১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


আমরা সাফল্যের সাথে করোনা মোকাবেলা করেছি : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

-

‘করোনার এক বছরে বাংলাদেশ : সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাংলাদেশে করোনা এখনো চলছে, শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু উন্নত বিশ্ব অথবা আমাদের পাশের দেশের তুলনায় আমরা অনেক সাফল্যের সাথে করোনা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা খুব দ্রুত করোনাভাইরাসের টিকা আনতে পেরেছি। বিশ্বের খুব কম দেশই করোনার টিকা দিতে পেরেছে। আমাদের এখানে সুস্থতার হার ৯০ শতাংশ, মৃত্যু খুবই কম যদিও প্রতিটা মৃত্যুই দুঃখজনক। তিনি বলেন, ভারতে যেখানে পৌনে দুই লাখ মৃত্যু হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে পাঁচ লাখ। আর বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে আট হাজার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগিতায় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) আয়োজিত এ সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি বলেন, আমরা বেশির ভাগ করোনা আক্রান্তকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়ে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে করোনা ব্যবস্থাপনা করেছি। শুরুতে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল, ভাইরাসটি একেবারে নতুন ছিল বলে এর চিকিৎসা কী বিশ্বের কোনো দেশই প্রথমে জানত না। পরে অন্যান্য দেশের মতো আমরাও ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছি। আমাদের আইসিইউ বেড ছিল না, পরে বাড়িয়েছি। আমরা ভেন্টিলেটর থেকে হাই ফ্লো ন্যাজাল কেনোলা এবং কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করেছি। এখন ৯০টি হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল কেনোলা রয়েছে এবং রয়েছে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ। আমরা শুরুতে ১৫ দিনে কয়েক হাজার ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দিতে পেরেছি। এর আগে কখনো এমনটি ঘটেনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা-সঙ্কটে আমরা একটি কথা উপলব্ধি করতে পেরেছি। তা হলো স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। এই খাতে এক ডলার বিনিয়োগ করলে ১০ ডলার ফিরে আসে করোনাকালেই আমরা বুঝতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমাদেরকে গবেষণার দিকে নজর দিতে হবে। দেশেই কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির টিকা তৈরির সক্ষমতা আছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, করোনার টিকা আমরা এখানেই উৎপাদন করব। এখানে ওষুধ প্রশাসনের অধীন ল্যাবকে সর্বাধুনিক করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে এই ল্যাবের একটি অংশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিয়েছে। অপর অংশটির অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করার চেষ্টা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ করোনা-মুক্ত হয়নি অথচ মানুষ এখনি বেপরোয়াভাবে চলতে শুরু করেছেন। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, মাস্ক পরছেন না।
বিএসএমএমইউ’র মিলন হলে আয়োজিত এই সেমিনারে বিএইচআরএফ’র সহসভাপতি জান্নাতুল বাকেয়া কেকা সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের সভাপতি তৌফিক মারুফ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক, বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া, সাবেক ভিসি অধ্যাপক মো: নজরুল ইসলাম, করোনা-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান, বিএমএ মহাসচিব ডা: ইহতেশামুল হক চৌধুরী। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
সেমিনারে ভাইরাস গবেষণায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়ার জন্য অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করেন। কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, করোনাভাইরাস দ্রুত রূপান্তর হচ্ছে। ভেরিয়েন্ট চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। করোনা-পরবর্তী রোগীদের ওপর গবেষণা করা প্রয়োজন। অধ্যাপক মো: নজরুল ইসলাম বলেন, শীতে আমাদের দেশে করোনা কমে গিয়েছিল। এখন গরম পড়ায় ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে এটা খুব বেশি বাড়বে না বলে তিনি মনে করেন। তবে সামনের গরমে একটি ছোট ঢেউ আসতে পারে। অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে; কারণ এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান বলেন, টিকার দ্বিতীয় ডোজের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে ভীতি দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত করোনাকালে ডিউটি করার জন্য চিকিৎসকদের প্রণোদনার টাকাটা দেয়া হয়নি, এটা দুঃখজনক।

 


আরো সংবাদ



premium cement