১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫
`


বেসরকারিতে বিদেশী ঋণের ৬০ ভাগ ৫ দেশ থেকে

-

ব্যবসায়ীদের সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের দিকেই ঝোঁক
-বাড়ছে বকেয়া এলসির দায়
-চাপ বাড়ছে রিজার্ভের ওপর

বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ বাড়ছে। তবে এ বিদেশী ঋণ সংগ্রহে ব্যবসায়ীদের সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের দিকেই ঝোঁক বেশি। বেসরকারি খাতে মোট বিদেশী ঋণের প্রায় ৬০ শতাংশই এসেছে এ তিনটি দেশসহ পাঁচ দেশ থেকে। গত মার্চ প্রান্তিকে যেখানে বিদেশী ঋণ এসেছিল এক হাজার ৪০৮ কোটি মার্কিন ডলার; এর মধ্যে শীর্ষ পাঁচ দেশ থেকেই এসেছে ৮২১ কোটি ডলার। এসব ঋণের বেশির ভাগ অংশই স্বল্পমেয়াদি ও বায়ার্স ক্রেডিট। তাই ঋণ পরিশোধের চাপও বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব ঋণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেয়, তেমনি বায়ার্স ক্রেডিটের আড়ালে অর্থপাচারের ঝুঁকি থাকে। অর্থ পাচার হচ্ছে কি না সে বিষয়ে তদারকি জোরদার হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, স্বল্পমেয়াদি ঋণ রিজার্ভের ওপর নিঃসন্দেহে চাপ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া যারা এসব ঋণ আনছেন রফতানিকারক ছাড়া অন্যরা তো আর বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করছেন না। কিন্তু এসব ঋণের সুদসহ মুনাফা পরিশোধ করতে হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। এ কারণে এসব ঋণ পরিশোধ করার সময় বৈদেশিক মুদ্রা কিনেই পরিশোধ করতে হয়। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়ে। অপর দিকে ঋণের সুদহার প্রথমে তুলনামূলক কম হলেও কার্যকর হার অনেক বেড়ে যায়। কারণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়জনিত ঝুঁকি সুদহারের সাথে যুক্ত হয়। যেমন লাইবল রেট এখন বেশি। আবার ডলারের দাম যখন ৮০ বা ৯০ টাকা ছিল তখন কেউ ঋণ নিলেন; কিন্তু পরিশোধের সময় দেখা গেল প্রতি ডলারের মূল্য ১১০ টাকা। তখন ১১০ টাকা মূল্যে ডলার কিনেই সুদে আসলে পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে রফতানিকারক ছাড়া এসব ঋণে নিরুৎসাহিত করাই ভালো।

বায়ার্স ক্রেডিট হলো ব্যবসায়ী বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য আমদানি করে বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকেই ঋণ নিয়ে সেই অর্থ পরিশোধ করে। বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিতে গেলে গ্যারান্টি দিতে হয়। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানিকারকদের থেকে করপোরেট গ্যারান্টি, পারসোনাল গ্যারান্টি ও তৃতীয় পক্ষের গ্যারান্টি নিয়ে থাকে। বায়ার্স ক্রেডিটের গ্যারান্টির জন্য আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হতো; কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তা শিথিল করে দেয়। এর পর থেকে বায়ার্স ক্রেডিট গ্যারান্টির জন্য এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয় না। গত বছরের ১৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্যের দিকেই ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেশি। গত মার্চ শেষে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশী ঋণ এসেছে এক হাজার ৪০৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। এর মধ্যে শীর্ষ পাঁচ দেশ থেকেই এসেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে ৩১২ কোটি ৫২ লাখ ডলার, যা মোট ঋণের ২২ শতাংশের উপরে। আরব আমিরাত থেকে এসেছে ২৩২ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, যা মোট ঋণের ১৬.৫৩ শতাংশ। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে তৃতীয় পছন্দের দেশ হলো যুক্তরাজ্য। এই দেশ থেকে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ এসেছে ১০০ কোটি ২৯ লাখ ডলার, যা মোট ঋণের ১৪ শতাংশ। শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে অপর দুইটি দেশ হলো- হংকং ৯২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার এবং চীন থেকে এসেছে ৮২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।


বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত মার্চ শেষে বায়ার্স ক্রেডিট এসেছে ৮১৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, যা মোট ঋণের প্রায় ৫৮ শতাংশ। এ দিকে বকেয়া এলসির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। ডলার সঙ্কট দেখা দিলে আমদানিকারকরা ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে এলসির অর্থ পরিশোধ না করে বকেয়া রাখা হয়। এতে বাড়তি চার্জ বা ফি গুনতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, মার্চ শেষে বেসরকারি খাতে ডেফার্ড এলসি বা বকেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, যা মোট ঋণের প্রায় ৬ শতাংশ। গত বছরের জুন শেষে যা ছিল ৬৯ কোটি ডলার। অপর দিকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ একসময় শূন্যের কোঠায় ছিল। এখন তা বেড়ে ৩৭২ কোটি ৪৫ লাখ ডলার হয়েছে। এ ঋণ মোট ঋণের প্রায় সাড়ে ২৬ শতাংশ। আর ফরেন ব্যাক টু ব্যাক ২০১৯ সাল শেষেও শূন্যের কোঠায় ছিল। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেসরকারি খাতে যেসব বিদেশী ঋণ আসছে তা সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা কঠোরভাবে তদারকি করা প্রয়োজন। একই সাথে এসব ঋণের আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না তাও কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। দেখা গেল কাগজে কলমে পণ্য এলো, বাস্তবে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ সৃষ্টি হয়ে রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে। সর্বশেষ হিসাব মতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। যদিও আইএমএফের হিসাবে ২২ বিলিয়ন। ঋণের কিস্তি ছাড় পেতে হলে প্রকৃত রিজার্ভ ২৪ বিলিয়নের উপরে রাখতে হবে। এ কারণে এমনিতেই চাপের মধ্যে আছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এর ওপর স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ বেড়ে গেলে এ সঙ্কট আরো প্রকট আকারে দেখা দিতে পারে। কেননা, সামনে রূপপুরসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আরকান আর্মির গুলিতে বাংলাদেশী নিহত ১২ দলীয় জোটের সাথে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক আজাদ কাশ্মিরে সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত, আহত ৯০ বাগাতিপাড়ায় ড্রামের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু ভিসার অপেক্ষায় ১১ হাজার ১৬৭ হজযাত্রী বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লায় হত্যা মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৯ জনের যাবজ্জীবন রাশিয়ায় সেতু ভেঙে নদীতে বাস, নিহত ৭ এসএসসি : পাসের হার যশোর বোর্ডে সর্বোচ্চ, সর্বনিম্ন সিলেটে এসএসসির ফলাফলে কেমন করলেন বাগাতিপাড়ার সেই ৩ নারী ইউপি সদস্য এসএসসি-সমমানের ফলাফলে চ্যাম্পিয়ন যশোর বোর্ড

সকল