেচনির্ভর বোরো আবাদ ও উৎপাদনে বিপর্য নেমে না আসে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাত এই নৌ-পথ নিয়ে প্রতি বছর সরকারকে স্নœায়ুচাপে থাকতে হয়।

বিসিআইসির বাঘাবাড়ি বন্দরের বাফার গুদাম ইনচার্জ জানান, বাঘাবাড়ী বন্দর রাসায়নিক সার পরিবহনের ট্রানজিট পয়েন্টে। সেখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১৪টি বাফার গুদামে সরবরাহ করা হয়। যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটে রাসায়নিক সারভর্তি জাহাজ পূর্ণলোড নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দরে আসতে পারছে না। বন্দরের ৩৫-৪০ কিলোমিটার ভাটি জাহাজ থেকে সার ছোট ছোট নৌকায় লাইটারেজ করে বাঘাবাড়ীতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে বাফার গুদামগুলোতে আপৎকালীন সারের মজুদ গড়ে তোলার কাজ চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এ ছাড়া পরিবহন ব্যয় জাহাজ প্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিস সূত্রে জানা যায়, আরিচা-বাঘাবাড়ী নৌপথের কিছু কিছু পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে ছয় থেকে সাত ফুটে দাঁড়িয়েছে। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাত এই নৌচ্যানেল সচল রাখার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে দু’টি ড্রেজার পলি অপসারণ করছে। এ দিকে বালুর প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ড্রেজিং করার পর ভাটিতে পলি জমে ডুবোচরগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।
বিপিসির বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপোর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাঘাবাড়ীতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি কোম্পানির ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিজেল মজুদ আছে। ফলে চলতি বোরো মওসুমে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল সঙ্কটের কোনো আশঙ্কা নেই বলে সূত্র জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement