২১ মে ২০২৪, ০৭ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫
`


মালদ্বীপে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট শুরু হওয়ায় প্রবাসীরা খুশি

সাশ্রয়ীমূল্যে টিকিটসহ ২ রাত ৩ দিনের প্যাকেজ
-

সাগরবেষ্টিত নয়নাভিরাম অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ মালদ্বীপে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলাচল শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে দেশটিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এর আগে দীর্ঘদিন তারা মালদ্বিভিয়ান ও শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে অতিরিক্ত দামে টিকিট কিনে দেশে আসা-যাওয়া করছিলেন। দুটি এয়ারলাইন্সের তুলনায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে এখন একজন যাত্রী কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা কমমূল্যে বিমানের টিকিট কিনে ট্র্যাভেল করতে পারছেন। এতে প্রবাসীরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া ছাড়াও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশেই থেকে যাচ্ছে। এর জন্য প্রবাসীরা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এ দিকে মালদ্বীপে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশীসহ অন্যান্য দেশের যাত্রীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সর্বশেষ ৫ ডিসেম্বর মালদ্বীপ থেকে দেশের উদ্দেশে ছেড়ে আসা (১৬৪ সিটের, বোয়িং-৭৩৭-৮০০) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের আসন ছিল পরিপূর্ণ। খাবার থেকে শুরু করে সেবার মানেও সন্তুষ্ট ছিলেন যাত্রীরা। কেবিন ক্রুদের সরবরাহ করা ট্র্যাভেলার মন্তব্যের ঘরে এমনি মতামত তুলে ধরেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। এর আগে ৪ ডিসেম্বর মালদ্বীপের হুলহুমালে ফেরিঘাট থেকে ‘স্যান্ড ব্যাক আইল্যান্ড’ দ্বীপে অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়ার সময় সি-বোটে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মো: কামরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে ‘ঢাকা-মালদ্বীপ-ঢাকা’ ফ্লাইট চলাচল উদ্বোধন এবং মালদ্বীপের নয়নাভিরাম পর্যটন শিল্প সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বলেন, মালদ্বীপে পানিকেন্দ্রিক যে সৌন্দর্য আছে, সেই জায়গাটি উপভোগ করার উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা এসেছিলাম। আমার মনে হয়, আমরা আমাদের সেই উদ্দেশ্যটা পূরণ করেই যেতে পারব। এতে আমরা খুশি। আমরাও চাই, এই সুন্দরটা দেখার জন্য আপনারাও মালদ্বীপে আসেন এবং বাংলাদেশে যেন এ ধরনের একটা সৌন্দর্য আমরা বৃদ্ধি করতে পারি সে জন্য আপনারাও (সাংবাদিক) বিশেষ খেয়াল রাখবেন। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের মালদ্বীপ ঘোরার সুযোগ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মি. কামরুল ইসলাম বলেন, বেসিক্যালি ইউএস বাংলা-এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশের এভিয়েশন এবং ট্যুরিজমকে ডেভেলপড করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই ডেভেলপমেন্টের জন্য যাদের ভূমিকাটা সর্বাগ্রে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের ওভারঅল মিডিয়া। সেই মিডিয়া যেমন ইউএস-বাংলার পাশে ছিল, বাংলাদেশ ট্যুরিজমের পাশে ছিল এবং বাংলাদেশের ট্যুরিস্টদেরও পাশে ছিল। তারই প্রেক্ষাপটে আজকের মালদ্বীপ ট্যুর এবং সাংবাদিকদের মালদ্বীপে নিয়ে আসা। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স মালদ্বীপে নতুন করে ফ্লাইট চলাচল শুরু করেছেÑ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা জানেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স গত ৮ বছর ধরে প্ল্যানিং এবং ইমপ্লিমেন্টেশনকে মাথায় রেখে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের বাংলাদেশী ভাইবোনরা যেখানে অবস্থান করছেন, যেমন আবুধাবি, মাস্কাট, দোহা, দুবাই, সিঙ্গাপুর কিংবা কুয়ালালামপুর প্রত্যেকটা জায়গায় বাংলাদেশীদের আমরা সেবা দিয়ে আসছি। সেভাবে মালদ্বীপেও আমাদের প্রচুর বাংলাদেশী রয়েছে। তাদেরকেও আমরা সেবা দেয়ার জন্যই সরাসরি ফ্লাইট শুরু করেছি। ফ্লাইট চলাচল শুরু করার সুযোগ দেয়ার জন্য আমি আমার এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ওই দিনের একই ফ্লাইটে দেশে ফিরছিলেন ফেনীর বাসিন্দা এমডি বোরহান উদ্দিন। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি মালদ্বীপের বিলিগিলি, দ্য মেরিনা ক্রস রোড এবং হুলহুমালে ঘুরেছি। দেশটি অনেক সুন্দর। আমাদের দেশে যদি এমন থাকত তাহলে টাকা খরচ করে আসতে হতো না। দেশেই ঘুরতাম। আমার মনে হয় আমাদের সরকারের এই দিকটায় নজরটা কম। কক্সবাজার ও কুয়াকাটাকে আরো সাজানো গোছানো উচিত। অপর প্রবাসী টিটু ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট শুরু হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নয়া দিগন্তকে বলেন, শুধু আমি না আমার মতো মালদ্বীপে থাকা লাখো প্রবাসীই এখন উচ্ছ্বসিত। কারণ দেশীয় এয়ারলাইন্স বলে কথা। মন খুলে কথা বলা যাচ্ছে। তা ছাড়া ঢাকা থেকে ফ্লাইটে আসার সময় পাইলট জাকারিয়া সাহেবের টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং ছিল খুবই ভালো। গ্রাউন্ড সার্ভিস, ফ্লাইটের ইন সার্ভিসও (খাবারের সার্বিক মান) ভালো ছিল বলে যাত্রীরা তাদের মতামতের ঘরে তুলে ধরেন। তারা জানান, আগে আমরা মালদ্বীপ থেকে ৬৫ হাজার টাকায় মালদ্বিভিয়ান ও শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সে রিটার্ন বিমানের টিকিট কেটে দেশে যাতায়াত করতাম। এখন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এসে সেই টিকিটের দাম নির্ধারণ করেছে রিটার্ন ৪৫ হাজার ৫৪৫ টাকা। এতে আমরা প্রবাসীরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি, তেমনি দেশের টাকা দেশেই থাকছে বলে মনে করছেন তারা। তারা এয়ারলাইন্সটির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনার কথা জানান।
উল্লেখ্য, দশম আন্তর্জাতিক গন্তব্য হিসাবে ১৯ নভেম্বর থেকে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আধুনিকতার অপূর্ব মিশ্রণের শহর মালদ্বীপের ভ্রমণকে উপভোগ্য করতে প্রতিজনে ৫৮ হাজার ৯৯০ টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। দুই রাত তিন দিন থাকা, ঢাকা-মালে-ঢাকা সব ধরনের ট্যাক্সসহ এয়ার টিকিট, এয়ারপোর্ট, হোটেল, এয়ারপোর্ট যাতায়াত, সকালের নাশতাসহ আরো নানাবিধ সুযোগ সুবিধা রয়েছে ট্যুর প্যাকেজে।


আরো সংবাদ



premium cement