১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


১৩ বছরে সারে ভর্তুকি ৮২ হাজার কোটি টাকা

আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে সার ও পরিবহন খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি; চলতি অর্থবছর ভর্তুকি ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে
-

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে সরকার। এ জন্য কৃষককে সার, বীজসহ কৃষি উপকরণে প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত তথা বিগত ১৩ বছরে শুধুমাত্র সারেই ভর্তুকি দিয়েছে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সারে ভর্তুকির জন্য ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে সরকারের। কিন্তু, আন্তর্জাতিকভাবে সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভর্তুকির পরিমাণ দ্বিগুণ থেকে আড়াই গুণ বেড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে আসছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবনা যাচ্ছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, সারের দাম আন্তর্জাতিকভাবে বেড়েছে, তাই এটা ন্যাচারালি বাড়বে।
কী পরিমাণ বাড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো ষাণ¥াসিক হিসাব করি। প্রথম ছয় মাসের (২০২১-২২ অর্থবছর) হিসাব চলছে, চূড়ান্ত এখনো হয়নি। তবে এর পরিমাণ অনেক হবে। কারণ শুধু সারের দাম বাড়েনি। পরিবহন খরচ-জাহাজ ভাড়া সেটাও ব্যাপক হারে বেড়েছে। এই দুই বৃদ্ধিই যুক্ত হচ্ছে। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় উঠবে জানিয়ে তিনি বলেন, ৫০ কোটি টাকার উপরে হলেই সেটা চূড়ান্তের জন্য ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় যায়। এটাও যাবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা নয়া দিগন্তকে বলেন, উৎপাদন যাতে ভালোভাবে চালু রাখা যায়, কৃষকরা যাতে উপকৃত হনÑ এজন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিবিড় ও সম্প্রসারিত চাষাবাদের প্রয়োজনে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রাসায়নিক সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট ৬৬ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ইউরিয়া ২৬ লাখ টন, টিএসপি ৭ লাখ টন, ডিএপি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন ও এমওপি ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সারের চাহিদা ছিল ইউরিয়া ২৫ লাখ ৫০ হাজার টন, টিএসপি ৫ লাখ, ডিএপি ১৫ লাখ টন ও এমওপি ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ২৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন সারের চাহিদা ছিল। এর মধ্যে ১০ লাখ ২০ হাজার টন দেশের কারখানায় উৎপাদন হয়েছে। বাকি ১৫ লাখ ৩০ হাজার টনই আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মেটানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) চাহিদার ২৬ লাখ টনের মধ্যে ৯ লাখ টন দেশের সার কারখানাগুলো থেকে এবং বাকি ১৭ লাখ টনই আমদানি করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমদানি হওয়া সারের বেশির ভাগই ইউরিয়া। কানাডা, রাশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও তিউনিসিয়া থেকে এই সার আমদানি হয়ে থাকে।
বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের ক্ষমতার তেরো বছরে ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা সারে ভর্তুকি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়। তার আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) ৭ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সারে ভর্তুকির জন্য ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে ইউরিয়াসহ সব ধরনের সারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থেকে সারের দাম বাড়াতে চান না কৃষি সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ভর্তুকির মাধ্যমে দাম কমিয়ে ৮০ টাকার টিএসপি সার ২২ টাকা, ৭০ টাকার এমওপি সার ১৫ টাকা ও ৯০ টাকার ডিএপি সার ১৬ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। যেহেতু সারের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে না তাই, বর্তমান বাজারদর অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ দ্বিগুণ থেকে আড়াইগুণ বৃদ্ধি পাবে। সেটা ২০ হাজার কোটি টাকার উপরে চলে যাবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক সম্প্রতি বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে ভর্তুকি যতই বাড়–ক, এখনই সরকার সারের দাম বাড়াবে না। বাজেট থেকেই ভর্তুকি সমন্বয় করা হবে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে কৃষি খাতে ৯৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে, এ বছর ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে তিন গুণে উন্নীত হবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, বোরো মৌসুমের জন্য দেশে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তার পরও সঙ্কটের গুজব ছড়িয়ে কেউ কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement