১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


ঝালকাঠিতে ৬ বছরের শিশু আসামি আদালতে হাজির অতঃপর অব্যাহতি

-

ছোট্ট শিশুটির বয়স ছয় বছর। তার নাম মো: শাওন। শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম ঝালকাঠির মো: শামসুলের ছেলে। শাওন স্থানীয় নূরানি মাদরাসার প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। পশ্চিম ঝালকাঠি এলাকার একটি ফৌজদারি মামলায় শাওনের বয়স ২৮ বছর উল্লেখ করে ১ নম্বর আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই মন্টু মিয়া শাওনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আসামি শাওন গতকাল সোমবার আদালতে উপস্থিত হলে তাকে মামলার বিবরণ ও বয়স বিবেচনায় শাওনকে অব্যাহতি প্রদান করেন। সেই সাথে মামলার অপর আসামি শাওনের বড় ভাই শামীমের (২২) জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট তপন কুমার রায় চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট এম আলম খান কামাল।
মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম ঝালকাঠি এলাকার কামরুল ইসলাম বাচ্চু বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন। অভিযোগে বলা হয় তার ছেলে ইয়াদিন ইসলাম অনিককে মারধর করে টাকা ও অন্যান্য মালামাল ছিনতাই করে শাওনকে ও তার বড় ভাই শামীম আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। গত বছরের ২৪ মে’র ঘটনায় সদর থানায় ২৭ মে ৩৪১, ৩২৩, ৩২৪, ৩০৭, ৩৭৯ ও ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, শাওন ও শামীম ভিকটিমের পথ রোধ করে। শাওন তার হাতে থাকা ধারালো দাও দিয়া কুপিয়ে বাম চোখের নিচে রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় ভিকটিম অনিকের সাথে থাকা ছয় হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। উল্লিখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাত আসামিরা কিলঘুষি মেরে রাস্তায় ফেলে রেখে বীরদর্পে স্থান ত্যাগ করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই মন্টু মিয়া শাওন ও শামীমকে অভিযুক্ত করে ২২ অক্টোবর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় প্রকাশ্যে ও গোপন তদন্তে অত্র মামলার ঘটনায় আসামি মো: শাওন (২৮) ও মো: শামীম (২২) তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩৪১, ৩২৩, ৩২৪, ৫০৬ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনাসাপেক্ষে আসামিদ্বয়কে প্রকাশ্যে আদালতে বিচারের নিমিত্তে সোপর্দ করার লক্ষ্যে ঝালকাঠির সদর থানার অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করিলাম।’
আইনজীবী এম আলম খান কামাল জানান, মামলায় ছয় বছরের শিশু শাওনকে ২৮ বছর বয়স উল্লেখ করে আসামি করা হয়। অপর আসামি শামীমের প্রকৃত বয়স ১৪ বছরের একটু বেশি হলেও তাকে ২২ বছর বয়স উল্লেখ করা হয়। পুলিশ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সোমবার দুপুরে ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করে আসামিদ্বয় উপস্থিত হয়। এ সময় অভিযোগপত্র ও বাস্তব বয়সের বিষয়ে গরমিল দেখা দেয়। এতে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে ঝালকাঠির সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এইচ এম ইমরানুর রহমান। পরে আদালত মুলতবি করে দেন তিনি। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। সেই সাথে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও আবেদন করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো: শহিদুল ইসলাম এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: আশ্রাফুল ইসলাম রিভিশন আবেদন, মামলা ও প্রতিবেদনের বিবরণ এবং বয়স বিবেচনা করে ১ নম্বর আসামি শিশু শাওনকে অব্যাহতি দিয়ে ২ নম্বর আসামি শামীমের জামিন আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছেন বলেও জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল