১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


কিছুতেই কমছে না মশার দাপট

কারা অধিদফতর যেন ডেঙ্গুর কারখানা!
-


ওষুধ প্রয়োগ, অভিযান কোনো কিছুতেই মশার দাপট কমছে না। ফলে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে। করোনার মতোই প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। প্রতি মাসেই লাশ হচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। ঘরে ঘরে বাড়ছে স্বজনহারাদের আর্তনাদ।
সরকারি হিসাব মতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গতকাল আরো ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৬৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একইসাথে গতকাল নতুন করে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে আরো ২৮২৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। আর চলতি বছরের গত আট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এক লাখ ৩৩ হাজার ১৩৪ জন রোগী।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন দাবি করছে তারা প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় ওষুধ প্রয়োগ করছে। এর পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে তারা। কিন্তু কিছুতেই কমছে না মশার দাপট। প্রতিদিনই দুই থেকে তিন হাজার মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে রাজধানীর বকশি বাজারে অবস্থিত কারা অধিদফতরের সদর দফতরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় অভিযানকারীরা সেখানে এমন পরিস্থিতি দেখেন যেন ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা সৃষ্টির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে। কারা কনভেনশন হল ও সংলগ্ন এলাকায় শতাধিক মাটির পাত্র, পরিত্যক্ত বিভিন্ন ধরনের পাত্র, ওয়ান-টাইম কাপ ও থালা, সেখানে সংরক্ষিত বাঁশের ফোকর এবং পরিত্যক্ত গাছের কোঠরে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশকনিধন কার্যক্রমে করপোরেশনের ২০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং ১২ জন মশককর্মী অংশ নেন। এই পরিচ্ছন্নতা ও মশকনিধন কার্যক্রম নগর ভবনে স্থাপিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হতে করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: ফজলে শামসুল কবির সরাসরি তদারকি করেন।

একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে গতকাল বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ছয় মামলায় মোট দুই লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অঞ্চল-৩ এর আওতাধীন বনানী ও মগবাজার এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: জুলকার নায়ন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাখী আহমেদ মশকনিধন অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান পরিচালনাকালে বাসা বাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন ও নির্মাণাধীন ভবনে, ফাঁকা প্লটে মশকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। একটি ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ভবনের মালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অঞ্চল-০৫ এর আওতাধীন মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোড এলাকায় মশকনিধন অভিযানে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় চারটি মামলায় মোট এক লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ, নিরীক্ষা কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: নাসির উদ্দিন মাহমুদ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাওয়াত মেহজাবীন। অঞ্চল-১০ এর আওতাধীন ৩৮ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত মাস্টার বাড়ি এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল বাসেত অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে একটি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় মোট ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। কারো যেন কোনো দায় নেই। প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে সবাই যেন তামাশা দেখছে। জি এম কাদের বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তির পাশাপাশি চিকিৎসকদের পরামর্শে বাসাবাড়িতে কত লাখ মানুষ চিকিৎসা নিয়েছে তার কোনো হিসাব নেই কারো কাছে। হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছে না ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের মাঝে চিকিৎসার জন্য হাহাকার উঠেছে, দেখার যেন কেউ নেই। ডেঙ্গুতে মানুষের মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না। তিনি দাবি করেন, রাজধানীর দুই সিটি কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু নিধনের নামে সাধারণ মানুষকে হতাশ করেছে। মশানিধনে যে ওষুধ স্প্রে করছে, তাতে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস নেই। অপর দিকে সরকারও যেন মশা দমনে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। মশা যে পর্যন্ত না কমবে সে পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এবং মৃত্যু সংখ্যাও কমবে না। বেশির ভাগ বড় বিল্ডিংয়ের আশপাশে, ড্রেনে ও ফুলের টবে লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে আমাদের সবার একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, মশা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আমার মনে হয় সারা বছরই মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। যারা বাড়ির মালিক রয়েছেন তাদেরও সতর্ক হতে হবে। তবে মশকনিধনে মূল অ্যাকশন সিটি করপোরেশনকেই নিতে হবে। আমরা সেই উদ্যোগ দেখতে চাই। সারা বছর ভালো মানের সঠিক পরিমাণ ওষুধ স্প্রে করা প্রয়োজন বলে মনে করি। তাছাড়া শুধু ঢাকায় মশানিধনে মনোযোগ দিলে হবে না। সব সিটি করপোরেশন ও জেলা-উপজেলায় কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement