১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
কুমিল্লা চট্টগ্রাম সিলেটে লাঠিচার্জ, বাধা উপেক্ষা করে অবরোধ

ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা

আজ সারা দেশে গণবিক্ষোভ কর্মসূচি
শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : নয়া দিগন্ত -

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে সরব সারা দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। বুধবার কোটার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা দিলেও দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা গতকালও রাজধানীসহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যান। এ সময় মহাসড়ক, রেললাইনে অবরোধ করা হয়। রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিশাল জমায়েত করেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া কর্মসূচি পালনের সময় কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে আন্দোলনকারীদের বাধা ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ ফটকে তালা দিয়েও ছাত্রদের আটকে রাখতে পারেনি। বাধা ঠেলে কুবি শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জাবি শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন।
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও ঢাকার অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ দিনের মতো বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছে। এ সময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের ব্যারিকেড ডিঙিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধ করে রেখে কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। একই সময় ইডেন মহিলা কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত অবরোধ করে রাখে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শাহবাগ এসে শেষ হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের রাখা বেরিকেড ভেঙে দিয়ে শাহবাগে অবরোধ করে তারা। নীলক্ষেতে অবস্থানরত ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। পুলিশের বাধাকে উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালন করে তারা। অবরোধকালীন শাহবাগ ও নীলক্ষেতের আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যদিও এম্বুলেন্সের জন্য জায়গা করে দেয় শিক্ষার্থীরা।
অবরোধকালীন কোটা না মেধা, মেধা মেধা, কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক, আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই, আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, হাইকোর্ট না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ, আমার ভাইয়ের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই, ব্লকেড ব্লকেড, সারা বাংলা ব্লকেড প্রভৃতি স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। স্লেøাগানে মুখরিত হয় শাহবাগের আশপাশ। কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, কোর্ট দেখিয়ে সরকার আমাদের এতদিন বিভ্রান্ত করেছে। তারা বলেছে এটা আদালতের বিষয়, বিচারাধীন রয়েছে, সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এখন হাইকোর্ট তাদের রায় প্রকাশ করেছে। সরকারপক্ষের মিথ্যাচার ধরা পড়ে গেছে। প্রথম থেকেই বলেছি সরকার চাইলে আমাদের দাবি পূরণ করতে পারে। তারা মিডিয়ার সামনে আমাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে, আদালত দেখিয়েছে। আমরা দৃঢচিত্তে বলতে চাই, অনগ্রসরদের জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা রেখে নির্বাহী বিভাগের পরিপত্র জারি করতে হবে। শুধু পরিপত্র নয়, সংসদে আইন পাস করার মাধ্যমে দাবির বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুবা তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন যেতে বাধ্য হব।
আজ সারা দেশে গণবিক্ষোভ
আজ শুক্রবার সারা দেশে ক্যাম্পাসগুলোতে গণবিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের পরিপত্রে ত্রুটি ছিল। সে জন্যই আদালত হস্তক্ষেপ করতে পেরেছে। আমরা চাই নতুন পরিপত্র জারি ও জরুরি অধিবেশন ডেকে সংসদে আইন পাস করার মাধ্যমে কোটা সংস্কার সমস্যার পূর্ণ সমাধান করতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীরা আর রাস্তায় দাঁড়াতে চাই না। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সরকারসহ কিছু বুদ্ধিজীবী যারা আমাদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলেছে, আদালতের ঘাড়ের উপরে দায়ী বর্তানোর চেষ্টা করেছে। আদালত তাদের রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে সরকার আমাদের দাবি না মেনে টালবাহানা করেছে। আমি স্পষ্ট বলে দিতে চাই আমাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে না মেনে নিবে অবরোধ কর্মসূচিতে সারা বাংলাদেশ অচল করে দিতে বাধ্য হবো। অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা সংস্কার করে দ্রুত পরিপত্র জারি, অবিলম্বে অধিবেশন ডেকে সংসদে আইন পাস ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে সারা দেশে গণবিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
কুমিল্লায় পুলিশ ও শিক্ষার্থী সংঘর্ষ : টিয়ার শেল ফাঁকা গুলি
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলির ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন আনসার ক্যাম্প এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। সূত্র জানায়, কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আসার সময় আনসার ক্যাম্প এলাকায় পুলিশ বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি সংবাদকর্মীসহ তাদের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি অংশে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ডাকা ছাত্রদের কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশের এই সতর্কতা বলে জানা গেছে। জানা গেছে, মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি অংশের চার দিকেই অবস্থান নিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে কাউকেই সড়কে দেখা যায়নি। যারাই সড়কে যেতে রওনা হন তাদেরকে আটকে দেয় পুলিশ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, পুলিশের অবস্থানের খবর আমরা জেনেছি। কেন্দ্র থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। কেন্দ্র যা সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তাই মানব।
বেরোবিতে কর্মসূচি পণ্ড
রংপুর অফিস জানায়, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের ত্রিমুখী বাধা ও হামলায় কোটাবিরোধী ছাত্ররা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি করতে পারেনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালেয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে মডার্ন মোড়ে সড়ক অবরোধের জন্য ক্যাম্পাস থেকে বের হতে থাকলে ২ নং গেটের সামনে তাদের প্রথমে বাধা দেয় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম। এ সময় প্রক্টরিয়াল টিমের সাথে শিক্ষার্থীদের বচসা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে সেখানে ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীমের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তারা ব্যানার কেড়ে নেয় এবং ধাওয়া দেয়। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা তৈরি হলে প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। আধাঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চট্টগ্রামে পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনকালে পুলিশি লাঠিচার্জের শিকার হয়েছে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে বাধা ও লাঠিচার্জ উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থীরা গতকাল নগরীর রাজপথ অবরোধ করে। এতে নগরবাসীকে অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। গতকাল বেলা আড়াইটা ও সাড়ে ৩টার শাটল ট্রেনে চট্টগ্রাম বটতলী স্টেশনে পৌঁছে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ টাইগারপাস এলাকায় এলে পুলিশ বাধা দেয় এবং বাগি¦তণ্ডার একপর্যায়ে লাঠিচার্জ শুরু করে। লাঠিচার্জ উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অগ্রসর হয়ে নগরীর ২ নং গেইট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে একচুলও নড়বে না বলে হুঁশিয়ারি দেয়। সরেজমিন দেখা যায়, বেলা পৌনে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ চট্টগ্রাম বটতলী রেলস্টেশনের ৫ নম্বর লাইনটি অবরোধ করেন। এ লাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর গোধূলি দাঁড়ানো ছিল। পরে শিক্ষার্থীরা পুরনো রেলস্টেশনের সামনে অবস্থান নিতে গেলে সেখানে ব্যাপক পুলিশি অবস্থানের কারণে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পুরনো রেলস্টেশন থেকে টাইগারপাস এলাকায় আসেন। টাইগারপাস এলাকায়ও আগে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয় একপর্যায়ে তাদের অনেকটা অবরুদ্ধ করে ফেলে। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ২ নম্বর গেইটের দিকে রওনা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ২ নম্বর গেইটে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা আন্দোলন থেকে একচুলও নড়ব না। আমরা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মরে যেতেও প্রস্তুত।
লাঠিচার্জের পরও অনড় শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
সিলেট ব্যুরো জানায়, পুলিশের লাঠিচার্জ উপেক্ষা করে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে মিছিল বের করে মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ করতেও দেখা যায়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনিও সড়ক অবরোধ থেকে বিরত থাকতে শিক্ষার্থীদের নিষেধ করেন।
তালা ভেঙে শাহবাগে জবি শিক্ষার্থীরা
জবি সংবাদদাতা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে গতকাল আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে পৌঁছে সেখানে অবস্থান করতে না পারায় শাহবাগে অবস্থান নেন। কর্মসূচি শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করতে অনুরোধ করেন। শিক্ষার্থীদের আটকাতে প্রধান ফটকে তালা দেয়া হলে শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৪টায় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের অভিমুখে যাত্রা করে। শিক্ষার্থীদের থামাতে শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গুলিস্তানে পুলিশ বাধা দেয়। সেই বাধা ভেঙে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে হাজির হন। এর আগে বিগত দিনগুলোতে যারা সমন্বয় করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে তারা নিজেরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় আন্দোলনে আসা শিক্ষার্থীরা। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে নিজেরাই মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এ দিকে মিছিল বিকেল ৫টায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে এলে পুলিশের বাধায় অবস্থান নিতে না পেরে পুলিশকে দেখে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকে জবি শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ৫টায় শাহবাগে পৌঁছে আন্দোলনে সরব হন তারা।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রধান ফটক ভেঙে ও শতাধিক পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় এ ঘটনা ঘটে। তাদের কর্মসূচি শেষ হয় সন্ধ্যায়। গতকাল মহাসড়কে অবস্থান নেয়ার জন্য মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বের হন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদসংলগ্ন সড়ক হয়ে প্রধান ফটকের (ডেইরি গেইট) সামনে গেলে বাধার মুখে পড়ে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ না করতে অনুরোধ করলে তা নাকচ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক ভেঙে মহাসড়কে অবস্থান নেয়। জাবি শিক্ষার্থী, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সদস্য সচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ নয়া দিগন্তকে জানান, বুধবার যে রায় হয়েছে তার সাথে আমাদের আন্দোলন সম্পর্ককৃত নয়। পুলিশ আমাদের বাধা দিলেও তা অতিক্রম করে প্রধান ফটক ভেঙে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি আমরা।
ইবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
ইবি সংবাদদাতা জানান, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে প্রধান ফটকের সামনে এ অবরোধ করেন তারা। এর আগে বেলা সাড়ে ৩টায় ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিল ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের এসে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। পরে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার ঘুরে প্রধান ফটকে মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। আধা ঘণ্টা পরে অবরোধ ছেড়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালের পাদদেশে অবস্থান নেন তারা। এ সময় বিভিন্ন প্রতিবাদী গান, নাটিকা, ও কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষার্থীরা। এ দিকে বিকেল সাড়ে ৫টার পর বিভিন্ন স্থানে হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে আবারো বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনকারীরা।
বাধা উপেক্ষা ববি শিক্ষার্থীদের
বরিশাল ব্যুরো জানায়, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ না করার নির্দেশনা দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। কিন্তু প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র হল থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে আন্দোলনস্থলে যোগ দেয় এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকে। তাদের হাতে কোটাবিরোধী নানা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার দেখা যায়।
‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে রাবি শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর
রাবি প্রতিনিধি জানান, কোটা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় শিবির তকমা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে টানা দুই ঘণ্টারও বেশি বঙ্গবন্ধু হলে আটকে রেখে এলোপাতাড়ি মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজ রহমান বাবুসহ তার একাধিক অনুসারীর বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির ২৩০ নম্বর কক্ষে এমন ঘটনা ঘটে। এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের ভয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে গতকাল সকালে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেন। প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে ক্যাম্পাসে ফিরবে না বলে জানান ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন তিনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন মো: মোস্তফা মিয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী। তার বাসা গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। অভিযুক্তরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফরহাদ হোসেন খান ও নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজাসহ অজ্ঞাত আরো অনেকেই। তারা সবাই সভাপতি বাবুর অনুসারী বলে জানা গেছে। অভিযোগের বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। কিছুক্ষণ আগেই শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তারপর বলতে পারব।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।
বশেমুরবিপ্রবিতে কর্মসূচি
বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জ শহর-ঘোনাপাড়া বাইপাস সড়ক অবরোধ করে সপ্তম দিনের আন্দোলনে নামেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টা থেকে গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ভারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কোটাবিরোধী আন্দোলনে শামিল হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায়। সড়ক অবরোধকালে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার পরিবহন নির্বিঘ্নে চলাচল করে।


আরো সংবাদ



premium cement