১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

স্ট্রাইকার স্বপ্না এখন পুরোপুরি পর্দানশীল

স্ট্রাইকার স্বপ্না এখন পুরোপুরি পর্দানশীল - ছবি : নয়া দিগন্ত

২০২৩ সালের মে মাসে হঠাৎই জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা সিরাত জাহান স্বপ্নার। ২০২২ সালে মহিলা সাফে বাংলাদেশের প্রথম যে শিরোপা জয় তাতে অন্যতম ভূমিকা ছিল রংপুরের এই স্ট্রাইকারের। গ্রুপ পর্বে তার দুই গোলেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভারতকে পরাজয়ের তেতো স্বাদ দেয়। ৩-০ তে হারায় প্রতিবেশী দেশটিকে। সেমিতে তার একটি গোল ছিল ভুটানের বিপক্ষে। সেমিফাইনালে ইনজুরির জন্য তিনি অল্প কিছুক্ষণ পরেই মাঠ ছাড়েন। ফাইনালেও নেপালের বিপক্ষে ৯ মিনিট পর মাঠ ত্যাগ। নেপথ্য ইনজুরি।

তার অবসরের পর এখন পর্যন্ত সে স্থান পূরণ হয়নি। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের পাশাপাশি কৃষ্ণা রানী আছেন। বাংলাদেশী বাবা ও জাপানী মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া সুমাইয়া মাতসুসীমাও খেলছেন। তহুরা খাতুন, আকলিমা খাতুনরা আছেন। কিন্তু স্বপ্নার বিকল্প কেউ এখনো হতে পারেননি।

অবসরে গিয়েই ঘর বেধেঁছেন সৌদি প্রবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেলে সুবেহ সাদেক মুন্নার সাথে। বুট জোড়া তুলে রেখে স্বপ্ন এখন পুরোপুরি পর্দানশীন এক নারী। বাইরে যখন বের হন তার দুই চোখ আর হাতের কবজি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। এতোটাই পর্দা করেন একসময়ের এই মাঠ কাপানো ক্ষিপ্রগতির স্ট্রাইকার। তবে ফুটবলে আর ফেরার কোনো ইচ্ছে নেই ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব ১৮ মহিলা সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের এই সদস্যের।

সেবার টসে হেরে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার খোয়ানো স্বপ্ন জানান, ফুটবলের সাথে আমি আর কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকতে চাচ্ছি না। কোচিংয়েও আসবো না, এমনকি ফুটবল সংগঠক হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। এখন আমি যে জীবন যাপন করছি এতেই যথেষ্ট খুশি।’

যোগ করেন, ‘আমার পরিকল্পনাই ছিল খেলা ছেড়ে পুরোপুরি পর্দানশীল হওয়ার। সেটি হতে পেরে আমি খুব গর্বিত।’

স্বপ্নার স্বামী এখন সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। আর স্বপ্না এবার ঈদের সময় ছিলেন শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

তিনি জানালেন, ‘আমি আমার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাইনি।’ ২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল দিয়ে তার আগমন। এর পর ২০১৫ সালে নেপালে বাংলাদেশ প্রথম যে এফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল ফুটবলের শিরোপা জয় করে সেই দলের সদস্য ছিলেন তিনি। তার ফুটবলে আশা বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ আন্তঃপ্রাথমিক ফুটবলের মাধ্যমে। এরপর প্ল্যানের অধীনে যে দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প হয়েছিল সেই ক্যাম্পে ডাক পান গতিময় এই ফরোয়ার্ড।

ধর্মপ্রাণ মেয়ে স্বপ্না জানান, আমি যখন খেলোয়াড় জীবনে ছিলাম তখনো খেলার বাইরে আমি পর্দা করে চলতাম। আর এখন নিকাব পরা ছাড়া আমি রাস্তায় বের হই না। ইসলাম ধর্মকে অনুসরণ করতে পেরে আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় অনুভূতি এবং ধর্মের আচার আচরণ মেনেই আমি এখন জীবন যাপন করছি।’

আরো জানান, ‘আমি এখন খেলোয়াড় জীবনের কোনো ছবিও পোস্ট দেয়াটা পছন্দ করি না। কারণ আমি এখন বোরকা পরেই চলাচল করি। সেই বোরকা পরা ছবিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে থাকি।’

ফুটবল থেকে দূরে থাকলেও বাংলাদেশ দলের ম্যাচের দিন বা টুর্নামেন্টের আগে তিনি ঠিকই দলকে শুভকামনা জানান। সেভাবে ফেসবুকে পোস্ট দেন। আসলে যার রক্তে ছিল ফুটবল তিনি ফুটবল ছাড়লেও এ খেলাটা কিন্তু ভুলতে পারবেন না।

স্বপ্নাকে বিশেষভাবে মনে রাখে ভারতীয় মহিলা দল। বিশেষ করে ভারতীয় গোলরক্ষক অনিতা চৌহান। ২০১৯ সালের সাফ ফুটবলে সেমিফাইনালে নেপালে ভিরাতনগরের মাঠে এই অনিতার সাথে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল সপ্নার। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ চার গোলে হেরেছিল। সেদিন স্বপ্ন বদলা নিতে না পারলেও ২০২২ সালের ম্যাচে নেপালের কাঠমান্ডুতে চৌহানকে দুবার পরাস্ত করে চরম প্রতিশোধ নিয়েছিলেন সপ্না। এই সূত্র ধরে পরবর্তীতে ভারতীয় ক্লাব উড়িষ্যা এফসি মহিলা লিগে স্বপ্নাকে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাফুফে তখন মহিলা ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আয়োজন করতে গিয়ে ফুটবলারদের অন্য দেশের লিগে খেলার অনুমতি দেয়নি। যা তখন আটকে দেয় স্বপ্নাসহ বাংলাদেশে আরো বেশ কয়েকজন মহিলা ফুটবলারের ভারতীয় লিগে খেলা। সেই ফ্রাঞ্চাইজি লিগআজো আলোর মুখ দেখেনি।

ভারতীয় সিনিয়র দলের বিপক্ষে স্বপ্না মোট পাঁচটি ম্যাচ খেলেছিলেন। এরমধ্যে সাফে মুখোমুখি হয়েছিলেন চারবার। অন্যবার মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক বাছাই পর্বের ম্যাচে। এই পাঁচ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে স্বপ্নার গোল তিনটি। তার প্রথম গোল ছিল ২০১৬ সালের সাফ ফাইনালে শিলিগুড়ির মাঠে। তার গোলে তখন স্কোর লাইন ১-১ হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত ১-৩ এ হাঁটতে হয়েছিল গোলাম রাব্বানী ছোটনের দলকে। নেপালের মাঠে ভারতের বিপক্ষে জোড়া গোলের পর স্বপ্ন বলেছিলেন তার পরিকল্পনাই ছিল ভারতে গোলরক্ষকের বিপক্ষে প্রতিশোধ নেয়ার। এতে সফল হয়ে দারুণ উৎফুল্ল তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement