১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

২০২১ সালে বিশ্বে বায়ু দূষণে ৮১ লাখ মৃত্যু : ইউনিসেফ

২০২১ সালে বিশ্বে বায়ু দূষণে ৮১ লাখ মৃত্যু : ইউনিসেফ - ছবি : প্রতীকী

ক্রমবর্ধমান হারে মানব স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে বায়ু দূষণ। বর্তমানে বিশ্বে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকির দ্বিতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এটি। জাতিসঙ্ঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) অংশীদারিত্বে প্রকাশিত স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার (এসওজিএ) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (১৯ জুন) হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের (এইচইআই) প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের পঞ্চম সংস্করণে দেখা যায়, বায়ু দূষণের কারণে ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ৮.১ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সমাজ বাদ দিয়ে লাখ লাখ মানুষ বায়ু দূষণে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী রোগের সাথে লড়াই করছে।

প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে, বায়ু দূষণের কারণে বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ২০২১ সালে এই বয়সসীমার ৭ লাখেরও বেশি শিশু মারা গেছে।

এসওজিএ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পরিবহন, আবাসিক বাড়ি, দাবানলসহ আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানি ও বায়োমাস পোড়ানোর কারণে তৈরি হওয়া সূক্ষ্ম বস্তুকণার (পিএম ২.৫) দূষণ বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের ৯০ শতাংশেরও বেশি মৃত্যুর কারণ। এটি বিশ্বজুড়ে খারাপ স্বাস্থ্যের কারণ হিসেবে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ভবিষ্যতেও এর কারণে আরো খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।

অন্যান্য দূষণকারী যেমন গৃহস্থালী বায়ু দূষণ, ওজোন ও গাড়ির ধোঁয়া থেকে সৃষ্টি নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড গ্যাস বিশ্বব্যাপী মানব স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ।

এই প্রতিবেদনের তথ্য অবস্থার পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন এইচইআই সভাপতি ডা. এলেনা ক্র্যাফট।

তিনি বলেন, ‘বায়ু দূষণ স্বাস্থ্যের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। আমরা জানি যে বায়ুর গুণমান এবং বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের উন্নতি করা ব্যবহারিক ও অর্জনযোগ্য।’

মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলার পাশাপাশি, পিএম ২.৫-এর মতো দূষণকারী পদার্থগুলো গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর সঙ্গে মিলে গ্রহকে উষ্ণতর করে তুলছে। পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের উচ্চ স্তরগুলো বিশেষ করে ওজোন স্তরের পরিবর্তন স্বাস্থ্যের ওপর আরও বেশি প্রভাব পড়তে পারে।

শিশুরা আছে‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ' অবস্থায়

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বায়ু দূষণের প্রভাবে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থায় আছে শিশুরা এবং এর প্রভাব গর্ভাবস্থা থেকেই শুরু হয়।

এতে বলা হয়েছে, অল্পবয়স্ক শিশুরা বায়ু দূষণের সংস্পর্শে আসার ফলে নিউমোনিয়া ও হাঁপানি হয়ে বিশ্বব্যাপী পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। তবে বায়ু দূষণের প্রভাব ও মৃত্যুর হার উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় বৈষম্যপূর্ণ নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে বেশি হয়ে থাকে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণ ভারতীয় শহরগুলোতে একটি গুরুতর সমস্যা।

ইউনিসেফের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কিটি ভ্যান ডার হেইজডেন বলেন, বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতিদিন ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ২ হাজার শিশু মারা যায়।

পরিস্থিতির উন্নয়নচেষ্টার অগ্রগতি হচ্ছে

মানব স্বাস্থ্যের ওপর বায়ু দূষণের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি এসওজিএ প্রতিবেদনে দাবি করেছে, গৃহস্থালি বায়ু দূষণের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা এখন বেড়েছে এবং রান্নার কাজে ক্লিন এনার্জির ব্যবহার বাড়ায় ২০০০ সাল থেকে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ৫৩ শতাংশ কমেছে।

এছাড়াও, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার মতো বায়ু দূষণের সর্বোচ্চ ক্ষতিকর প্রভাবের অভিজ্ঞতা অর্জনকারী অঞ্চলগুলো এই সমস্যা সমাধানে বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক স্থাপন, কঠোর বায়ু মানের নীতি বাস্তবায়নসহ আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement