২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী সুনামগঞ্জের বাঁশতলা শহীদ স্মৃতিসৌধ

সুনামগঞ্জের বাঁশতলা শহীদ স্মৃতিসৌধ মহান মুক্তিযুদ্ধের উপত্যকা -

‘সবুজের বুকে লাল, সূর্যটা ঝলমল উজ্জ্বল প্রাণেরও বন্যা’ দেশের গানের মনোরম এমন নজরকাড়া দৃশ্যের দেখা মেলে পাহাড়ের পাদদেশে। মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জবাসীর অনন্য ভূমিকা ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান ইতিহাসের পাতায় গৌরবের অধ্যায় হিসেবে চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে। সুনামগঞ্জের সীমান্তঘেরা মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের সম্মানে দাঁড়িয়ে আছে বাঁশতলা-হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ। এটি দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত। সুনামগঞ্জের পর্যটন এলাকা হিসেবে যে ক’টি স্থান ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে, তার মধ্যে এটিও একটি। পাহাড়ি মনমাতানো এই দৃশ্য পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে প্রতিনিয়তই।
ভারতীয় সীমানার কোলঘেঁষা বাংলাদেশের জুমগাঁও গারো পাহাড়ের অবস্থান অন্তত ২০০ বছরের পুরনো আদিবাসী ছোট্ট এক পাহাড়ি গ্রাম। প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী এখানে ছুটে যাচ্ছেন। জুমগাঁও গ্রামে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের প্রায় ২৬টি পরিবার এখানে বসবাস করেন। এই এলাকার চারদিকে সবুজের হাতছানি। শেষ বিকেলে পাখির কলকাকলী ও বিকেলের মিষ্টি রোদে মৃদু বাতাস প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। বিস্তৃর্ণ এলাকায় ছোট ছোট টিলা আর পাহাড়ে সাজানো দৃশ্য নজরকাড়া। এখানের পাহাড়ি ঝরনা চোখে পড়ার মতো। হকনগরে মৌলা নদীর ওপর স্লুইচগেটটি দেখতে প্রায় জলপ্রবাহের মতোই। পাহাড়ি ঝনার মধ্যে এ স্লুইচগেট আলাদা সৌন্দর্য্যরে সৃষ্টি করেছে। স্লুুইচগেটে পানির ঝিরঝির শব্দে গোটা এলাকা যেন মুখরিত হয়ে আছে। এই স্লুইচগেট পেরিয়ে একটু সামনে গেলই দেখা যাবে পাহাড়ঘেঁষা এই ‘শহীদ স্মৃতিসৌধটি। এখনাকার আশপাশের পরিবেশ খুবই শান্ত ও মনোরম। সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশ যেন মিতালী পেতেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ের সমতলে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাঁশতলা-হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ মুক্তিযুদ্ধের এক উপত্যকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫ নং সেক্টরের চেলা (বাঁশতলা) সাব-সেক্টর সদর দফতর ছিল এটি। এ সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন এ এস হেলাল উদ্দিন। পরবর্তী সময়ে ছিলেন লে. আব্দুর রউফ ও লে. মাহবুব। এ সেক্টরে যুদ্ধ পরিচালনায় ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করেন এম এন আব্দুল হক, শহিদ চৌধুরীসহ আরো অনেকে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে দেশব্যাপী অভূতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে এম এন এ হক ডা: হারিছ আলী, হেমেন্দ্র দাস পুরকায়স্থ, ডা: আব্দুল মছব্বির (বাঁশতলা) হাজী মফিজ আলী (বড়খাল), সামছুল হক চেয়ারম্যান (বাংলাবাজার), আব্দুল কাদির ও নয়ন ডাক্তার (নরসিংপুর), ডা: আহসান উল্লাহ (ভাঙ্গাপাড়া), ডা: আব্দুল হামিদ (টেংরাটিলা) মদন মোহন নন্দী (হাসাউড়া), আব্দুল কাদের মেম্বার (কান্দাগাঁও), আলী আহম্মদ (বাংলাবাজার), আব্দুর রইছ চৌধুরী (লক্ষ্মীপুর) প্রমুখ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বাঁশতলায় সমবেত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাঁশতলাসহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের এখানেই দাফন করা হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সামছু মিয়া চৌধুরী এমপির উদ্যোগে এখানকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর পাকা করা হয়। পরবর্তীতে এসব শহীদদের স্মৃতি অমøান করে রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেলা (বাঁশতলা) সাব-সেক্টর কমান্ডার এ এস হেলাল উদ্দিন হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। এটি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে এখন ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। পরবর্তীতে সরকারি অর্থায়নে হকনগর স্মৃতিসৌধ এলাকায় পর্যটকদের জন্যে নির্মাণ করা হয় রেস্ট হাউজ, হকনগর কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। চেলা (বাঁশতলা) সাব-সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ক্যাপ্টেন আকবর হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী, আব্দুল হালিম ও আব্দুল মজিদ ‘বীরপ্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, ছাতকের এম এন এ আব্দুল হক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন ৫ নং সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধে এলাকায় তার বিশেষ অবদানের জন্যে পরবর্তীতে তার নামানুসারে গ্রামের নামকরণ করা হয় ‘হকনগর’। মরহুম আব্দুল হকের নামানুসারে হকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হকনগর গ্রাম ও হকনগর স্মৃতিসৌধসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ৫ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা, জাতীয় পরিষদ সদস্য আব্দুল হকের কবর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাঁশতলা-হকনগর শহিদ স্মৃতিসৌধে স্থানান্তরিত করা হয়। ওই দিন সীমান্তের জিরো পয়েন্ট শহিদ স্মৃতিসৌধ এলাকায় উৎসুক জনতার উপচেপড়া ভিড় জমে। উপস্থিত সকলেই লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বীর সেনানীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঁশতলার এই মাঠে তাবু করে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরই তিনি এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।


আরো সংবাদ



premium cement
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই

সকল