১৬ মে ২০২৪, ০২ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫
`


ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রাথমিকের পাঠদান জরাজীর্ণ ক্লাসরুমে বৃষ্টির পানি

আইএমইডির প্রতিবেদন মানতে নারাজ ডিপিই
-

দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে প্রাথমিকের পাঠদান। আবার অনেক জরাজীর্ণ ক্লাসরুমে পড়ছে বৃষ্টির পানি। যদিও প্রাথমিকের শিক্ষার মান উন্নয়নে আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও নানাভাবে পাশে থাকছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা। এরপরেও শিক্ষার গোড়াপত্তনের এই স্তরে বেহাল দশার নানা দিক তুলে ধরে সম্প্রতি মূল্যায়ণ প্রতিবেদক প্রকাশ করেছে সরকারের প্রকল্প মনিটরিংয়ের একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক একটি সমীক্ষায় প্রাথমিকের শিক্ষার সার্বিক এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশে এখনো ২৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় জরাজীর্ণ। দেয়ালে ফাটল, প্লাস্টার খসে গেছে, দরজা ভাঙা। ভবনের ছাদে ফাটল থাকায় ১৯ শতাংশ শ্রেণিকক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ, বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। এমনকি ২৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে নলকূপ নেই কিংবা থাকলেও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
অন্য দিকে আইএমইডির এই প্রতিবেদনের সাথে একমত নয় নজরদারি ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। জরাজীর্ণ বিদ্যালয় সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ড. মু. নূরুল আমীন চৌধুরী গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, আইএমইডি যেভাবে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এর তথ্য সঠিক নয়। এখানে অনেক তথ্যগত ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত করা আমাদের রেগুলার কাজ। তিনি বলেন, সারা দেশে হাজার হাজার স্কুল রয়েছে। প্রতি বছর এ খাতে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়। প্রয়োজনের আলোকে এসব কাজ করা হয়।
সরকারের প্রকল্প মনিটরিংয়ের একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সমীক্ষায় এ চিত্র উঠে এসেছে। আইএমইডির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা সম্প্রসারণের মূল কার্যক্রম হিসেবে ‘তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৩)’ বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এতে অর্থায়ন করে ১০টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। প্রকল্পটির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও শিক্ষার মানোন্নয়নে ১৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। নতুন করে বর্ধিত ধাপ বা চতুর্থ পর্যায়ে ব্যয় করা হচ্ছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র মতে, পিইডিপি-৩ প্রকল্পটি ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দু’দফায় সংশোধনী প্রস্তাবের মাধ্যমে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ে। এ প্রকল্পে আর্থিক ব্যয় ৯২ ও অবকাঠামো বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৩ শতাংশ। এর মাধ্যমে নতুন করে ৩৯ হাজার শ্রেণিকক্ষ ও নলকূপ স্থাপন করা হয়। ৩১ হাজারের বেশি টয়লেট মেরামত এবং সাড়ে ২৮ হাজার ওয়াশব্লক নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ নানামুখী কাজ করা হয় প্রকল্পটির মাধ্যমে।
আইএমইডির সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলোর কোনোটায় মেঝেতে গর্ত, লাইট-ফ্যান থাকলেও নষ্ট, কোনোটায় আবার অল্প বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ১৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে কোনো নলকূপ নেই। একই সংখ্যক বিদ্যালয়ে নলকূপ থাকলেও ব্যবহার অযোগ্য কিংবা নষ্ট। সমীক্ষায় ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের শ্রেণিকক্ষ নিয়ে নানা সমস্যার কথা জানিয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশের মতেই শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষ ছোট। তাই সবার বসার জায়গা হয় না। ফ্যান না থাকায় গরমে কষ্ট হয় বলে জানিয়েছে ১৪ শতাংশ খুদে শিক্ষার্থী। এমনকি প্রায় ১১ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে শ্রেণিকক্ষে বিদ্যুৎ নেই। ১৯ শতাংশ বিদ্যালয় ভবনের ছাদে ফাটল থাকায় বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে বলে অভিযোগ। আর ১০ শতাংশ বিদ্যালয়ে কোনো কমন রুম নেই। ২৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট নেই। টয়লেট ব্যবহারে সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানিয়েছে ১১ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১৯ শতাংশই আবার বিদ্যালয়ের টয়লেট সবসময় খোলা না থাকার কথা জানিয়েছে। আর ব্যবহার উপযোগী নয় মনে করে ১১ শতাংশ খুদে শিক্ষার্থী। অপরিষ্কার থাকায় টয়লেটে যেতে খারাপ লাগার কথা জানিয়েছে ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিভিন্ন জেলার ৩২টি উপজেলার ৬০০ বিদ্যালয়ের ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী, ১ হাজার ২০০ শিক্ষক ও সামনসংখ্যক অভিভাবকসহ ৩ হাজার ৭০০-এরও বেশি লোকের তথ্য নিয়ে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ড. মু. নূরুল আমীন চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানান, আইএমইডির প্রতিবেদনে নষ্ট নলকূপের যে তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে এটা সঠিক নয়। আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান ও সর্বশেষ হিসাব রয়েছে সেখানে শতকরা ৯৮ ভাগ নলকূপই পানি পান করার উপযোগী। কোনো নলকূপ নষ্ট হলেও সেগুলো সাথে সাথেই মেরামত করা হয়। সেই ফান্ডও আমরা সব স্কুলকে দিয়ে থাকি। এ ছাড়া স্কুল মেরামতের জন্যও বছরে দই দফায় স্কুলের শিক্ষার্থী অনুপাতে স্লিপের অর্থ বরাদ্দ করি। কাজেই ঢালাওভাবে যে তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমইডি এটা সঠিক নয়। এই কর্মকর্তা আরো জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সাথে আমাদের চুক্তি করা আছে। কোথাও কাজের ভুলত্রুটি থাকলে পরবর্তী সময়ে এসব ঠিক করে দেয়ার এক ধরনের সমঝোতা আছে। মেজর কোনো সমস্যা থাকলে তাদের তাৎক্ষণিক জানানো হয়।
এ দিকে প্রতিবেদনের বিষয়ে আইএমইডির সংশ্লিষ্ট সেক্টরের মহাপরিচালক মু. শুকুর আলী জানান, স্যাম্পল মডেলিং করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, সুতরাং স্কুলের সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। অনেক আগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ায় এখন মেরামতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আগের ঠিকাদার হোক কিংবা নতুন করে বরাদ্দ দিয়ে হলেও এসব বিদ্যালয় ঠিক করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে বলা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
রংপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ৩টি এলএমএনজি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার দুবাইয়ে বিদেশীদের গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশীও ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে টিএমএসএস-এর সাবেক পরিচালকের জেল ও জরিমানা তজুমদ্দিনে ঢাকাগামী লঞ্চ থেকে ৩০০ কেজি পাঙ্গাসের পোনা আটক আওয়ামী লীগ কারো দয়া-দাক্ষিণ্য নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি : নানক নির্বাচনের মাঝেই ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কেন ‘সুর বদল’ মমতা ব্যানার্জীর? গঙ্গার পানির নায্য হিস্যা আদায়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে রংপুর খামারিদের মানববন্ধন কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, রেললাইন অবরোধ জামায়াতে ইসলামী এখন দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল : মাওলানা রফিক বড়াইগ্রামে ঘাসের জমি থেকে মহিলার লাশ উদ্ধার

সকল