১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বেনাপোল বন্দর ছাড়ছেন অসাধু আমদানিকারকরা

-

বেনাপোল বন্দরে সুবিধা করতে না পেরে অসাধু ফল আমদানিকারকরা বেনাপোল স্থলবন্দর ছেড়ে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে ফলসহ কাঁচামাল আমদানি শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। কিসের মোহে বেনাপোল বন্দর ছেড়ে ভোমরা বন্দরে দিয়ে ফলসহ বিভিন্ন ধননের কাঁচামাল আমদানি করছেন তা নিয়ে বেনাপোল বন্দর এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে। হঠাৎ বেনাপোল বন্দর ছেড়ে আমদানিকারকদের ভোমরা বন্দরের দিকে ঝুঁকে পড়ার কিছু কারণ বেরিয়ে এসেছে।
ফলসহ পচনশীল পণ্যের আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, বেনাপোল বন্দরে কাঁচামাল পচনশীল পণ্য হলেও কোনো ছাড় না দেয়া ও কাঁচামাল আমদানিতে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দরে আমদানিকৃত ফলসহ সব পণ্যের ওজন ডিজিটাল স্কেলে ওজন নির্ধারণ করা হয়। ফলে কোনো পণ্যের ওজন কারচুপির সুযোগ বেনাপোল বন্দরে দেয়া হয় না। কিন্তু পার্শ্ববর্তী ভোমরা বন্দরে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ওজন করা হলেও হাতে লেখা ওজন স্লিপ ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে ওজনের একটা তারতম্য ঘটিয়ে কারচুপি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওজন স্কেলে কারচুপির মাধ্যমে আমদানিকৃত ফলসহ সব পণ্যের বিরাট অঙ্কের শুল্ক ফাঁকি দেয়া সম্ভব বলে মনে করছে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন।
বেনাপোল বন্দরে ফলের চালান ছাড়করণের কাজ করেন এ ধরনের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি অনেক কমে গেছে। এর আগে প্রতিদিন বেনাপোল দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক বিভিন্ন ধনরের ফলসহ ও কাঁচামাল আমদানি হতো, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ থেকে ৬ ট্রাক। যার কারণে বিভিন্ন ধরনের ফল আমদানি থেকে সরকার মোটা অঙ্কের শুল্ক হারাচ্ছে।
তারা আরো জানান, ভারত থেকে আঙুর আমদানি হয়ে থাকে প্লাস্টিকের ক্রেটে। খালি ক্রেটের ওজন ৭ থেকে ৮ শ গ্রাম হলে ভোমরা বন্দরে ক্রেটের ওজন দেখানো হচ্ছে দেড় কেজি। ক্রেটের ওজন বাদ দিলে প্রতি ক্রেট সুবিধা পাচ্ছে ৭০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম। ভারত থেকে একটি ট্রাকে ১৫০০ ক্রেট ফল আমদানি হয়ে থাকে। ক্রেটপ্রতি ৮ শ’ গ্রাম সুবিধা পাওয়া গেলে প্রতি গাড়িতে প্রায় এক টন ওজন ফলের শুল্ক দেয়া লাগছে না। তবে এখানে সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব। এ কারণে অসাধু আমদানিকারকরা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় বেনাপোল বন্দর ছেড়ে ভোমরা বন্দরের দিকে ছুটছেন।
ভোমরা বন্দরের একটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ মার্চ ভারত থেকে আঙুরবোঝাই একটি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ওজন স্কেলে ওই ট্রাকের ওজন স্লিপ করা হয়েছে দু’টি। এর একটি হচ্ছে আমদানিকারকের জন্য অপরটি সরকারের শুল্ক আদায়ের জন্য। সূত্রটি বলছে, আমদানিকারকের জন্য প্রথম স্লিপে ট্রাকের মোট ওজন দেখানো হয়েছে ৪০ হাজার ৭৮০ কেজি এবং নেট ওজন ২৭ হাজার ৮৮০ কেজি। আর সরকারের রাজস্বের জন্য প্রিন্ট করা ওজন স্লিপে গ্রোস ওজন দেখানো হয়েছে ৩৮ হাজার ৮৮০ কেজি এবং নেট ওজন ২৫ হাজার ৯০০ কেজি। এই ওজনের মাধ্যমে কমানো হয়েছে এক হাজার ৯৮০ কেজি বা প্রায় দুই টন। এই এক হাজার ৯৮০ কেজি পণ্যের রাজস্ব আসে প্রায় দুই লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৫০টি ট্রাকে এমন হলে প্রায় এক কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বেনাপোলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গাজী এক্সিমের স্বত্বাধিকারী গাজী শামিম উদ্দিন বলেন, গত এক মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি কমে গেছে। ফলসহ পচনশীল পণ্যে বেনাপোল বন্দরে কোনো সুযোগ সুবিধা না থাকায় ও কাঁচামাল আমদানিতে সময় বেঁধে দেয়ায় বেশির ভাগ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর ছেড়ে ভোমরা বন্দর ব্যবহার করছেন। এভাবে চলতে থাকলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে যে রাজস্ব আদায়ের সুনাম আছে, তা ধরে রাখা যাবে না।
এ বিষয়ে ভোমরা স্থলবন্দরের কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার মো: এনামুল হক বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ বন্দরে ফলসহ কাঁচামাল আমদানিতে তেমন কোনো সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। কাঁচামাল কখনো বেনাপোল বন্দর দিয়ে বেশি আমদানি হয়। আবার কখনো ভোমরা বন্দর দিয়ে বেশি আমদানি হয়। ফলসহ কাঁচামাল আমদানিতে ভোমরা বন্দরে কোনো রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটছে না। ভোমরা বন্দর এখন একমাত্র স্বচ্ছ বন্দর। ওজনে কোনো রকম ছাড় দেয়া হচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement